ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের একাদশ সংস্করণ চেন্নাই সুপার কিংসের ইতিহাসে তৃতীয় খেতাব জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যায়। ফাইনাল ম্যাচে সিএসকে ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদকে। এই একাদশ সংস্করণ দারুণ মনোরঞ্জক প্রমানিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সকলেই এই প্রতিযোগিতার প্রত্যেক ম্যাচকেই দারুণ উপভোগ করেছেন। এই মরশুমে বেশ কিছু তরুণ প্লেয়ার দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। সেই সঙ্গে বেশ কিছু অভিজ্ঞ প্লেয়ারও দুর্দান্ত প্রদর্শন করে টা প্রমান করে দিয়েছেন যে তারা আজও নিজেদের ক্ষমতায় দলকে জেতাতে পারেন। সেই সঙ্গে এটাও প্রমানিত হয় যে অভিজ্ঞতা সবসময়ই কাজে লাগে।
এই টুর্নামেন্ট এখন শেষ হয়ে গেছে। এখন এটাই দেখার সময় যে এই মরশুমে বিভিন্ন দলের আর খেলোয়াড়দের জন্য কতটা সঠিক প্রমানিত হয়েছে। এই সেগমেন্টে আমরা মরশুমে এশিয়া উপর মহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের বাছার চেষ্টা করব। এই মরশুমের আইপিএলে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্থান এবং নেপালের মত এশিয়া উপমহাদেশের দেশগুলির প্লেয়াররা অংশ নিয়েছিল।
কেএল রাহুল –কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব
কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব কর্নাটকের ব্যাটসম্যান কেএল রাহুলের উপর বিশাল টাকা লগ্নী করেছিল। রাহুলের প্রতিস্পর্ধায় যেভাবে রাহুল অংশ নিয়েছেন তাতে পাঞ্জাবের সমস্ত পয়সাই উসুল হয়ে গিয়েছে। এই স্টাইলিস ব্যাটসম্যান ১৪টি ম্যাচে ৬৫৯ রান করেছেন। এই মরশুমে তিনি ব্যাট হাতে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। সেই সঙ্গে এই মরশুমে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল অপরাজিত ৯৫ রান।
আম্বাতি রায়ডু—চেন্নাই সুপার কিংস
চলতি মরশুমে রায়ডুর সফরও দারুণ ছিল। বেশ কিছু ম্যাচে তিনি নিজের দলকে জিতিয়েছেন। আম্বাতি রায়ডু ১৬টি ম্যাচ খেলে ৪৩ গড়ে ৬০২ রান করেছেন। এই মরশুমে তিনি তিনটি হাফসেঞ্চুরি এবং একটি সেঞ্চুরিও করেন। রায়ডুর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শন লীগ ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রবাদের বিরুদ্ধে ছিল, যখন তিনি নিজের প্রথম টি২০ সেঞ্চুরির সাহায্যে চেন্নাইকে এই ম্যাচ ৮ উইকেটে জিততে সাহায্যে করেন।
সূর্যকুমার যাদব—মুম্বাই ইণ্ডিয়ান্স
গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এই বছর এই টুর্নামেন্ট ভীষণই নিরাশাজনক প্রদর্শন করে। তারা প্লে অফেও নিজেদের জায়গা করতে ব্যর্থ হয়। মুম্বাই এই মরশুমে বেশ কিছু পজিটিভ ব্যাটসম্যানকে দলে শামিল করেছিল যার মধ্যে একজন হলে সূর্যকুমার যাদব। তিনি ওপেনার হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচেই পঞ্চাশ রান করেন। তিনি এই মরশুমে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই নিজের তরফে দ্রুত শুরুয়াত করার জন্য নির্বাচিত হন। তিনি এই মরশুমে ৫০০ রান করা প্রথম অনিশ্চিত ভারতীয় ব্যাটসম্যান হন। তইনি মোট ১৪টি ম্যাচ খেলে ৫১২ রান করেন।
বিরাট কোহলি—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গলুরু
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গলুরুর শিবিরে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির জন্য এই মরশুম ভীষণই নিরাশাজনক ছিল। তার নেতৃত্বে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স আবারও প্লে অফে জায়গা করতে অসমর্থ হয়। কিন্তু কোহলির ব্যক্তিগত প্রদর্শন দুর্দান্ত ছিল। কোহলি ১৪টি ম্যাচে ৫৩০ রান করেন এবং ৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে হারার পরও তার ব্যক্তিগত প্রদর্শন দুরন্ত ছিল, এবং তিনি অপরাজিত ৯২ রান করেছিলেন।
ঋষভ পন্থ—দিল্লি ডেয়ারডেভিলস
দিল্লির তরুণ ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থের জন্য এই মরশুম দারুণ কেটেছে। তিনি এই বছর এমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য সিজনের পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন। মোট ১৪টি ম্যাচ খেলে তিনি ৫২. ৬১ গড়ে ৬৮৪ রান করেছেন। এই মরশুমে তিনি মোট ৬৮টি চার এবং ৩৭টি ছয় মেরেছেন। সেই সঙ্গে ২০১৮য় তিনি কোনও প্লেয়ার দ্বারা সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি মারার রেকর্ডও নিজের নামে করেছেন।
মহেন্দ্র সিং ধোনি –চেন্নাই সুপার কিংস (অধিনায়ক)
অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি আবারও প্রমান করেছেন যে অভিজ্ঞতার চেয়ে বড় কিছু নেই। চলতি মরশুমে ব্যাট হাতের ধোনির দারুণ কেটেছে। সমর্থকরা আবারও ধোনির পুরোনো রূপ দেখতে পেয়েছেন যখন তিনি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন। ধোনি এই আইপিএলে মোট ১৬টি ম্যাচে ৭৫.৮৩ গড়ে ৪৫৫ রান করেছেন। তার গড় এই মরশুমের সব বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি থেকেছে।
সাকিব আল হাসান—সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ এই মরশুমে দুরন্ত পারফর্মেন্স দেখিয়েছে। তাদের প্রধান প্লেয়ারদের মধ্যে একজন হলেন সাকিব আল হাসান। এই বাংলাদেশী অলরাউন্ডার মোট ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন, যাতে তিনি ২৩৯ রান করে গুরুত্বপূর্ণ যোগদান রেখেছেন। তবে এই আইপিএলে তার প্রধান যোগদান ছিল বল হাতে, এই মরশুমে তিনি ৮ ইকোনমি রেটে ১৪টি উইকেট নিয়েছেন।
রশিদ খান—সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ
এই মরশুমের আইপিএলে রশিদ খান একজন সুপারস্টার হিসেবে সামনে এসেছেন। কেকেআরের বিরুদ্ধে এলিমিনেটর ২ ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ১০ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন পরে বল হাতে তিন উইকেটও নেন। পুরো মরশুমেই তিনি দলের হয়ে বড় বড় উইকেট নিয়েছেন। তিনি বিরাট কোহলি, এবি ডেভিলিয়র্স, এম এস ধোনি, অ্যান্দ্রে রাসেলের মত বড় বড় ব্যাটসম্যানদের আউট করে ১৭টি ম্যাচে ২১টি উইকেট নিয়েছেন।
সন্দীপ লামিছানে—দিল্লি ডেয়ারডেভিলস
তরুণ নেপালী স্পিনার সন্দীপ লামিছানে আইপিএলে খেলা প্রথম নেপালি প্লেয়ার হিসেবে রেকর্ড বুকে নাম তুলে ফেলেছেন। যদিও সন্দীপের দল চলতি আইপিএলে কিছুই করে উঠতে পারে নি কিন্তু সন্দীপ নিজের পারফর্মেন্স দিয়ে সকলেরই নজর কেড়ে নিয়েছেন। তিনি মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলেছেন এবং প্রত্যেক ম্যাচেই চার ওভার বল করেছেন তিনি ৬.৮৩ ইকোনমি রেটে ৫টি উইকেট নিয়েছেন।
মুজীব রহমান—কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব
আরেক আফগান স্পিনার মুজিম উর রহমানে এই মরশুমে পাঞ্জাব বোলিং লাইনআপের অভিন্ন অংশ ছিলেন। রহমান এই মরশুমে ১১টি ম্যাচ খেলে ১৪টি উইকেট নিজের নামে করেছেন। এই মরশুমে তার বড় প্রাপ্তি বিরাট কোহলির উইকেট। তবে আঘাত পাওয়ার জন্য তাকে এই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হয়।
উমেশ যাদব—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু
অভিজ্ঞ ভারতীয় বোলার উমেশ যাদব এই মরশুমে দুরন্ত পারফর্মেন্স করেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর সম্পুর্ণ বোলিং যেখানে ব্যর্থ ছিল সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম উমেশের বোলিং। তিনি মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়ে প্রথম দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। উমেশ ১৪টি ম্যাচে ১৫.৯৫ ইকোনমি রেটে এবং ২০.৯০ গড়ে ২০টি উইকেট নিজের নামে করেছেন।