বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফ্রেঞ্চাইজি লীগ আইপিএলের অপেক্ষা ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে করেন। এতে দেশেরই নয় বরং বিদেশী খেলোয়াড়রা প্রচুর পরিমাণে অংশ নেন। আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটের তারকারা অংশ নিয়েছেন, কিছুজন তো এখনো ফ্রেঞ্চাইজিগুলির সদস্য। এই ফ্রেঞ্চাইজি লীগে যে খেলোয়াড়রা ভালো প্রদর্শন করেন তাদের দলে রাখা হয় আর যারা ফর্মে থাকেন না তাদের ফ্রেঞ্চাইজিগুলো বাদ দিয়ে দেয়। তা সে যত বড়ো খেলোয়াড়ই হোন না কেনো তিনি। আইপিএলে এমন কিছু খেলোয়াড়ও থেকেছেন যাদের তাদের ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজি দল থেকে বাদ দিয়েছে। তো আসুন এই প্রতিবেদনে সেই ৫জন তারকা খেলোয়াড়ের ব্যাপারে জানানো যাক যাদের বাদ দিয়েছিল তাদেরই ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজিরা।
১. বীরেন্দ্র সেহবাগ
ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা খেলোয়াড় বীরেন্দ্র সেহবাগ দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলার মাঠে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। যখন আইপিএল শুরু হয় তো ২০০৮ এ দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের জন্য সেহবাগকে মার্কি প্লেয়ার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ২০০৮ এ দিল্লির অধিনায়কত্ব করে সেহবাগ ১৪টি ম্যাচে ৪০৬ রান করে নিজের দলকে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিলেন। তবে সেখানে ফ্রেঞ্চাইজি হেরে যায়। এরপর ২০১২ পর্যন্ত সেহবাগ নিজের ফর্ম ধরে রাখেন, কিন্তু ২০১৩য় সেহবাগ নিজের ফর্ম হারিয়ে ফেলেন। দিল্লির হয়ে ১৩টি ম্যাচে ইনিংস শুরু করে সেহবাগ ২৪.৫৮র নিরাশাজনক গড়ে মাত্র ২৯৫ রানই করতে পারেন। তারমধ্যে ৯৫ রান স্রেফ একটি ম্যাচ থেকে আসে। যার মানে হলো সেহবাগ অন্য ১২টি ম্যাচে মাত্র ২০০ রানই করতে পারেন। ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজি দিল্লি তাকে ২০১৪য় রিলিজ করে দেয়। নিলামে পাঞ্জাবের ফ্রেঞ্চাইজি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব সেহবাগকে কিনে নিজেদের দলে শামিল করে। যেখানে তিনি ১৭টি ম্যাচে ৪৫৫ রান করেন। এরপর ২০১৫য় তিনি নিজের আইপিএল কেরিয়ারকে বিদায় জানান।
২. সৌরভ গাঙ্গুলী
সৌরভ গাঙ্গুলীকে প্রিন্স অফ কলকাতা বলা হয়ে থাকে। দাদা নিজের কেরিয়ারের শুরু কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স স্টেডিয়ামে করেছিলেন। আইপিএল ২০০৮ এ কলকাতা নাইট রাইডার্স সৌরভ গাঙ্গুলীকে কিনে তাকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল। শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স আইপিএল ২০১১য় কলকাতার প্রিন্স বলে পরিচিত গাঙ্গুলীকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেয়। দলের অধিনায়কত্ব করা সৌরভ গাঙ্গুলী আইপিএল ২০১০এ ১৪টি ম্যাচে ৪৯৩ রান করেছিলেন। এর মধ্যে খবর আসে যে কেকেআরের ম্যানেজমেন্ট গৌতম গম্ভীরকে দলে শামিল করতে চায়। আইপিএল ২০১১য় গাঙ্গুলীকে বাদ দেওয়ার পর কেকেআর গৌতম গম্ভীরকে দলের নেতৃত্ব দেয় আর গম্ভীর এই ফ্রেঞ্চাইজিকে দুবার খেতাব জেতান। অন্যদিকে সৌরভ গাঙ্গুলী ২০১১র নিলামে আনসোল্ড থাকেন, কিন্তু ২০১২য় পুণে ওয়ারিওয়ার্স মাইকেল ক্লার্কের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে তাকে দলে শামিল করে।
৩. যুবরাজ সিং
৬ বলে ৬টি ছক্কা মারা অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের নাম ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লেখা রয়েছে। যুবরাজ আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ আর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এখন আইপিএল ২০০৮এ যুবিকে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব কিনে নিয়ে দলের নেতৃত্ব দেওয়। যুবি ২০০৮ এ ভালো প্রদর্শন করেন কিন্তু ২০০৯ এ এই ফ্রেঞ্চাইজি ভীষণই খারাপ প্রদর্শন করে। তখন ২০১০এ যুবিকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে শ্রীলঙ্কা খেলোয়াড় কুমার সাঙ্গাকারাকে দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। ওই মরশুমে যুবরাজ ফ্লপ থাকেন। তারপরই ফ্রেঞ্চাইজি ২০১১য় যুবিকে রিলিজ করে দেয়। ২০১১য় যুবিকে পুণে ওয়ারিওয়ার্স কিনে নিজেদের দলে নেয়। তবে এরপর প্রায় প্রত্যেকটি মরশুমেই যুবির ফ্রেঞ্চাইজি বদলে যেতে থাকে। আইপিএল ২০১৯এ যুবরাজ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে নিজের শেষ আইপিএল মরশুম খেলেন। যেখানে তিনি বেশি সুযোগ পাননি আর ১০ জুন ২০১৯এ যুবি আইপিএল সহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার থেকে অবসর নেন।
৪. ভিভিএস লক্ষ্মণ
ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের নাম সোনালী অক্ষরে লেখা ভিভিএস লক্ষ্মণও সেই তারকা খেলোয়াড়দের তালিকায় রয়েছেন যাদের তাদের ঘরোয়া ফ্রেঞ্চাইজি দল থেকে বাদ দিয়েছিল। লক্ষ্মণ সীমিত ওভারের ক্রিকেটের তুলনায় টেস্ট ক্রিকেটে বেশি নাম কামিয়েছেন। আইপিএল ২০০৮এ লক্ষ্মণকে হায়দ্রাবাদের ফ্রেঞ্চাইজি ডেকান চার্জাস কিনে নেয় আর এই মরশুমের শুরুর ৬টি ম্যাচের জন্য লক্ষ্মণ দলের নেতৃত্ব সামলান। ২০০৯ এ লক্ষ্মণ বেশি সুযোগ পাননি আর এই মরশুমে অস্ট্রেলিয়ান তারকা অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়। গিলক্রিস্ট নিজের অধিনায়কত্বে এই ফ্রেঞ্চাইজিকে ফাইনাল ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরকে হারিয়ে খেতাব জেতান। ২০১০এ লক্ষ্মণ দলের অংশ থাকেন কিন্তু তাকে একটি ম্যাচেও খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর আইপিএল ২০১১য় ভিভিএসকে এই ফ্রেঞ্চাইজি রিলিজ করে তাকে নিলামের রাস্তায় দেখায়। তবে ২০১১র নিলামে কোচি টক্কর্স কেরল ভিভিএসকে কিনে নেয়। তবে সেখানেও ভিভিএস বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এর সঙ্গেই লক্ষ্মণের আইপিএল কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়।
৫. রাহুল দ্রাবিড়
টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের নাম দেখে আপনারা অবাক হয়ে থাকবেন। আসলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ফ্রেঞ্চাইজি ২০০৮এ রাহুল দ্রাবিড়কে কিনে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এই মরশুমে ফ্রেঞ্চাইজি সবচেয়ে নীচে আট নম্বরে স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল। এরপর আইপিএল ২০০৯ এ ফ্রেঞ্চাইজি রাহুলকে সরিয়ে কেভিন পিটারসনকে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল। পিটারসেনের অধিনায়কত্বে দল ফাইনাল পর্যন্ত যায়। তবে তারা খেতাব জিততে পারেননি কিন্তু পুরো মরশুমে ভালো প্রদর্শন করে। ২০১২য় রাহুল আরসিবির হয়ে খেলে গড়পড়তা প্রদর্শন করেন। এর কারণে ২০১১য় ফ্রেঞ্চাইজি রাহুলকে রিলিজ করে নিলামের রাস্তা দেখায় আর ক্রিস গেইল, এবি ডেভিলিয়র্সের মতো খেলোয়াড়দের কিনে দলকে নতুন রূপ দেয়। দ্রাবিড়কে আইপিএল ২০১১য় নিলামে কিনে রাজস্থান নিজেদের দলে শামিল করে আর ২০১৩য় রাহুলের আইপিএল কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়।