ক্রিকেটে যদি ‘শিক্ষকতা’ শব্দটি ব্যবহার করতে হয় তাহলে যাদের নাম প্রথম সারির দিকে থাকবে তারা হলেন- গাভাস্কার, তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়ের নাম। কেননা ভারতীয় ক্রিকেটকে তারা শুধু অসাধারণ ক্রিকেট ম্যাচই উপহার দেননি তাঁরা মাঠে এবং মাঠের বাইরে সমানতালে শিখিয়েছেন অনেককিছুই। খেলোয়াড়সুলভ আচরণ, কঠোর পরিশ্রম কিংবা সততা সবকিছুতেই পরবর্তী প্রজন্ম পেয়েছে শিক্ষা।
এতো গেল প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কথা, বর্তমানে টিম ইন্ডিয়ার আরেক অবিচ্ছেদ্য অংশ বিরাট কোহলির কাছ থেকে আমরা কি শিখতে পারি সেগুলো এবার দেখে নেওয়া যাক।
বিরাট কোহলি অবশ্য নেতিবাচক খবরের শিরোনামও হয়েছেন বেশ কয়েকবার যেমন,
মাঠে দর্শকদের মাধ্যাঙুলি দেখানো, প্রেক্টিস সেশনে গালাগালি করা, আঙ্কেলের সমবয়সী লোককে নাম ধরে ডাকা ইত্যাদি নেতিবাচকতার ভিড়েও কিছু শেখার মত বিষয় হল-
নিজের শতভাগ দাও, বাকি সব বাদ
“এটা কোনো বিষয় না, আমাকে নিয়ে কে কি বলল। আমি আমার শতভাগ দেবো কারণ আমার কাজের দায় অন্যকেউ নিবে না”– বিরাট কোহলি
কোহলি যখন মাঠে নামেন তখন কিভাবে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠানো যায় সেদিকেই মনোযোগ রাখেন বেশি। ম্যাচে রান সংগ্রহের দিক থেকে সবসময় এগিয়ে থাকতে চান এই ক্রিকেটার। বা দলের বিপর্যয়ের সময় কখনো কখনো সতভাগের চেয়েও বেশি দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন তিনি। তাঁর ফিটনেসের ক্ষেত্রেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ এই ক্রিকেটার।
২০১৬ সালে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ চলাকালে চতুর্থ টেস্টে দিনের খেলা শেষে কোহলি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যখন ক্লান্ত ঠিক তার দুই ঘণ্টা পর পুনরায় জিমে যেতে দেখা যায় তাঁকে। এবং এভাবে ঘাম ঝরিয়ে পরের দিন মাঠে নেমে আবারো স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করে ২৩৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি ঐ টেস্টে।
জীবনে ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেওয়া
বিরাট কোহলি শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয় ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁর প্রিয়তমার সাথে মধুর সম্পর্ক রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্ট করার জন্য কোহলির স্ত্রী অনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে যে সমালোচনার ঝড় তোলেন ভক্ত-সমর্থকরা তখন স্ত্রীর পাশে থেকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করেছেন কোহলি। তাছাড়া চলমান ইংল্যান্ড সফরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তা অনুষ্কাকে উৎসর্গ করা ও তাঁকে আংটি উপহার দিয়েও অনন্য এক নজীর স্থাপন করেন। তাই পারিবারিক জীবনের ক্ষেত্রেও বিরাট-অনুষ্কার জুটি হতে পারে অনুকরণীয়।
গোপনীয়তা সবার সামনে প্রকাশ না করা
টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ অনীল কুম্বলে যখন দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তখন থেকেই জোর গুঞ্জন উঠে কোহলি ও কুম্বলের মধ্যে বনাবনি না হওয়ার বিষয়টি। মতের অমিলের ব্যাপারটি বারবার মিডিয়ায় আসলেও এই ব্যাপারে কোনো কথাই বলেননি কোহলি। শেষপর্যন্ত কুম্বলে কোচ থেকে পদত্যাগ করলেও কোহলি ও কুম্বলের অনর্দ্বন্দ্বের কথা কেউ জানতে পারেনি।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ও পরামর্শ গ্রহন করা
মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব আসে কোহলির কাঁধে। তবে প্রতিম্যাচেই ধোনির মতামত কিংবা পরামর্শ সবসময় গ্রহন করে এসেছেন কোহলি। এবং এই পরামর্শ কাজে লাগিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের ভাল ও খারাপ দুই সময়ই। শুধু ধোনিই নয় অন্যান্য সিনিয়রদের সাথেও পরামর্শ করে নতুন কৌশল তৈরি করেন বিরাট।
তোমাকে কী জন্য ঘৃণা করা হচ্ছে তা না খুঁজে কেন ভালোবাসা হচ্ছে তা খোঁজো
ক্রিকেট মাঠে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেললেও সর্বদাই স্পষ্টভাষী ছিলেন কোহলি যার কারণে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন বেশ কয়েকবার। তবে ঠাণ্ডা মাথায় সত্যি বলার ও খেলোয়াড়সুলভ আচরণও কম জানেননা তিনি। গাভাস্কার কিংবা শচীনের মত কিংবদন্তির সাথে কোহলির নাম রাখা যায় তাই চোখ বন্ধ করেই