ছাব্বিশ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যখন গল টেস্টে পাঁচদিনের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে অভিষেক হয়, ক্রিকেটার হিসেবে হার্দিক পান্ডিয়া কোনও সাড়া জাগানো নাম নন। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদা জার্সি গায়ে তেমন কোনও আহামরী পারফরম্য়ান্স ছিল না। রঞ্জি ক্রিকেটে খুব নামডাক নেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কোনও শতরান করেননি। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে টি-২০ ম্য়াচ খেলেই যা পরিচিতি। ওই আইপিলের সূত্রেই মারাকাটারি ক্রিকেট খেলতে পারেন, তা জানাজানি। গত বছর নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে অক্টোবরে একদিনের আসরে অভিষেক হলেও, টেস্ট ক্রিকেটে ডাক পেতে আট-নয় মাস কেটে গিয়েছে। পাঁচদিনের আসরে তিনি যে সফল হবেন, কেউই আশা করেননি। এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা দল দুর্বল হলেও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করা সবসময়ই আলাদা ব্য়াপার। গলে সুযোগ পেয়েই তা লুফে নিয়েছেন হার্দিক। সবাইকে ভুল প্রমাণ করে ৪৮ বলে অর্ধশতরান করে বুঝিয়ে দেন, টেস্টের আসরে টিকে থাকার মতো রসদ তাঁর মধ্য়ে আছে। বল হাতেও একটি উইকেট তুলে নেন অভিষেকের মঞ্চে।
তারপর ক্য়ান্ডিতে যে খেলাটা খেললেন, তা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শতরান করার পাশাপাশি করুণারত্নের একটি ওভারে ছাব্বিশ রান করে নেন হার্দিক। নজিরের বিচারে ঐতিসাসিক। কেউ ভাবতেই পারেননি, হার্দিক এতটা ভয়ঙ্কর ব্য়াটসম্য়ান। ভারত শচীন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, বিরাট কোহলির মতো বিশ্বত্রাস ব্য়াটসম্য়ান উপহার দিয়েছে। সেই তাঁরাও এমন কীর্তি কোনওদিন করে দেখাতে পারেননি। অলরাউন্ডার হয়েও হার্দিক ভারতের প্রথম ব্য়াটসম্য়ান যিনি এক ওভারে এত রান করেছেন একা। আর তারপরেই পান্ডিয়া এখন আলেচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।
ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি হার্দিকের পারফরমেন্স খুব খুশি। তাঁর দলের এই তরুণ তুর্কীকে ইংল্য়ান্ডের বেন স্টোকসের তুলনা করেছেন। বিরাটের ভবিষ্যদ্বাণী, আগামিদিনে ভারতীয় ক্রিকেটের তুখোড় অলরাউন্ডার হয়ে উঠবেন হার্দিক। পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কাকে ইনিংস ও ১৭১ রানের বিশাল ব্য়বধানে হারিয়ে তিন ম্য়াচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে ভারত। প্রথম ইনিংসে ৪৮৭ রান তোলার আগে একসময় ভারতের স্কোর ছিল ৩৩৯ রান সাত উইকেটের বিনিময়ে। ঋদ্ধিমান সাহা প্য়াভিলিয়নের পথ ধরার পর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন বিরাট। সেখান থেকে ভারতকে টেনে তোলেন হার্দিক। আন্তর্জাতিক আসরে চাপ নিতে যে তিনি পারেন, সেটা ভালো করে সমালোচকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
ক্য়ান্ডি টেস্টের পর হার্দিক সম্পর্কে বিরাট বলেন, ”হার্দিককে নিয়ে বেশি কিছু বলার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। ওর পারফরমেন্সই বলে দিয়েছে, যা বলার। ওর সাদামাটা হাবভাব দেখে অনেকের অনেক কিছু মনে হতে পারে, কিন্তু ড্রেসিং রুমের ভেতর ওর প্রতিভা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। ও যেমন, ওকে তেমনই থাকতে দিতে চাই আমরা। একটা কথা বলতেই হবে, যে ক্রিকেটার অভিষেক টেস্টে আট নম্বরে ব্য়াট করতে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করতে পারে, তার মধ্য়ে স্পেশাল কিছু ব্য়াপার আছে। আর পাল্লকেলেতে ৩২০ রানে ৬ উইকেট ছিল ভারতের। সেখান থেকে ও দলকে টেনে নিয়ে গিয়েছে। এটা কোনও রকম ফাটকা খেলা নয়। হার্দিক মাথা খাটিয়ে টেইলএন্ডারদের সঙ্গে ব্য়াট করে। ওটাই ওর সবচেয়ে বড় সম্পদ। হার্দিক দলে আসায় প্রথম একাদশে ব্য়ালান্স এসেছে। ব্য়াট করতে পারে, ফিল্ডিং দুর্দান্ত, আবার বল হাতেও মোক্ষম সময়ে উইকেট তুলে নিতে পারে। টিমের সকলেরই হার্দিকের ওপর একশো কুড়ি শতাংশ আস্থা আছে।”