প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি সম্প্রতিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সমস্ত ফর্ম্যাট থেকে নিজের অবসর ঘোষণা করে দিয়েছেন। তিনি নিজের শেষ ম্যাচ নিউজিল্যন্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ২০১৯ এর সেমিফাইনালে খেলেছিলেন। আইসিসি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যাণ্ডের কাছে হেরে ভারত টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছিল, যার ফলে ভারতীয় দলের সমর্থকরা বড়ো ধাক্কা খেয়েছিলেন। আসলে এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ভারতকে ১৮ রানে হারিয়েছিল। এই ম্যাচে মহেন্দ্র সিং ধোনি শেষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, কিন্তু তার রান আউট হওয়ায় ভারতের আশাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। এই ম্যাচের পর থেকেই মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের খবর জোরাদার হয়েছিল। তবে এখন মহেন্দ্র সিং ধোনি অবসর নিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় টিম ইন্ডিয়াকে একজন নতুন উইকেটকিপার তথা ফিনিশারের সন্ধান করতে হবে। মহেন্দ্র সিং ধোনির অবস্রের খবরের পর প্রশ্নও উঠছে যে তার উত্তরাধিকারি কে হবেন? এই অবস্থায় আজ আমরা এই বিশেষ প্রতিবেদনে এমন ৪জন তরুণ খেলোয়াড়দের কথা বলব যারা দলে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভরপাই করতে পারেন।
৪. ঈশান কিষাণ
ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির টিমমেট প্রতিভাবাণ তরুণ ব্যাটসম্যান ঈশান কিষাণ তাঁর আদর্শ রিপ্লেসমেন্ট হতে পারেন। ঈশান ধোনিকে যথেষ্ট কাছ থেকে দেখেছেন। ২০ বছর বয়সী ঈশান কিষানের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও দুর্দান্ত প্রদর্শন থেকেছে। আইপিএলে প্রথম দুটি মরশুমে গুজরাট লায়ান্সের হয়ে খেলা ঈশান ২০১৮ তথা ২০১৯এ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলে থেকেছেন। ঈশান স্পিন আর জোরে বোলারদের আরামে খেলতে পারেন। তিনি ধোনির মতোই আক্রামণাত্মক ক্রিকেট খেলেন আর যে কোনো নম্বরে ব্যাটিং করতে পারেন। আইপিএলের কিছু ম্যাচে তিনি নিজের ব্যাটিংয়ে সকলকে প্রভাবিত করেছিলেন। এর সঙ্গেই আইপিএলে তিনি উইকেটকিপিংয়েও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এই সবকিছু বিষয় তাকে ধোনির মজবুত বিকল্প হিসেব গড়ে তুলেছে।
৩. ঋষভ পন্থ
ঈশান কিষাণেরই অনুর্ধ্ব ১৯ দলের সতীর্থ ঋষভ পন্থকে ধোনির বিকল্প হিসেবে সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টও এই তরুণ খেলোয়াড়ের উপর নিয়মিত ভরসা দেখিয়েছে। পন্থকে সকলে মহেন্দ্র সিং ধোনির সবচেয়ে ভালো বিকল্প মনে করছেন। তিনি আইপিএলের গত কিছু মরশুমে নিজের স্ট্রোক প্লে –তে সকলের মনোযোগ নিজের দিকে টেনেছেন। বাঁহাতের এই ব্যাটসম্যান আইপিএলে দিল্লির হয়ে কিছু দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের হয়ে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন। বিশ্বকাপ ২০১৯ এ০ পন্থ শেষ সময়ে দলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তিনি মাত্র দুটি ম্যাচ খেলেছেন, ইন্তু এর মধ্যে তিনি সাহসী প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু তার উইকেটকিপিংকে কমজুরি মনে করা হয়। তবে ধীরে ধীরে তিনি নিজের কিপিংয়েও উন্নতি করছেন। ক্রিকেটের সীমিত ওভারের ফর্ম্যাট ওয়ানডে তথা টি-২০র জন্য তাকে সেরা নির্বাচন বলা হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড়ো কারণ তার স্ট্রোক প্লে। পন্থের কাছে বড়ো বড়ো ছক্কা মারার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও পন্থের কাছে শেষের ওভারে দ্রুতগতিতে রান করারও প্রচুর সক্ষমতা রয়েছে। যে কারণে তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনির দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারেন।
২. সঞ্জু স্যামসন
সঞ্জু স্যামসন যখন আইপিএলে ব্যাটিং করার জন্য এসেছিলেন, তখন তিনি নিজের ব্যাটে দুর্দান্ত ক্লাস দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সীমিত ওভারের ভারতীয় দলে নিজের জায়গা করে নিতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেট নিসন্দেহে তিনি নিয়মিতভাবে ভালো পারফর্মা না থাকুন, কিন্তু ২৪ বছরের সঞ্জুর ফার্স্ট ক্লাসে গড় ৩৬.৮১। তার ব্যাপারে বলা হয় যে তার মধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে পারফর্ম করার প্রতিভা রয়েছে। তিনি ৪ নম্বরে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খেলতে পারেন। তবে এখন চার নম্বরে ভারতীয় দল শ্রেয়স আইয়ারের রূপে দুর্দান্ত বিকল্প পেয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় এখন দেখা মজাদার হবে যে ভারতীয় নির্বাচকরা কী সঞ্জু স্যামসনকে ওয়ানডে তথা টি-২০ সুযোগ দেবেন।
স্যামসন যে ধরণের ব্যাটসম্যান, আর তাকে যদি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে খোলা ছুট দেওয়া হয় তো নিশ্চিতভাবে তিনি ভালো প্রদর্শন করতে সফল হবেন। এখন এমন মনে হচ্ছে যে স্যামসন নিজের ওপর বেশিই চাপ তৈরি করে ফেলেন। যদি স্যামসন বিনা চাপে খেলেন তো ধোনির বিকল্প হিসেবে তিনি উঠে আসতে পারেন।
১. কেএল রাহুল
বর্তমান সময়ে সীমিত ওভারের ভারতীয় ক্রিকেট দল বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার পর যদি আজ কেউ আশা আর ভরসা জাগান তো তিনি নিশ্চিতভাবেই কেএল রাহুল। রাহুল ধোনির মতোই ম্যাচ ফিনিশ করতে জানেন। কর্ণাটকের এই খেলোয়াড় ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই ফিট হন। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় ব্যাটিং করাতে পারা যেতে পারে রাহুলকে।
এখন তো রাহুল উইকেটের পেছনে দাঁড়াতেও শুরু করে দিয়েছেন। তার কিপিং যেখানে ভারতের ব্যাটিং মজবুত করেছে, অন্যদিকে এমএস ধোনির বিকল্প হিসেবে তিনি নিজের জায়গা সবার উপরে রেখেছেন। কেএল রাহুলের নামে বেশকিছু রেকর্ডও রয়েছে। তিনি তিন ফর্ম্যাটেই ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা একমাত্র ব্যাটসম্যান। তিনি টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করা একমাত্র খেলোয়াড়ও। ২৮ বছর বয়সী রাহুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট ১১টি সেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। তিনি পাঁচটি ওয়ানডে সেঞ্চুরিও করেছেন। রাহুল এখনো পর্যন্ত ৩৬টি টেস্ট, ৩২টি ওয়ানডে আর ৪২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। তার এত দুর্দান্ত রেকর্ড তথা সক্ষমতা দেখে বলা যেতে পারে যে তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনির ভরপাই করার জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প প্রমাণ হতে পারেন।