২০১৩ সালে, এমএস ধোনি (MS Dhoni) তার টুইটারে লিখেছিলেন, “ভগবান বুঝতে পেরেছিলেন রজনী স্যার বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন তাই তিনি স্যার রবীন্দ্র জাদেজাকে (Ravindra Jadeja) তৈরি করেছেন”। নয় বছর পরে, সেই মজার ছলে করা টুইটকে সত্যি করে অধিনায়কত্বের ব্যাটনটা এবার সেই রবীন্দ্র জাদেজার হাতে তুলে দিয়ে চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK) প্রাক্তন অধিনায়কে পরিণত হওয়া মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)।
এরপর ধোনির সুরে সুর মিলিয়ে নিজের জায়গা সৌরাষ্ট্রে প্রাক্তন বিসিসিআই ও আইপিএল (IPL) কর্তা নিরঞ্জন শাহ বলেছিলেন, “অধিনায়কত্ব রবীন্দ্র জাদেজাকে ভারতীয় ক্রিকেটে একটি নতুন পরিচয় দেবে।” এরই সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, “আমি আন্তরিকভাবে আশা করি যে একদিন তিনিও টিম ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব দেবেন।” এই দুই বক্তব্য থেকেই বুঝে নিতে হয়ে, ‘স্যার জাদেজা’-র ওপর তাবড় তাবড় ব্যাক্তিত্বরা ভরসা করেছে।
ব্যাতিক্রম যে ছিল না, সেটা অবশ্য নয়। অবশ্যই কিছু লোক ছিল যারা তাকে বিশ্বাস করেছিল তবে জাদেজা নিজের ওপর বিশ্বাস রাখেন সব থেকে বেশি। প্রতিবার, একটি বাধা ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে, আর তিনি কোনো না কোনো স্টাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই অন্তরায় টপকে গিয়েছেন। অনেকেই বলে, জাদেজার স্পিন ট্র্যাক দরকার সেরা স্পিনার হয়ে ওঠার জন্য। আবার অনেকে বলে, সিমিং কন্ডিশনে বিদেশে ব্যাট করতে পারে না। এখন তারা তাঁকে বিশ্বাস করে। বিশেষ করে জেমস অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ওভাল টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেই দুরন্ত ৮৬ রানের পর।
ছোটবেলায় জাদেজার বাবা তাঁকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করতে চেয়েছিলেন আর তখন তিনি তাঁর মাকে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজি করাতে পেরেছিলেন। তবে জাদেজার মা দুঃখজনকভাবে অল্প বয়সে সেই সময়টা জাদেজাকে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছে । দীর্ঘদিন ম্যাচ খেলার জন্য জুতো ধার করতেও হয়েছে।
প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি বলেন, তিনি তাকে বলেছিলেন, “ভারতীয় দলে তোমার সবচেয়ে শক্তিশালী থ্রো আছে, তাই না? যখন তুমি বল নিক্ষেপ করো, তখন একটি কাজ করো – স্পিন কে সাথী করো – একই শক্তি, একই হাত-গতি ব্যবহার করো তবে স্পিন দিয়ে।” জাদেজা হিরওয়ানিকে বলেছিলেন যে থ্রোটি দ্রুত হবে না এবং বল গতি হারাবে। (“হিরু-ভাই, তেজ না জায়েগি!) “ব্যাস, তোমাকে ঠিক এটাই করতে হবে,” হিরওয়ানি জাদেজাকে বলত। “ঘূর্ণী বাড়াও, বল ধীর গতিতে যাবে।”
জাদেজার ভারতীয় অভিষেক শুরু হয়েছিল ড্রপ ক্যাচ দিয়ে। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কায় একটি ওডিআইতে শচীন তেনডুলকরের কাছ থেকে ক্যাপ পাওয়ার কয়েক মিনিট পর, সনৎ জয়সুরিয়ার ক্যাচ মিস করেন তিনি। তবে সেই ম্যাচে ধোনির সঙ্গে ব্যাট করে ম্যাচ জেতান তিনি। সেই থেকেই ভারতীয় দলে নিজের জায়গা তৈরি করেন তিনি।
রঞ্জি ট্রফিতে ওয়াংখেড়েতে সৌরাষ্ট্র মুম্বাইকে পরাস্ত করে ২০০৭ সালে। জাদেজা প্রথম-শ্রেণীর প্রথম সেঞ্চুরির চেয়ে ১৩ রান কম করেছিলেন। স্লগ সুইপ করার চেষ্টা করে আউট হয়েছিলেন জাদেজা। এই ঘটনার পর দুই দিন ধরে তাঁর অধিনায়ক সিতাংশু কোটক তাকে “গাধা!” বলে ঠাট্টা করেছিলেন। আর এই সব কিছুকেই পুঁজি করেই বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছেন ‘স্যার জাদেজা’।