ভারত আর ইংল্যান্ডের মধ্যে ওয়ানডে সিরিজের শেষ তথা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গতকাল হেডিংলের লীডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ম্যাচে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায়। এই ম্যাচে ইংল্যান্ড দলে একটি মাত্র পরিবর্তন করা হয়।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের খারাপ প্রদর্শন
ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করে। বিরাট বিগ্রেডের শুরুয়াত খুবই মন্থর হয়, আর তাদের ইনিংসে ষষ্ঠ ওভারেই ওপেনার রোহিত শর্মা ১৮ বল খেলে মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান। এরপর ব্যক্তিগত ৪৪ রানের মাথায় বেন স্টোকসের হাতে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান আরেক ওপেনার শিখর ধবন। ইংলিশ লেগ স্পিনার আদিল রশিদ দীনেশ কার্তিক, বিরাট কোহলি এবং সুরেশ রায়নাকে আউট করে ভারতকে লাগাতার ধাক্কা দেন যা থেকে ভারতীয় দল আর এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে পারে নি। সবচেয়ে হতাশ করেন এমএস ধোনি, যিনি ৪২ বল করতে নিয়েছেন ৬৬টি বল। ভারতীয় দল যদি ২৫০ রানে পৌঁছোয় তাহলে কৃতিত্ব দিতে শেষ দিকে শার্দূল ঠাকুরের ঝোড়ো ইনিংসকে। তিনি ১৩ বলে ২টি ছক্কার সাহায্যে ২২ রান করেন।
রুট এনে দিলেন জয়
২৫৭ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা ভাল হয়। জনি বেয়রস্টো এবং এই ম্যাচে আহত বাটলারের জায়গায় দলে আসা জেমস ভিন্স প্রথম উইকেটে ৪১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। বেয়রস্টো ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। তিনি ছাড়াও ভিন্সও ৩০ রানেরই ইনিংস খেলেন। এই দুই ওপেনারের আউট হওয়ার পর জো রুট এবং অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান ইংল্যান্ডের ইনিংসের হাল ধরেন। এখান থেকেই এই দুই ব্যাটসম্যান শতরানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে ৮ উইকেটে জয় এনে দেন।
এর মধ্যে ওয়ানডে ক্রিকেট রুট নিজের ১৩ তম সেঞ্চুরি করেন। তার এই সেঞ্চুরির দৌলতেই তিনি ম্যান অফ দ্য সিরিজের পুরস্কারও পান। তিনি ছাড়াও এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান আদিল রশিদ।
ওটা একটা অদ্ভূত বল ছিল
এই ম্যাচ হেরে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে বলেন, “ যতদূর রানের ব্যাপারে কথা বলা যায়, আমরা কখনওই নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। আমাদের ২৫-৩০ রান কম হয়েছে। ইংল্যান্ড সব বিভাগেই নিঁখুত ছিল এবং তারা জয়ের যোগ্য দাবীদার ছিল। ইংল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে আমাদের সেরাটা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সারাদিন ধরেই পিচ খুব মন্থর ছিল, যা অবাক করার মতই, স্যাঁতস্যাঁতে নয় শুধু মন্থর মাত্র। নতুন বলের বিরুদ্ধে এটা দু’ধরণে গতি ছিল, কিন্তু স্পিনারদের ক্ষেত্রে এটা মন্থর হয়ে যায়। এই ধরণের পিচ আগে দেখি নি। বোলাররা খুব ভাল বল করেছে, বিশেষ করে ওদের স্পিনাররা, যারা লোভী হয়ে পড়েনি এবং উইকেট নেওয়ার আগে তারা রান আটকে দেয়। আমরা ভেবেছিলাম দীনেশ ভাল করবে, কিন্তু ও নিজের শুরুটাকে কনভার্ট করতে পারে নি, তাই আমি ব্যাটিং অর্ডার বদল নিয়ে আফসোস করছি না। শার্দূলকে কিছু এক্সপোজার নিতে বলা হয়েছিল, এবং ভুবির কামব্যাক করর প্রয়োজন ছিল। যখন পরিবর্তন করাটা কাজে দেয় না, তাদের অপ্রয়োজনীয় দেখায়, তাই এই পদক্ষেপ আমাদের বিপক্ষেই যাবে। এই ধরনের ম্যাচ আমাদের দেখায়, বিশ্বকাপের জন্য আমাদের কি প্রয়োজন। দলে আমাদের সঠিক ভারসাম্যের প্রয়োজন। আর বিশ্বকাপের আগে আমাদের কাজটা সঠিক করার প্রয়োজন। আমরা কোনও একজনের স্কিলের উপর নির্ভর করতে পারি না, আর আমাদের সব বিভাগেই ভাল প্রদর্শন করার প্রয়োজন রয়েছে। টেস্ট দল অনেকটাই সেটল, এবং এটা খুব দীর্ঘ সিরিজ হতে চলেছে। আমরা কঠিন ক্রিকেট খেলতে চাই এবং আমরা জানি ইংলিশ দল আমাদের সেটা প্রোভাইড করবে”।
আদিল রশিদের যে বলে তিনি আউট হন সেটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কোহলি বলেন, “ আমি অনুর্ধ্ব ১৯ থেকে রশিদের বিরুদ্ধে খেলছি, আর এটি একটা ভয়ংকর বল ছিল, ফলে এটা সেই রকম বলগুলির একটা, যাকে আপনি নিজেদের পক্ষে নেবেন আর বলবেন ‘ওয়াও’। আমি আশ্চর্য হয়েছি যে গত এক বছরে ওর টার্ন অনেকটাই কম হয়েছে, কিন্তু এটা সত্যিই একটা অদ্ভূত বল ছিল”।