মাত্র তেরো বছর বয়সেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লিগ “হ্যারিস শিল্ড” লিগে ৫৩৩ রান করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন পৃথ্বী শ। তার ঠিক পাঁচ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জাতীয় দলে সাদা পোশাকে অভিষেক ঘটে এই তরুণের। আর প্রথম টেস্ট ম্যাচেই বাজিমাত করেন সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। অন্যদিকে বর্তমান পারফরম্যান্স বিবেচনা করে অনেকেই গ্রেট লিটল মাস্টার শচীনের সাথে তুলনা করা শুরু করে দিয়েছেন পৃথ্বী শ’র।
অন্যদিকে টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান ক্যাপ্টেন কোহলি যখন দলে আসেন তখন তাঁর সাথেও তুলনা করা হয়েছে গ্রেট শচীনের সাথে।
তবে লিটল মাস্টার শচীনের সাথে পৃথ্বী শ’কে তুলনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত বা কতটা সমর্থনযোগ্য তাই এবার দেখে নেওয়া যাক।
১. যুগের ভিন্নতা
১৮ বছর বয়সী পৃথ্বী শ’র অভিষেক ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। অন্যদিকে শচীনের টেস্ট অভিষেক ঘটে পাকিস্তানের বিপক্ষে এবং লিটল মাস্টার সেঞ্চুরি হাঁকান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের মাটিতেই। ইংলিশ কন্ডিশনে সেঞ্চুরি হাঁকানো বেশ দুর্লভ বটে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য।
ঘরের মাঠে পরিচিত কন্ডিশনে ক্যারিবিয়ায়নদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানো আর ইংলিশ কন্ডিশনে অগ্নিঝরা বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি হাঁকানোর মধ্যে তফাতটা কতটুকু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই একটি সেঞ্চুরির উপর হিসেব কষে শচীনের সাথে তরুণ পৃথ্বীর তুলনা করা বোকামিই বেশ।
২. দৃষ্টিভঙ্গির ধরনে ভিন্নতা
গ্রেট শচীন এবং তরুণ পৃথ্বী দুজনেই মুম্বাই প্রদেশ থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার ও উভয় ব্যাটসম্যানই খুব কম সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পেয়েছেন সাফল্য। তবে ব্যাট হাতে বল মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে দুইজনের মধ্যেই রয়েছে আকাশ-পাতাল ফারাক। শচীন সাধারণত ব্যাট-প্যাড নিয়ে মাঠে নেমে দেখেশুনে কিছু বল মোকাবেলা করে প্রথমে উইকেটে সেট হয়ে নিতেন এবং পরে আক্রমণ করতেন। অন্যদিকে পৃথ্বী শ সেই ভাবনায় মনোনিবেশ না করে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার চেষ্টা করেন।
তাঁর এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের উদাহরণ দেখা যায় আইপিএলে হায়দ্রাবাদের হয়ে ৩৬ বলে ৬৩ রানের ইনিংসের দিকে তাকালেই।
৩. ব্যাটিং পজিশন
একজন ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বড় ভূমিকা রেখে থাকে তাঁর ব্যাটিং পজিশন।
শচীন তেন্ডুলকর একদিনের ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে ব্যাট করতে নামলেও সাদা পোশাকে তাঁর ব্যাটিং পজিশন ছিল চার নাম্বারে।
অন্যদিকে পৃথ্বী শ সব ফরম্যাটেই একজন ওপেনার হিসেবে ব্যাটিং করে থাকেন। ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের জন্য নতুন বল মোকাবেলা করে রান তোলা একইসাথে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ। বাইরের কন্ডিশনে নতুন বল মোকাবেলা করা যে একটু বেশিই কঠিন তা জানা আছে সকলেরই। গ্রেট শচীন যেহেতু টেস্টে চার নাম্বারে ব্যাট হাতে নামতেন তাই খেলার মোমান্টাম ধরে রাখাটাও ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আলাদা পজিশনে আলাদা চ্যালেঞ্জ থাকার ফলে শচীনের সাথে কখনোই পৃথ্বী শ’র তুলনা করা চলে না।
৪. সব মিলিয়ে, তুলনাটা খুব জলদি
পৃথ্বী শ এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১৪ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। তাছাড়া সবেমাত্র টেস্ট অভিষেক হয়েছে এই আঠারো বছর বয়সী তরুণের। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো অভিষেক হয়নি ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে। পথটা যে এখনো অনেক বাকি এই ব্যাটসম্যানের তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। অন্যদিকে বিভিন্ন কন্ডিশনে বিভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ব্যাপারতো রয়েছেই। নিজের ফিটনেস ঠিক রেখে দেশের হয়ে লম্বা সময় পর্যন্ত খেলে যেতে পারলে হয়তো ভাল কিছুই অপেক্ষা করছে এই ব্যাটসম্যানের জন্য। তবে এত জলদি শচীনের সাথে তুলনা করা বাড়াবাড়িই।