ক্রিকেট খেলা মাঝেমাঝে নিষ্ঠুর হয়ে দাঁড়ায়, অনেক তারকা ক্রিকেটার আছেন যারা তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বল ও ব্যাট হাতে একের পর এক রেকর্ড করে গেলেও, অনেক কিছু অর্জন করলেও ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসরে তারা যেন খুব অসহায়। এই কাতারে রয়েছেন অনেক তারকা ক্রিকেটার তাদের মধ্যে হলে, ডি-ভিলিয়ার্স, রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা ও সৌরভ গাঙ্গুলীর মত ক্রিকেটার। তারা তাদের পুরো ক্রিকেট ক্যারিয়ারে একের পর এক রেকর্ড করলেও বা অন্য যেকোনো ধরনের টুর্নামেন্ট জিতলেও কখনো বিশ্বকাপের মত ট্রপি তাদের হাতে ছোঁয়া পায়নি।
বিপরীতে অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা শুধু বিশ্বকাপেই নয় সাথে আরো অনেক বড় বড় টুর্নামেন্টও জিতেছেন।
আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই পাঁচজন ক্রিকেটার কে যারা আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ওয়ার্ল্ড টি-২০ ও আইপিএলের মত মর্যাদাপূর্ণ ট্রপি জিততে পেরেছেন।
১) গৌতম গম্ভীরঃ
এই ক্রিকেটার শুধু এই তিনটি টুর্নামেন্ট জিতেছেন তা নয় সাথে একটি বিরল রেকর্ডের মালিক তিনি। গৌতম গম্ভীর ভারতের হয়ে ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছেনে। এই দুই টুর্নামেন্টে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই দুই আসরের ফাইনালেই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন গৌতম গম্ভীর। ২০০৭ সালে টি-২০ ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন এবং চার বছর পরে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন এই তারকা ক্রিকেটার।
একই বছর কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান তিনি, এই আসরে কলকাতার হয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি এবং তার দলকে জিতিয়েছেন প্রথম বারের মত আইপিএলের ট্রফি। তারপর কলকাতার হয়ে আবার ২০১৪ সালে আইপিএল জিতেছেন গৌতম গম্ভীর। তিনি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ২টা আইপিএল ট্রফি ও ওয়ানডে, টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছেন।
২) ইউসুফ পাঠানঃ
পাঠান ভাইদ্বয়ের মধ্যে তিনিই বড়, তার আরেক ভাই ইরফান পাঠানও ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটার। ইউসুফ পাঠানও ২০০৭ সালের টি-২০ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের জয়ী দলের সদস্য। ডানহাতি এই হার্ড-হিটার ব্যাটসম্যান অভিষেক আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেললেও বর্তমানে তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটার। এবং কলকাতার হয়ে আইপিএলের টুর্নামেন্ট জিতেছেন এই চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যান।
৩) হারভাজন সিংঃ
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, এই ক্রিকেটার ভারতের ক্রিকেট টিমকে তিন ফরম্যাটেই তার সেরা বোলিং দিয়ে একের পর এক ম্যাচ জিতিয়েছেন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি প্রথম টেস্ট হ্যাট্রিককারী বোলার। এই হারভাজন সিং ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ ও ২০১১ এর ওয়ানডে বিশ্বকাপের বিজয়ী দলের সদস্য। এই দুই আসরেই তিনি সেরা পারফরমেন্স করে ভারতকে বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য করেছেন। ডানহাতি এই অফস্পিনার ভারতের সফল টেস্ট বোলারও, এই লিজেন্ডারি ক্রিকেটার আইপিএলের ট্রপিও জিতেছেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে।
৪) যুবরাজ সিংঃ
টি-২০ বিশ্বকাপে তার মত আর কেউ অবাক করতে পারেনি ক্রিকেট বিশ্বকে। ভারতের হয়ে ২০০৭ সালের টি-২০ টুর্নামেন্টেই তার সেরা পারফরমেন্স দেখিয়েছেন, এই আসরে তিনি ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট বর্ড কে ৬ বলে ৬ টি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েছিলেন। তাছাড়া সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছেন ৩০ বলে ৭০ রান। তার এই ইনিংসেই ভর করে ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। এর চার বছর পরে তিনি ভারতের হয়ে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতেছেন।
তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শুধু বড় বড় টিমের সাথে জিতেছেন তা কেবল নয়, তিনি জিততে পেরেছেন আরেক জীবনের সাথে, মাঝখানে তিনি ক্যান্সারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, ক্যান্সারের সাথে লড়েছেন অনেক দিন যাবত, সেই ক্যান্সারকেও তিনি হার মানিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরে এসেছেন। আইপিএল ক্যারিয়ারে খুব বেশি না খেলতে পারলেও তিনি ২০১৬ সালে সানরাইজ হায়দারবাদের হয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
৫) মহেন্দ্র সিং ধোনীঃ
তিনি শুধু একজন সফল ক্রিকেটার তা নয়, তিনি হয়ত ক্রিকেটার ইতিহাসের সফল অধিনায়কও বটে। ধোনীর মত আর কোনো ক্রিকেটার ট্রফি জিততে পারেন নাই। তার ক্যারিয়ারে যত ট্রফি জিতেছেন প্রায় সব জায়গায় তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৭ সালে টি-২০ জয়ী দলের অধিনায়ক, ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে জয়ী দলের অধিনায়ক, অন্যদিকে ২০১৩ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল জিতেছেন সেখানেও তিনি ছিলেন অধিনায়ক।
সবশেষে বলা যায়, ধোনী ক্রিকেটার হিসেবে যতটা সফল তার চেয়ে বেশি সফল একজন অধিনায়ক হিসেবে। এবং তিনি ভারতএর ইতিহাসের একজন সেরা ব্যাটসম্যান।