আইপিএলের মতোই ক্রিকেট পছন্দ করা বেশকিছু দেশ ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজি লীগ শুরু করে। ঠিক তেমনিভাবেই ২০১৫য় পাকিস্তান নিজেদের ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজি লীগ পাকিস্তান সুপার লীগের শুরু করেছে। পিএসএলের ষষ্ঠ মরশুম ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু এটাই প্রথমবার যখন পাকিস্তান নিজেদের এই লীগটির আয়োজন নিজেরাই করেছে দেশের মাটিতে। আসলে এর আগে সুরক্ষার অভিযোগের কারণে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য খেলোয়াড়রা রাজি হতেন না। এই অবস্থায় তাদের দেশের বাইরেই লীগের আয়োজন করতে হত। তবে সকলেই জানেন যে বিশ্বজুড়ে সমস্ত ফ্রেঞ্চাইজি লীগই আইপিএল থেকে প্রেরণা নিয়েই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আপনারা কী জানেন যে পাকিস্তান সুপার লীগ আইপিএলের কোন আইডিয়াগুলি কপি করেছে? যদি না জানেন তো আসুন আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আপনাদের ৫টি আইপিএল আডিয়ার ব্যাপারে জানাই যা পাকিস্তান কপি করেছে।
পিএসল আইপিএলের এই ৫টি আইডিয়া করেছে চুরি
১. প্লে অফ
পাকিস্তান সুপার লীগের শুরু ২০১৫য় হয়েছিল এবং ততক্ষণে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ৮টি মরশুম খেলা হয়ে গিয়েছিল। আইপিএলের শুরু সময় শীর্ষ চারটি দল সেমিফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করত। কিন্তু ২০১২য় আইপিএলে প্লে অফের নিয়ম চালু হয়। এরপর থেকেই আইপিএল আগের চেয়েও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর লাগতে শুরু করে। সেই সঞগেই অংশগ্রহণকারী দলগুলিও এর লাভ পেতে থাকে। আসলে প্লে অফের জন্য কোয়ালিফাই করা দলগুলির মধ্যে তৃতীয়-চতুর্থ নম্বরের দলগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে আর টপ ২ দল নিজেদের মধ্যে। এখন তিন এবং চার নম্বরের মধ্যে হওয়া ম্যাচে যে দল জেতে তার সঙ্গে এবং টপ ২ দলের মধ্যে হারা দলের মধ্যে একটি ম্যাচ হয়, যার মাধ্যমে ফাইনালে পৌঁছনো দলের নির্ধারিন হয়। পাকিস্তানও এই প্লে অফের নিয়ম নিজেদের পিএসলে চালু করে দিয়েছে। পরিণামস্বরূপ তারা প্রথম মরশুম থেকেই এর ব্যবহার করছে, যা আইপিএলে ২০১২য় শুরু হয়েছিল।
২. ক্রিকেটে বলিউডকে যোগ করার ধরণ
আইপিএলে আমরা বলিউডের ঔজ্বল্যকেও দেখেছি, যা আজো রয়েছে। শাহরুখ খান, শিল্পা শেট্টি আর প্রীতি জিন্টার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আইপিএলে দল কিনে এই টুর্নামেন্টের চমক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। না শুধু এই তারকারা বরং অন্য তারকাদেরও নিজের নিজের দলকে সমর্থন করতে মাঠে দেখা যেতে শুরু করে। এখন আইপিএলেও ঠিক তেমনই জিনিস দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পিসিএলেও এখল ললিউডের তারকারা দারুণভাবে অংশ নিতে শুরু করেছেন। বেশকিছু তারকাদের যেখানে ফ্রেঞ্চাইজিগুলিকে সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে তো বেশকিছু তারকাকে দলের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। সোজা কথায় বলা যেতে পারে যে পিসিএলও নিজেদের টুর্নামেন্টকে সফল করার জন্য আইপিএলের মতোই নিজেদের শিল্পীদের ব্যবহার করেছে।
৩. অ্যাওয়ার্ডিং সিস্টেম
আইপিএলে সবসময়ই এক সে এক ট্যালেন্ট দেখা যায়। তরুণ খেলোয়াড়রা আর টুর্নামেন্ট অংশ নেওয়া বাকি খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়ানোর জন্য টুর্নামেন্টে যথেষ্ট আলাদা আলাদা ধরণের পুরস্কারও খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়। এই পুরস্কারগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করা খেলোয়াড়দের ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’, সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলারকে ‘পার্পল ক্যাপ’ আর টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সেরা প্রদর্শন করা তরুণ খেলোয়াড়কে ‘ইমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ এর পুরস্কার দেওয়া হয়। পাকিস্তান সুপার লীগেও ঠিক আইপিএলের মতোই এমন পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানকে ‘মেরুন ক্যাপ’, সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বোলারকে ‘গ্রীন ক্যাপ’, আর সবচেয়ে ভালো প্রদর্শন করা তরুণ খেলোয়াড়কে ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ খেতাবে সম্মানিত করা হয়।
৪. ড্রেসিং সেন্স
যে কোনো টি-২০ লীগের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশগুলির মধ্যে একটি হলো সাংস্কৃতিক মূল্য। বিশেষ করে আইপিএলে যেখানে বিভিন্ন ধরণের আউটফিট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, আর চিয়ারলিডিং প্রদর্শন, এই বিষয়ে একটা বিশেষ দিক যোগ করে। এটা না শুধু স্থানীয় স্বাদের প্রতিনিধিত্ব করে, বরং এটা টুর্নামেন্টের বিশিষ্টতাকেও দর্শায়। বিশ্বের সমস্ত ফ্রেঞ্চাইজি লীগগুলিতে ড্রেসিং সেন্স যথেষ্ট রঙ বেরঙের হয়। এর শুরুও আইপিএলে থেকেই হয়েছে। যদিও এটা সমস্ত লীগগুলিতে ফলো করা হয়, কিন্তু যদি আপনারা বিবিএল, মাঞ্জাসি সুপার লীগের দিকে লক্ষ্য করেন তো তাদের পোষাকের রঙে কিছুটা চটক থাকে। কিন্তু পাকিস্তান সুপার লীগে খেলোয়াড়দের ইউনিফর্ম আইপিএল ফ্রেঞ্চাইজিগুলির সঙ্গে যথেষ্ট মিল খায়। এই কারণে এটা বলা ভুল হবে না যে পাকিস্তান সুপার লীগ আইপিএল থেকে ড্রেসিং সেন্সকেও যথেষ্ট কপি করেছে।
৫. ফ্যান্স পার্ক
এই বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই যে আইপিএলকে এতটা সফল করতে সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি যোগদান থেকেছে। ফ্রেঞ্চাইজি লীগে যে কোনো চড়াইউৎরাই আসুক কিন্তু সমর্থকরা সবসময়ই এর সমর্থনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আইপিএল দেখার জন্য ক্রিকেট সমর্থকরা পাগল হন। আইপিএল ম্যাচ লাইভ দেখার জন্য প্রত্যেকেই মাঠে পৌঁছতে পারেননা। তো আইপিএল ভিআইপি বক্স বা সুপার ফ্যান প্রতিযোগীতা, সমর্থকদের লাইভ অ্যাকশনের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের তারকাকে দেখার জন্য বেশকিছু সুযোগ করে দেয়। সেই সঙ্গে আইপিএল ম্যাচ দেখার জন্য দেশজুড়ে ফ্যান পার্ক রয়েছে যেখানে তারা বড়ো পর্দার নিজের পছন্দের দলের ম্যাচের মজা নিতে পারেন। আইপিএলে ফ্যান পার্কের জনপ্রিয়তা দেখে পাকিস্তান সুপার লীগেও ফ্যান পার্ক শুরু করা হয়েছে। অধিকাংশ ফ্রেঞ্চাইজি এটাকে লীগের বৃদ্ধির জন্য পরবর্তী বড়ো পদক্ষেপ মনে করে।