ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারতীয় দলের হয়ে কতটা উচ্চতা সেটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় দলের হয়ে একজন সম্পূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে অভূতপূর্ব যোগদান দিয়েছেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীত ক্রিকেট দলের একজন বড়ো ম্যাচ উইনার হিসেবে প্রমানিত হয়েছেন।
সেই সাতটি ম্যাচ যখন ধোনির কারণে ভারতকে পড়তে হয়েছে হারের মুখে
একজন অধিনায়ক হিসেবে এমএস ধোনি যত বড়ো যোগদান থেকেছে তেমনটাই একজন ব্যাটসম্যান হিসেবেও থেকেছে। এমএস ধোনি ভারতের হয়ে না জানি কত ম্যাচে ফিনিশারের ভূমিকা পালন করেছেন। যার ফলে তাকে বেস্ট ফিনিশারও মনে করা হয়। কিন্তু এমনটা নয় যে এর মধ্যে স্বয়ং ধোনি কখনো হারের কারণ হননি। বেস্ট ফিনিশার হিসেবে পরিচিত এমএস ধোনি নিজের কেরিয়ারে বেশ কয়েকবার শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেও ভারতকে ম্যাচ জেতাতে পারেননি।
৭. রাজকোট ওয়ানডে বনাম শ্রীলঙ্কা – ২০০৭
মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের হয়ে শুরু থেকেই নিজের প্রতিভা দেখাচ্ছেন। ধোনি নিজের কেরিয়ারের শুরুতে দলের প্রধান অংশ হয়ে উঠেছিলেন আর তিনি ২০০৭ পর্যন্ত দলে নিজের ভালো জায়গা করে ফেলেছিলেন। ২০০৭ এ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতের ওয়ানডে সিরিজের কথা যেখানে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ রাজকোটে খেলা হয়েছিল। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৫৮ রান করে। এর জবাবে ভারত ৩০ ওভারে ১৬৯ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ধোনি ব্যাট করতে নামেন। এই জুটি ৯৪ বলে ৬৬ রান যোগ করে ভারতকে ভালো জায়গায় নিয়ে জান। ভারতের ৩৮ রানের দরকার ছিল তখন কার্তিক আউট হয়ে যান। ধোনি ক্রিজে ৪৩ রান করে উপস্থিত ছিলেন। যখন ভারতের শেষ ওভারে ১১ রানের প্রয়জন ছিল তো প্রথম তিন বলের পর ধোনির কাছে স্ট্রাইক আসে। চতুর্থ বলে ধোনি বাউন্ডারি মারেন। শেষ ২ বলে যখন ৬ রানের দরকার ছিল আর ভারত এই ম্যাচ ৫ রানে হেরে যায়।
৬. নিউজিল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচ-২০১২
ভারতের হয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রথমবার টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক প্রমানিত হন। ধোনির শৈলী টি-২০র ফর্ম্যাটে যথেষ্ট সফল। কিন্তু তিনি ২০১২য় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমন একটা ম্যাচ জেতাতে পারেননি যেখানে তিনি জয় এনে দিতে পারতেন। এই বছর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলা হয়েছিল, যার প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ১৬৭ রানের স্কোর করে। এর জবাবে ভারত বিরাট কোহলির ৪১ বলে দুর্দান্ত ৭০ রানের সাহায্যে ভালো পরিস্থিতিতে ছিল। কোহলির আউট হওয়ার পর ভারতকে ৪০ বলে ৪৮ রান করতে হত আর ধোনি ব্যাট করার জন্য মাঠে নামে। যুবরাজ ১১ বলে ২০ রান করে ভালো কাজ করেন। কিন্তু ধোনিকে যথেষ্ট সংঘর্ষ করতে দেখা যায় আর শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতকে জয় এনে দিতে পারেননি। ধোনি ১৫ বলে ৯ রানই করতে পারেন আর ভারতকে হারের মুখ দেখতে হয়।
৫. ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচ- ২০১৪
ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে যতই ধোনি টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ বার করুন সেই সঙ্গে তিনি কিছু ম্যাচে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা সত্ত্বেও জেতাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২০১৪ সালে ভারতীয় দল ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিল। যেখানে টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর ১টি টি-২০ ম্যাচ খেলা হয়। এই ম্যাচে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ১৮০ রান করে। এর জবাবে ভারত বিরাট কোহলির ৪১ বলে ৬৬ রানের সুবাদে ভালো শুরু করেছিল। ভারতের যখন ৩৪ বলে ৫০ রানের প্রয়োজন ছিল তখন ধোনি ব্যাট করতে নামেন। ধোনি প্রথম ১০টি বলে ৯টি সিঙ্গলই নিতে পারেন। ভারতের যখন শেষ ওভারে ১৭ রানের দরকার ছিল তো ধোনি প্রথম বলে ছক্কা মারেন আর দ্বিতীয় বলে ২ রান নেন। তৃতীয় বল ধোনি মিস করেন। আর শেষ ২ বলে ৫ রানের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ধোনি কেবল ১ রানই করতে পারেন আর ভারত সেই ম্যাচ হেরে যায়।
৪. দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কানপুর ওয়ানডে -২০১৫
ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে মহেন্দ্র সিং ধোনি একটি বড়ো নাম থেকেছেন। ধোনি ওয়ানডেতে ভারতকে বেশকিছু ম্যাচ ফিনিশ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৫য় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একটি ঘরোয়া ওয়ানডে সিরিজে কানপুরের ম্যাচে তিনি এমনটা করতে পারেননি। এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৩০৩ রান করে। ভারত এমনিতে তো দ্রুতগতির শুরু করতে তো পারেনি কিন্তু তা ঠিকঠাকই ছিল। যখন ধোনি ব্যাট করতে নামেন তো ভারতকে ৬০ বলে ৯০ রান করতে হতো। পরবর্তী ৬ ওভারে রোহিত শর্মার সঙ্গে ধোনি ৫৫ রান যোগ করেন। রোহিত শর্মা মাত্র ২০ বলে ৪২ রান করেন। অন্যদিকে ধোন ১৬ বলে মাত্র ৯ রানই করতে পারে। ধোনি শেষ ১০ বলে অবশ্যই ১৮ রান যোগ করেন, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ ভারতের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ভারত এই ম্যাচ ৫ রানে হারে, যেখানে শুরুর দিকে ধোনির স্লো ব্যাটিং দায়ী ছিল।
৩. জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হারারে টি-২০ ম্যাচ – ২০১৬
মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতেরই নন বরং যতই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ভালো ফিনিশার হন কিন্তু কখনো কখনো তিনি এমন ইনিংস খেলে বসেন যা ভারতীয় দলের হারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এইভাবে ২০১৬য় জিম্বাবীয়ে সফরে টি-২০ সিরিজেও ধোনি হারারেতে একটি ম্যাচ হেরেছিলেন। এই ম্যাচে জিম্বাবোয়ে ১৭০ রান করে। এরপর ভারতীয় দল ব্যাত করতে নামে। যখন ধোনি ব্যাট করতে পৌঁছন তখন ভারতের ৪৬ বলে ৮১ রানের দরকার ছিল। কিন্তু তিনি দ্রুত গতিতে রান করতে ব্যর্থ হন। অক্ষর প্যাটেল ৯ বলে ১৮ রান করেন কিন্তু ধোনি এই ম্যাচে ১৯ বলে মাত্র ১৭ রানই করতে পারেন আর ভারত ২ রানে ম্যাচ হেরে যায়।
২. ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচ – ২০১৬
ভারতীয় দলের হয়ে ধোনি বড়ো যোগদান দিয়েছেন, এতে কোনো দ্বিমত নেই, কিন্তু ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০১৬য় একটি টি-২০ ম্যাচে ধোনি ভীষণই অবাক করে দেওয়ার মতো ব্যাটিং করেন। ওয়েস্টইন্ডিজ আমেরিকায় খেলা হওয়া এই টি-২০ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২৪৩ রান করে। যার জবাবে ভারত ধামাকেদার মেজাজে শুরু করেছিল। ভারতের হয়ে কেএল রাহুল আর রোহিত শর্মা দারুণ ব্যাট করেন। কেএল রাহুল দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন আর লক্ষ্য ভীষণই সহজ করে দেন। ভারতের শেষ ওভারে ৮ রানের প্রয়োজন ছিল। ধোনি ক্রিজে ছিলেন। ধোনি অবশ্যই ২৫ বলে ৪৩ রান করেন, কিন্তু ভারত ১ রানে ম্যাচ হেরে যায়।
১. ওয়েস্টইন্ডিজের বিরুদ্ধ অ্যাণ্টিগুয়া ওয়ানডে -২০১৭
ভারত আর ওয়েস্টইন্ডিজের মধ্যে ২০১৭য় ওয়েস্টইন্ডিজ সফরে একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয়। ২০১৭র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ভারত ওয়েস্টইন্ডিজ সফরে যায় যেখানে তিন ম্যাচের সিরিজ ভারত ২-০ এগিয়ে ছিল। তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচ আণ্টিগুয়াতে খেলা হয়ছিল যেখানে ওয়েস্টইন্ডিজ মাত্র ১৮৯ রান করে। এরপর ভারত অজিঙ্ক রাহানের ৯১ বলে ৬০ রানের সাহায্যে এক সময় ঠিকঠাকভাবে জয়ের রাস্তায় ছিল। ভারতের শেষ ১৫ বলে ১৭ রানের প্রয়োজন ছিল। ধোনি ১০৯ বলে অবশ্যই ৫০ রান করতে সফল হন, কিন্তু শেষ ২ ওভারে জরুরী ১৬ রান করতে পারেননি। ভারত শেষে ১১ রানে ম্যাচ হেরে যায় আর সিরিজ ২০১ ফলাফলে জেতে।