এশিয়ার কন্ডিশনের সাথে আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনের। ফলে শুধু উপমহাদেশই নয় ওখানে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এশিয়ার সব দেশেই নাকানিচুবানি খায়। অন্যদিকে ডিউক বলে বরাবরই ইংলিশ বোলাররা ছড়ি ঘুরিয়ে থাকেন মাঠে। আশ্চর্জজনকভাবে নিজেদের দক্ষতা ও ক্রিকেট জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন সুনিল গাভাস্কার, বিজয় মার্চেন্ট, রাহুল দ্রাবিড় ও শচীন তেন্ডুলকররা।
তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। ভারতীয় ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে সফল হতে পারেননি এমন ৫ জন ওপেনারের কথাই শোনা যাক।
১। বীরেন্দ্র সেহবাগ(২৭৮ রান ১০ ইনিংসে)
একসময়ের ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলে ব্যাটিংয়ের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন সহবাগ। টেস্টে তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্যই পরিচিত ছিলেন বেশি। তাঁর ক্রিকেট জ্ঞান যে দীর্ঘ এতে কোনো সন্দেহ নেই। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হয়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২টি ত্রিশতক। যার মধ্যে একটি আবার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম ত্রিশতক। তবে এত আগ্রাসী হওয়ার পরও তাঁকে ধুঁকতে হয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংলিশরা তাদের পেস দিয়েই কাবু করেছেন এই ব্যাটসম্যানকে।
২০০২ সালে ইংল্যান্ড সফরে ভারত দলের সঙ্গী হিসেবে যোগ দেন সহবাগ। সেই সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে প্রথম টেস্টে ৮৪ এবং নটিংহামে দ্বিতীয় টেস্টে ১০৬ রান করেন। এখানেই যেন শেষ হয়ে যায় এই ব্যটসম্যানের ব্যাট চালিয়ে ইংলিশ বোলারদের শাসন করা। পরবর্তীতে খেলা সাত ইনিংসে সাকুল্যে রান করেন মাত্র ৬১, সাত ইনিংসের পাঁচটিতেই আবার রানের কোটা নিয়ে যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। ২০১১ সালে এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বার্মিংহামে প্রথম বলেই আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার।
একনজরে ইংল্যান্ডে সহবাগের ব্যাটিং রেকর্ড-
টেস্ট-৬টি,
ইনিংস-১০টি,
রান-২৭৮,
ব্যাটিং গড় ২৭.৮,
শতক-১টি,
অর্ধশতক-১টি,
শূন্য রানে আউট-৩বার।
২। ওয়াসিম জাফর (২৪৪ রান, ১০ ইনিংসে)

ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা যে কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন তাদের নামের তালিকা করা হলে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন ওয়াসিম জাফর। তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন ব্যাট চালানোর কৌশল, দক্ষতা ও ঠান্ডা মেজাজের ক্রিকেটার হিসেবে। মুম্বাইর এই ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা উইন্ডিজের মত কঠিন কন্ডিশনের মধ্যেও সেঞ্চুরি হাঁকাতে সক্ষম হন। তবে ব্যাতিক্রম ছিলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
২০০২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পান তিনি। ঐ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৩ রান করেন ওপেনিং করতে নেমে। সিরিজের পরবর্তী টেস্টেই শূন্য রানে আউট হয়ে যান তিনি।
২০০৬ সালে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ভাল করার সুবাদে আবারো দলের সাথে ইংল্যান্ডের বিমানে চড়ে বসেন জাফর। ২০০৭ সালের ওই সফরে ৫ ইনিংসে ১৮৩ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে, যার মধ্যে ২টি অর্ধশতকের ইংস রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর সবশেষ ইনিংসে ১০ বলে শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান।
একনজরে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর ব্যাটিং রেকর্ড-
টেস্ট-৫টি,
ইনিংস-১০টি,
রান-২৪৪,
ব্যাটিং গড় ২৪.৪,
শতক-০,
অর্ধশতক-৩টি,
শূন্য রানে আউট -২ বার।
৩। পঙ্কজ রায় (২২৩ রান, ১৭ ইনিংসে)

পঙ্কজ রয়ের নাম মূলত সবার মুখে উচ্চারিত হয় ১৯৫৬ সালে চেন্নাইয়ে ভিনু মাঙ্কাদের সাথে ওপেনিং জুটি বেধে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪১৩ রান করলে। উইন্ডিজ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে বারবার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও তিনিও ব্যর্থ ছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
১৯৫২ সালে প্রথম তিনি ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ খেলতে যান। উক্ত সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক হওয়া ফ্রেড ট্রুম্যানের ভেল্কিতে পড়ে ধস নামে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে। প্রথম শূন্য রানে আউট হন রয়। পরবর্তী তিন ম্যাচে চার ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হন তিনি। এই সিরিজে সাত ইনিংসে ৫৪ করেন এই ওপেনার যার মধ্যে ৫টিই ছিল শূন্য রানের ইনিংস। ১৯৫৯ সালে আবারো ইংল্যান্ড সফরে রয় দলের সঙ্গী হলে প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ৫৪ ও ৪৯ রান করেন তিনি। আর পরবর্তী ৮ ইনিংসে করেন মাত্র ৭৬ রান।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঙ্কজ রয়ের ব্যাটিং-
টেস্ট-৯টি,
ইনিংস-১৭টি,
রান-২৩৩,
ব্যাটিং গড়- ১৩.৭,
সেঞ্চুরি-০,
অর্ধশতক-১টি,
শূন্য রানে আউট-৭বার
৪। গৌতম গম্ভীর (৯২ রান, ৭ ইনিংসে)

বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গৌতম গম্ভীর একজন। ইংল্যান্ডের মাটিতে মাত্র ৫টি টেস্ট খেলতে প্রেছেন এই বামহাতি ব্যাটসম্যান। ২০১১ সালে লর্ডস টেস্ট দিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর টেস্ট খেলা শুরু। প্রথম ইনিংসে ওপেনার হিসেবে নে ১৫ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যাট করে চার নম্বর পজিশনে নেমে। এই সিরিজের বার্মিংহাম টেস্টে ওপেনার হিসেবে ৫২ রান করেন তিনি।
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর সবশেষ টেস্ট সিরিজে চার ইনিংসে মোট ২৫ রান করেন তিনি।
একনজরে ইংল্যান্ডের মাটিতে গম্ভীরের ব্যাটিং-
টেস্ট-৪টি,
ইনিংস-৭টি,
ব্যাটিং গড়-১৩.১৪,
শতক-০,
অর্ধশতক-০,
শূন্য রানে আউট-১বার।
৫। মুরলী বিজয় (৪২৮ রান, ১৪ ইনিংসে)

তামিল নাড়ুর এই ওপেনার ২০১৪ সালে দেশের বাইরে মোটামুটিভাবে ভাল পারফর্ম করার পর ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে খেলার জন্য বিজয়কে দলে নেয়া হয়। তবে ইংলিশ কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে প্রথম দুই টেস্টেই ব্যর্থ ছিলেন তিনি। ফলস্বরূপ দল থেকে বাদ পরতে হয়েছে তাঁকে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ২০১৪ সালে প্রথম টেস্টে ১৪৬ রান করেন তিনি। উক্ত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইংসে ৫২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। তারপর যেন তাঁর ব্যাট মলিন হতে লাগলো। পরবর্তী ৫ ইনিংসে করেন মাত্র ৮৫ রান। ২০১৮ সালের চলতি সিরিজে ডাক পেয়ে দুই টেস্টের ৪ ইনিংসে করেছেন সাকুল্যে ২৬ রান।
একনজরে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুরলী বিজয়ের ব্যাটিং-
টেস্ট-৭টি,
ইনিংস-১৪টি,
রান-৪২৮,
ব্যাটিং গড়-৩০.৫৭,
শতক-১টি,
অর্ধশতক-২টি,
শূন্য রানে আউট -৩বার।