পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ শুরু করার জন্য় ভারতকে জোর করে রাজি করানোর কোনও এক্তিয়ার বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা ইন্টারন্য়াশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এর নেই। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) লাহোরে এই কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আইসিসি‘র মুখ্য় কার্যনির্বাহী আধিকারিক ডেভ রিচার্ডসন। পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ফেরাতে লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ চলছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্য়াচের টি-২০ সিরিজের শেষ ম্য়াচে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুখোমুখি হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ইলেভেন। সেই উপলক্ষ্য়ে আইসিসি‘র উচ্চ-পদস্থ কর্তা এখন পাকিস্তানে।
রিচার্ডসন পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তুলনায় আইসিসি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, ”ভারত যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে রাজি না থাকে, আইসিসি কোনও মতেই জোর করতে পারে না।” তবে আইসিসি‘র সিইও কোনও ধোঁয়াশা না রেখে এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা দুই প্রতিবেশীর দেশের মধ্য়ে সৌহার্দ্রের সম্পর্ক দেখতে চায়। আর এজন্য় আইসিসি দুই দেশের বোর্ডের সদস্য়দের কোনও রকম আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার পদক্ষেপেরও একেবারেই বিরোধী।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে রিচার্ডসন বলেন, ”আপনাদের একটা ব্য়াপার বুঝতে হবে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সবসময় দু‘টি দেশের ক্রিকেট বোর্ডের পারস্পরিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করে। আইসিসি ভারত-পাকিস্তানের মধ্য়ে দ্বিরাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ দেখতে আগ্রহী। কিন্তু, দুই দেশের মধ্য়ে রাজনৈতিক অশান্তির কারণে সম্পর্ক ভালো নয়। দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ সবসময় দু‘দেশের বর্তমান সুসম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।” তবে, আইসিসি‘র ইভেন্টে ভারত ও পাকিস্তান যদি এক গ্রুপে থাকে, সেক্ষেত্রে আইসিসি দু‘দেশকে জোর করতে পারে।
২০০৮ সাল থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনওরকম দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজে অংশ নেওয়ার ব্য়াপারে একটানা আপত্তি জানিয়ে আসছে ভারত। ২০১৪ সালে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড মৌ (মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্য়ান্ডিং) স্বাক্ষর করলেও, ভারত ওই চুক্তির মর্যাদা রাখছে না বলে আইসিসি‘র ডিসপুট রেজোলিউশন কমিটি‘র কাছে মামলা ঠোকার জন্য় তৈরি হয়ে আছে পাক ক্রিকেট বোর্ড। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করতে চায় তারা। এব্য়াপারে আইসিসি‘র পক্ষও পরিষ্কার করে দিয়েছেন রিচার্ডসন। ”আমরা জানি, পিসিবি কোনও নিরপেক্ষ দেশের মাটিতে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ করানোর ব্য়াপারে প্রস্তাব দিয়েছে বিসিসিআই‘কে। বিসিসিআই তাতে রাজি নয়। এজন্য় পিসিবি আইসিসি‘র কাছে মামলা করতে চায়। আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করতে চায় বিসিসিআই‘য়ের কাছে। কিন্তু, আইসিসি এব্য়াপারে নিরপেক্ষ থাকতে চায়।” তবে রিচার্ডসন পরোক্ষে পিসিবি‘কে বুঝিয়ে দিয়েছেন আইসিসি‘তে বিসিসিআই থেকেই সবচেয়ে বেশি টাকা আসে। তাই ভারতীয় বোর্ডকে কোনও মতেই চটাতে নারাজ আইসিসি। ”ভারতের কারণে আইসিসি‘র অনেক বেশি ব্য়বসায়িক মুনাফা হয়। তবে, বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা হিসেবে আইসিসি সব সদস্য় দেশের বোর্ডকেই সমান চোখে দেখে। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত কোনও মতেই পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে রাজি হবে না। আর আইসিসি এনিয়ে জোরও করবে না।”
পিসিবি‘র প্রধান নজম শেঠি বলছেন, তাঁরা আইসিসি‘র কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি কমিটি গড়া হোক নিরপেক্ষ দেশের তিন সদস্য় নিয়ে। তাদের আইনজীবী কি বলছেন, কমিটি তা শোনার পর বিচার করুক, পিসিবি‘র পক্ষ যুক্তিগ্রাহ্য় কি না। শেঠির আরও বক্তব্য়, ”ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ভারত তাদের কোনও ক্রিকেটারকে পাঠায়নি। কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার খেলতে এলে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর উদ্য়োগ আরও প্রচার পেত।” পিসিবি প্রধানের এই বক্তব্য়ের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিসি‘র সিইও‘র জবাব, ”বিশ্ব একাদশে ভারত তাদের কোনও ক্রিকেটারকে পাঠায়নি কেন, এটা বিসিসিআই‘য়ের ব্য়ক্তিগত ব্য়াপার। দু‘দেশের রাজনৈতিক বিবাদের কারণে বিশ্ব একাদশের কোচ অ্য়ান্ডি ফ্লাওয়ার‘ও বিসিসি‘কে এনিয়ে কোনওরকম অনুরোধ জানাননি। অবশ্য়ই কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টে অংশ নিলে আরও বেশি লোকজনের নজরে পড়ত। কিন্তু, নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা নিয়েও আরও সমস্য়ায় পড়তে হতো।”