জুলাইয়ের প্রথম দিকে শুরু হয় ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের ইংল্যান্ড সফর। ইতোমধ্যে টি-২০, ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে দুইদল শুরু করেছে টেস্ট সিরিজ। টেস্ট সিরিজেরও শেষ হয়ে গেছে তিনটি ম্যাচ। যার মধ্যে প্রথম দুই টেস্ট স্বাগতিক ইংল্যান্ড জিতে নিলেও তৃতীয় টেস্টে ২০৩ রানের বিশাল ব্যবধানে ‘থ্রি লায়ন্সদের’ হারায় বিরাট কোহলির দল।
তৃতীয় টেস্ট বড় ব্যবধানে জিতলেও ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকরা চোখ সরাননি প্রথম দুই টেস্ট থেকে কেননা প্রথম টেস্টে মুরালি বিজয়ের ব্যাট হাতে ২০ ও দ্বিতীয় টেস্টে শূন্য রানে আউট হওয়া খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি নির্বাচকরা। যার ফলে কপাল খুলেছে তরুণ হনুমা বিহারীর।
২০১২ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করে সবার নজরে আসেন বিহারী। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে গেছেন ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে, সাম্প্রতিক সময়ে খেলেছেন ভারত ‘এ’ দলের হয়েও। অন্যদিকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৩ ম্যাচ খেলে প্রায় ৬০ গড়ে করেছেন ৫১৪২ রান যার মধ্যে ছিল ১৫টি সেঞ্চুরি। তাছাড়া ‘এ’ দলের হয়ে উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৪৭ ও একই দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ বিপক্ষে খেলেন ৫৪ বলে ১৪৮ রানের ইনিংস।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান করা
১৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদের হয়ে অভিষেক হয় বিহারীর। অভিষেকের পর থেকে এই ফরম্যাটে ৬৩ ম্যাচে ব্যটিং করে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি গড়ে তিনি রান করেছেন ৫১৪২। এই রান করতে অবশ্য তিনি খেলেছেন ১৫টি শতক ছাড়ানো ও ২৪ অর্ধশতক ছাড়ানো রানের ইনিংস। এমনকি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তার গড়ই সবচাইতে বেশি। ২০১৭-১৮ রঞ্জি ট্রফিতে অন্ধ্র প্রদেশের হয়ে ৬ ম্যাচে ৯৪ গড়ে ৭৫২ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে তার ক্যারিয়ার সেরা ৩০২ রানের ইনিংসও।
পরিচিত ইংলিশ কন্ডিশন
চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট হারের পেছনে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাই দায় দেখছেন ইংলিশ কন্ডিশনের সাথে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতে না পারার কারণকে। তবে ভারতের জয়ের বাধার কারন যদি হয় ইংলিশ কন্ডিশন তাহলে সেই ভাবনা ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাথা থেকে মুছে দিতে পারেন বিহারী।
সম্প্রতি নর্দাম্পটনে উইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৪৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা ছয় ম্যাচে তার রানসংখ্যা ৪১০। এই রান তিনি করেছেন ৫১ গড়ে তিনটি অর্ধশতক হাঁকানোর মধ্য দিয়ে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হল ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘শেফার্ড নেইম এসেক্স লিগ’এ হাটন সিসি’র হয়ে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি হাঁকিয়েছেন ৬টি সেঞ্চুরিও।
বল হাতে দলকে সাহায্য করতে পারেনঃ
হনুমা বিহারি অফস্পিন করতে পারেন যা দলের স্পিন আক্রমণকে আরো শক্তিশালী করবে। এছাড়া সে দলে থাকলে অধিনায়ক কোহলির জন্য অতিরিক্ত অপশন থাকবে বোলিংয়ের জন্য। যার ফলে নিয়মিত পেসারদেরকে মাঝের ওভার গুলোতে বিশ্রাম দিয়ে তাকে দিয়ে বোলিং করাতে পারবেন।
হনুমা তাঁর ৬৩ ম্যাচের প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ১৯ উইকেট শিকার করেছেন। এমনকি আইপিএলে গেইলের উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন।
মিডল অর্ডারে সমস্যার সমাধান
চলমান সিরিজে নির্বাচকদের বরাবরই ঘাম ঝরেছে কপালে মিডল অর্ডারের ব্যাটিং নিয়ে।বিহারীই হতে পারেন নির্বাচকদের সেই ঘাম মোছার কারণ। সাবেক ক্রিকেটার তথা নির্বাচকরা মিডল অর্ডারে বিহারীর মতই কাউকে খুঁজছেন যিনি বিরাট কোহলির পরে মাঠে নেমে দলের রানের চাকা সচল রাখতে পারবে।
তাঁর সামর্থ্য
মাঠের চারদিক দিয়েই বল বাইরে পাঠানোর যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে তার এবং সেটা পিচের যে প্রান্ত থেকেই হোক না কেন। পাশাপাশি কাট ও পুল শট খেলায়ও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন ২৪ বছর বয়সি এই ব্যাটসম্যান। বিহারী সম্পর্কে ভারত ‘এ’ ও অনুর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ সনাথ কুমার বলেন, “সে (হনুমা বিহারী) সব দিকেই ব্যাট চালাতে পারে এবং উইকেটের দুইদিক থেকেই সে এটা পারে, এটা ব্যাক-ফুটের দ্বারা সে করে থাকে।” তিনি আরও বলেন “ভাল লেন্থই হচ্ছে তার প্রথান শক্তিমত্তা, এটাই তাকে বেশি সময় দেয় শট খেলার জন্য”।