ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের দুর্নীতি-দমন ও নিরাপত্তা শাখা (এসিএসইউ)-র প্রধানকেই এবার বরখাস্ত করল দেশের শীর্ষ আদালতের কমিটি। বিসিসিআই‘য়ের মাথার ওপর জোর করে বসিয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি আরও বড় সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। গত শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) বিসিসিআই‘য়ের দুর্নীতি-দমন শাখার প্রধান নীরজ কুমারকে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বছর থেকে তাকে আর দরকার নেই। চলতি বছরের শেষ দিন অর্থাৎ একত্রিশ ডিসেম্বর তাঁর কার্যকালের মেয়াদের শেষ দিন হতে চলেছে। ভারত-নিউজিল্য়ান্ড সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচ ঘিরে পুনের ক্রিকেট মাঠের পিচ কিউরেটরের ওপর হওয়া স্টিং অপারেশনের পর যে দুর্নীতি সামনে এসেছে, তার জেরেই চাকরি হারাতে চলেছেন কুমার। এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, পুনের পিচ কিউরেটর পান্ডুরঙ্গ সালগাঁওকর বুকির ছদ্দবেশে আসা ইন্ডিয়া টুডে‘র সাংবাদিকদের পিচ সংক্রান্ত নানা গোপন তথ্য় ফাঁস করে দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে পিচের চরিত্র ও আচরণে বদল ঘটানোর জন্য় যড়যন্ত্র করারও আশ্বাস দেয় এবং স্টিং অপারেশনের সময় ক্য়ামেরায় তা ধরাও পড়ে।
দুর্নীতি-দমন শাখার সক্রিয় থাকা সত্ত্বেও তাদের নাকের তলায় এমন ঘটনা ঘটল, অথচ তারা তা টেরও পেলো না! বলা হচ্ছে, ওই সংবাদমাধ্য়মটি স্টিং অপারেশন না করলে, ভারত-নিউজিল্য়ান্ড ম্য়াচ হয়ত খেলাও হয়ে যেত এবং এই গুরুতর অপরাধ অজানাই থেকে যেত। অবশ্য় এধরণের গরহিত অপরাধ সামনে আনার জন্য় বা রোখার জন্য় যে সরঞ্জাম দরকার, তা বোর্ডকে জানিয়েছিলেন কুমার। কিন্তু, বিসিসিআই তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে, স্টিং অপারেশনের ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর দ্বিতীয় একদিনের ম্য়াচ শুরুর আগেই সালগাঁওকরকে বরখাস্ত করে বিসিসিআই। ম্য়াচ যাতে নির্বিঘ্নে করা যায়, তারও বন্দোবস্ত করে বিসিসিআই। সালগাঁওকরের মাঠে ঢোকার এপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ম্য়াচ রেফারির ওপর ম্য়াচ করানো বা না করানোর সিদ্ধান্ত ন্য়স্ত করেন কমিটির প্রধান বিনোদ রাই। এদিকে, বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি‘ও এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে আলাদা করে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, বিসিসিআই যেভাবে দুর্নীতি-দমনে করছে, তাতে কোনও ফাঁকফোকড় আছে কি না। বোর্ড নিযুক্তন পর্যবেক্ষক রমেশ মহামুঙ্করকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ বুকি সেজে আসা সাংবাদিকরা যখন মাঠে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময় তিনি তাঁদের আটকাননি কেন?
বাড়ানো হয়েছে কানপুর ম্য়াচের নিরাপত্তা
পুনে ম্য়াচের ঘটনার জেরে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ একদিনের ম্য়াচ ঘিরে কানপুরে উত্তরপ্রদেশ ক্রিকেট অ্য়াসোসিয়েশনের মাঠের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ম্য়াচ অফিসিয়াল ছাড়া, পিচের কাছে যাতে কাউকে ঘেঁযতে না দেওয়া হয়, সে বিষয়ে আধিকারিক জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কানপুর ম্য়াচের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত এক নিরাপত্তারক্ষী একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়কে জানান, তাঁর কর্মজীবনে কানপুরের মাঠে এমন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত এর আগে দেখেননি তিনি। সেই সঙ্গে পুনের পিচ কিউরেটরের ওপর হওয়া স্টিং অপারেশনের যে ফুটেজটি দেখানো হয়েছে, তা নিয়েও মস্করা করেন ওই নিরাপত্তাকর্মী। তিনি বলেন, ”যে গ্রাউন্ডসম্য়ানরা নিত্য়দিন ক্রিকেট মাঠে কাজ করে, তাদের মধ্য়ে যে কেউই বলে দিতে পারবে, কত রান উঠতে পারে পিচে। এর মধ্য়ে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?” এরপর মাঠের পাশে অবস্থিত একটি স্পোর্টস হোস্টেলের দিকে আঙুল দেখিয়ে তিনি মন্তব্য় করেন, ”একটা হোস্টেলের ছেলেও বলে দেবে, পরের ম্য়াচে কত রান উঠতে পারে।”