আশির দশকে ক্রিকেটে রাজত্ব করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাঠের ক্রিকেটে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ প্রতিপক্ষকে। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে র্যাঙ্কিংয়ে কখনও শীর্ষে আবার কখনও তলানির দিকে থেকেছে দলটি।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দলটির ক্রিকেটাররা চুল কিংবা সাজসজ্জা বিষয়ক স্টাইলের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ক্রিকেটবিশ্বে। অন্যদিকে শুধু স্টাইলের দিকেই নজর নেই তাঁদের মাঠে ম্যাচ জয়ের পর উদযাপন ও ভয়ডরহীন ক্রিকেটও দেখা যায় সকল ক্রিকেটারদের কাছ থেকে।
চলুন দেখে নেয়া যাক ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্ত বোলিং ইউনিটের বিপক্ষে টিম ইন্ডিয়ার সেরা পাঁচজন ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্স।
১। বীরেন্দ্র সেহবাগ
সর্বকালের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান সেহবাগ প্রতিপক্ষের বোলারদের তুলোধুনো করতেই যেন মাঠে নামতেন সবসময়। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যখন ভারত সফরে আসে ঐ সফরের পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে মাঠে নামে দুই দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত দলের ব্যাটসম্যান সেহবাগ এদিন আক্রমণের ধার দেন আরো বাড়িয়ে। ফলস্বরূপ সেহবাগের ব্যাট থেকে ১৪৯ বলের বিনিময়ে ২১৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
২৫টি চার এবং ৭টি ছক্কার সাহায্যে ১৪২ রান আসে শুধু বাউন্ডারি থেকেই। অন্যদিকে তাঁর ব্যাটে চড়ে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪১৮ যা ম্যাচ জয় সহজ করে দেয় টিম ইন্ডিয়ার জন্য।
২। যুবরাজ সিং
যুবরাজ সিংয়ের কথা কোনো ক্রিকেতভক্তের কানের কাছে উচ্চারিত হলে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্ট্রুয়াট ব্রডের ছয় বলে ছয়টি ছক্কা মারার কথা।
২০১১ সালে বিশ্বকাপের ম্যাচে ক্যারিবিয়ানদের মুখোমুখি হয় টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচের আগে যুবরাজ রক্তবমি করলেও সুস্থ হয়ে মাঠে নেমে পড়েন ব্যাট হাতে। ভারতীয় দলের টপ অর্ডার যখন ব্যর্থ হয়ে মাঠ ছাড়ে তখন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ১২৩ বল মোকাবেলা করে ১০টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ১১৩ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংস খেলেন। যুবরাজের ব্যাটের উপর নির্ভর করে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ২৬৮ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় টিম ইন্ডিয়া। এই ম্যাচ অবশ্য ভারত জিতে নেয় ৮০ রানে।
৩। সুনীল গাভাস্কার
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় প্রথম দিকে থাকা সুনীল গাভাস্কার তাঁর যুগে পেস বোলারদের উপর এতটাই চড়াও হতেন যে, পেস বল মোকাবেলা করার সময় হেলম্যাট পরতেন খুব কম সময়ই।
১৯৮৩ সালে চেন্নাই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সাদা পোশাকে মাঠে নামে ভারত। ঐ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ৩১৩ রান জড়ো করে ক্যারিবিয়ানরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলে মাত্র ৯২ রান তুলতেই ৫ ব্যাটসম্যানের বিদায় ঘটলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। তবে রবী শাস্ত্রীকে সাথে নিয়া গাভাস্কার ১৭০ রানের জুটি গড়লে ম্যাচের মোড় পাল্টে যায়। সুনীল গাভাস্কার এই টেস্টে ২৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ নিষ্পত্তি হয় ড্র’র মাধ্যমে।
৪। দিলিপ ভেংসরকার
ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে মিডল অর্ডারে ব্যাট দাপিয়ে বেড়ানো দিলিপ দীর্ঘদিন ছিলেন দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ১৭টি সেঞ্চুরির সাহায্যে সর্বমোট রান সংগ্রহ ৭০০০। ১৯৮৩ সালে ক্যারিবিয়ানরা ভারতের মাটিতে সিরিজ খেলতে আসলে ছয় ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। প্রথম দিকেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতকে টেনে তোলেন দুই ব্যাটসম্যান দিলিপ এবং গাভাস্কার। দিলিপ তাঁর ইনিংস থামান ১৫৯ রানে নিয়ে। অন্যদিকে গাভাস্কার এবং দিলিপের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৪৬৪ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও অর্ধশতক হাঁকিয়ে ভারতকে ম্যাভ বাঁচাতে সাহায্য করেন দিলিপ।
৫। মহেন্দ্র সিং ধোনি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করার পর থেকেই দলের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠা ধোনি কাপ্তান হিসেবেও ছিলেন বেশ সফল। তাঁর হাত ধরেই আইসিসির বড় তিটি ইভেন্টের শিরোপা ঘরে তোলে টিম ইন্ডিয়া। অন্যদিকে ম্যাচের অবস্থা বুঝে মাঠা ঠাণ্ডা রেখে ব্যাট চালাতে দক্ষ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের জাত চেনান আরও একবার।
ক্যারিবিয়ানদের ঘরের মাঠে ঐ ম্যাচে ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১০ রানেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারালে উইকেটে আসেন ধোনি। ক্যারিবিয়ানদের ঘরের মাঠে শক্তিশালী পেস আক্রমণ সামাল দিতে ব্যস্ত থাকা টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সকলেই যখন আসা যাওয়ার মিছিলে সামিল তখন মাত্র ৮৮ রানে আট উইকেটের পতন ঘটলে দলীয় সংগ্রহ শত রানে নিয়ে যাওয়াতে শঙ্কা দেখা দেয়। তবে ধোনির দায়িত্বশীল ৯৫ রানে চড়ে এদিন সম্মানজনক ১৮৮ রানের পুঁজি পায় ভারত। যদিও ভারত ম্যাচ হেরেছিল বিশাল ব্যবধানে তবুও ঠাণ্ডা মাথার কাপ্তান ধোনির ব্যাটিং ছিল প্রশংসার দাবিদার।