গত কয়েক বছরে গৌতম গম্ভীর, যুবরাজ সিং সহ ভারতীয় দলের বেশকিছু ক্রিকেটারদের ‘সন্ন্যাসে’ যাওয়ার সাক্ষী থেকেছি আমরা। এঁদের অবসরের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতীয় দলে তৈরি হয়েছে এক বিরাট শূন্যস্থান। তবে অবসরের আগে ভারতীয় তথা বিশ্ব ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অসংখ্য অবদান রেখে গিয়েছেন এঁরা। এই মুহূর্তে এমন বেশ কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার রয়েছেন যাঁরা নিজেদের নামের পাশে ‘প্রাক্তন’ লেখার দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খুব শীঘ্রই ভারতীয় দল থেকে অবসর নিতে পারেন তারা।
হরভজন সিং
দেশ ও বিদেশের মাঠে দেশের সবথেকে সফল অফস্পিনার। গত ১৫-১৬ বছরে সব ধরণের ফরম্যাটে ভারতের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন অভিজ্ঞ এই অফ স্পিনার। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আবির্ভাবের পরই জাতীয় দলে তাঁর জায়গা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেকের পর এখনও অবধি ২৩৬ ওয়ানডে তে তাঁর শিকার ২৬৯ উইকেট এবং ১০৩ টেস্টে ৪১৭ উইকেট। কিন্তু অশ্বিন জমানায় গত এক বছর ধরে এই দুই ফরম্যাটে ব্রাত্য। শেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৫ সালের অক্টোবরে মুম্বইয়ে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। আর টেস্ট, ওই বছরই আগস্টে গলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।
যদিও টি-২০ তে ২০১৬তে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ সিরিজে ফের ডাক পাওয়ার পর টি-২০ এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেও জায়গা ধরে রেখে ছিলেন। তবে টি-২০ এশিয়া কাপের পরে তিনি কোনোদিনই ভারতীয় একাদশে স্থান পাননি। ২৮টি টি-টোয়েন্টি আর্ন্তজাতিকে হরভজন ২৫টি উইকেট দখল করেছিলেন। অশ্বিন, কুলদীপ, চহেলসহ তরুণদের জামানায় ভারতীয় দলে যে তাঁর প্রয়োজন ফুরিয়েছে, সেই দেওয়াল লিখন ভাল মতোই পড়ে ফেলেছেন টার্বুনেটর। তাই ক্রিকেট মহলের ধারণা খুব শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরটা নিয়েই ফেলবেন ভাজ্জি।
ইরফান পাঠান
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়কত্বে ভারত যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিল তার অন্যতম কারিগর ছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটিয়ে অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন বরোদার এই পেসার। কিন্তু খারাপ ফর্ম, চোট আঘাত তাঁর কেরিয়ারটাই শেষ করে দিল। ২০১২ সালে শেষবার জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল ২৯ টেস্টে ১০০ উইকেট, ১২০ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৭৩ উইকেট এবং ২৪ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ২৮ উইকেটের মালিক ইরফান পাঠানকে। বর্তমানে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে জম্মু-কাশ্মীরের মেন্টারকাম খেলোয়াড়।
ইউসুফ পাঠান
অনেকেই তাঁর মধ্যে শ্রীকান্ত, সেওয়াগের ছায়া দেখতেন। ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে অভিষেক। তাঁর বিধবংসী ব্যাট ভারতকে অনেক হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছে। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস ও নাইটরাইডার্সের হয়েও অনেক সময় ত্রাতার ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে দল থেকে ব্রাত্য হয়ে যান। ২০১২ সালে শেষ আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। আর শেষ ওডিআই ২০১২ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বর্তমান ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা নেই বললেই চলে।
সুরেশ রায়না
ভারতীয় দলের এক সময় মিডল অর্ডারে বড় ভরসা ছিলেন এই বাঁহাতি ক্রিকেটার। ২০০৫ এর জুলাইতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনি প্রথমবার জাতীয় দলে সুযোগ পান। ওই বছরই টেস্ট দলেও অভিষেক হয় তাঁর। টি-২০তে ভারতের হয়ে অভিষেক করেন ২০০৬এ। এখনো পর্যন্ত ভারতের হয়ে খেলেছেন ১৮টি টেস্ট, ২২৬টি ওয়ানডে, আর ৭৮টি টি-২০। ১৮টি টেস্টের ৩১টি ইনিংসে ২৬.৫ গড়ে তিনি মোট ৭৬৮ রান করেন। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরি এবং সাতটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। অন্যদিকে ২২৬টি ওয়ানডেতে তিনি ৩৫.৩ গড়ে মোট ৫৬১৫ রান করেছেন। এর মধ্যে ৫টি সেঞ্চুরি এবং ৩৬টি হাফসেঞ্চুরি শামিল রয়েছে। ৭৮টি টি-২০তে রায়না ভারতের হয়ে ২৯.২ গড়ে মোট ১৬০৫ রান করেছেন। এর মধ্যে একটি সেঞ্চুরি এবং ৫টি হাফসেঞ্চুরি শামিল রয়েছেন। বর্তমানে ভারতীয় দলে তারুণ্যের প্রাধান্য দেখে বলা যায় জাতীয় দলের দরজা তার কাছে বন্ধ হতে চলেছে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি
ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক এবং বর্তমানে ভারতীয় দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিং ধোনির অবসরের জল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশ্বকাপ ২০১৯ এরপর থেকেই আশা করা হয়েছিল যে ৩৮ বছরের ধোনি এবার অবসর নেবেন। কিন্তু তা হয়নি। ভারতের সর্বকালীন সেরা এই ফিনিশার আর আগের মত ব্যাট হাতে বিস্ফোরক ইনিংস খেলতে পারছেন না, গত ইংল্যান্ড সফরের পর থেকেই স্লো ব্যাটিংয়ের জন্য বারবার সমালোচিত হচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ঋষভ পন্থ, সঞ্জ্যু স্যামসন এবং ঈশান কিষাণের মত তরুণ উইকেটকিপাররা ভারতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। এই অবস্থায় নির্বাচকরাও ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকেই দেখতে চাইছেন। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই ধোনি নিজের অবসর ঘোষণা করবেন।