চলতি বছরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার বিমানে চড়ে বসবে ভারতীয় দল। আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ভারত দলের অবস্থান প্রথমে থাকলেও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই অজিরা। অন্যদিকে বল টেম্পারিং কাণ্ডে ফেঁসে যাওয়া দুই ক্রিকেটারকে হারিয়ে আরো বেকায়দায় পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
তবে আগামী অস্ট্রেলিয়া সিরিজে হয়তো আরো একটি টেস্ট সিরিজ জয়ের সুবাতাস পাচ্ছে ভারত। কেননা বর্তমান সময়ে দুই দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফ যে কিছুটা এগিয়ে রাখছে ভারতকেই।
এবার দেখে নেয়া যাক টিম ইন্ডিয়ার সেই চারটি সিরিজ জয়ের দ্বারপ্রান্তে যাওয়ার ইতিহাস।
৪। ১৯৭৭-৭৮ অস্ট্রেলিয়া জয়ী ৩-২ ব্যবধানে
তৎকালীন সময়ে অজি দলে ছিলেন অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে অবস্থান করা কেরি পেকার, জেফ থমপসন, বব সিম্পসনের মত ক্রিকেটাররা। এর বিপরীতে টিম ইন্দিয়ার দলে ছিলেন বিশেন বেদি, ভগোয়াত চন্দ্রশেখরের মত স্পিন বোলারের পাশপাশি ব্যাটিংয়ে সুনীল গাভাস্কাররা।
তবে অজিদের ঘরের মাঠে তাঁদের বিপক্ষে ম্যাচ জেতা যে কতটা দুর্জ্ঞেয় তা প্রমাণ হয়েছে বার বার। ঘরের মাঠে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতেও কম জানেননা টিম ইন্ডিয়ার ক্রিকেটাররা যার প্রমাণ দেখা যায় পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজ ৫-০ ব্যবধানে জয় লাভের মাধ্যমে।
অজিদের বিপক্ষে ঐ সিরিজের প্রথম ম্যাচে টিম ইন্ডিয়া হারে ১৬ রানের ব্যবধানে। অন্যদিকে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসেও জয়ের খুব কাছে গিয়েছিল ভারত। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আল মানের সেঞ্চুরিতে ভর করে জয় পায় দুই উইকেটে। পরবর্তিতে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এসে অবশ্য বেশ বড় জয়ের দেখা পায় ভারত। চন্দ্রশেখর এবং বেদির বোলিং তোপে পড়ে অজিরা এই ম্যাচ হারে ২২২ রানের বিশাল ব্যবধানে।
৩। ১৯৮০-৮১ সালে ১-১’এ সিরিজ ড্র
অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে অজিদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে অজিদের কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত। প্রথম ইনিংসে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত দল সংগ্রহ করে মাত্র ২০১ রান। বিপরীতে অজিরা তাঁদের প্রথম ইনিংসে চ্যাপেলের ডাবল সেঞ্চুরির উপর ভর করে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৪০৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটসম্যানরা আবারো ব্যর্থ হলে ভারতের ইনিংস থামে প্রথম ইনিংসের সমান রানে। ফলাফল ৪ রান ও ইনিংস ব্যবধানে টিম ইন্ডিয়া ম্যাচ হারে।
তবে দ্বিতীয় টেস্টে এসে সমান তালে ব্যাট চালিয়ে ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয় ভারত। তৃতীয় টেস্টে মাঠে নেমে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করা ভারত ২৩৭ রান সংগ্রহ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৩২৪ রান। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দুর্দান্তভাবে ব্যাট চালিয়ে ৪১৯ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ৮৩ রানে। আর ভারত ম্যাচ নিজেদের করে নেয় ৫৯ রানে। সিরিজটি হয় ড্র।
২। ১৯৮৫-৮৬ সালে সিরিজ ড্র 0-0’তে
স্বাগতিক অজিদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজ খেলতে যাওয়া ভারত কোনো ম্যাচ জয় না করতে পারলেও ড্র করেছে তিনটি ম্যাচই। এক্ষেত্রে অবশ্য আবহাওয়াকেই দায়ী করা যায়। তৎকালীন সময়ে হওয়া এই সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই পড়েছে বৃষ্টির বাধায়। এই সিরিজে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অর্জনের খাতা ভরাট করতে পারলেও কোনো ম্যাচই গড়ায়নি পূর্ণ সময় মাঠে।
সিরিজের প্রথম টেস্ট পরিত্যক্ত হওয়ার ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় টেস্টও একইভাবে বৃষ্টির বাধায় হয় পরিত্যক্ত। তাই এই তিন ম্যাচের মধ্যে যেকোনো একটি টেস্ট ম্যাচ জয় লাভ করতে পারলেই হয়তো সিরিজ নিজেদের করে নিতে পারতো টিম ইন্ডিয়া।
১। ২০০৩-২০০৪ সালে ১-১’এ ড্র
২০০৩ সালে অতিথির বেশে যাওয়া টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে অজিরা চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলা রাখে সূচিতে। প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩২৩ রানে সবকয়টি উইকেট হারায় এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৪ রান করে। অন্যদিকে টিম ইন্ডিয়া প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান করলে ম্যাচটি হয় ড্র।
দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে রিকি পন্টিংয়ের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে সংগ্রহ করে ৫৫৬ রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে সব কয়টি উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রানে থামে অজিদের ইনিংস। বিপরীতে টিম ইন্ডিয়া প্রথম ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড়ের ডাবল সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫২৩ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।
তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটের বড় জয় পেলেও আবারও চতুর্থ টেস্ট দেখে ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র। ফলে অজিদের বিপক্ষে এই সিরিজটিও ১-১’এ ড্র করে ভারত।