শুক্রবার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ধরাশায়ী হয়েছে গোটা পাকিস্তান দল।টেন্টব্রিজে সরফরাজদের লজ্জাজনক পারফরম্যান্স এর পর ইতিমধ্যে তাদের সমালোচনায় মেতেছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।এমন একটা সময় প্রাক্তন তারকা পাক পেসার ওয়াকার ইউনিস দাড়ালেন দলের পাশে।
১৯৯২ এর বিশ্বকাপে শুরুটা ঠিক এমন ভাবেই হয়েছিলো ইমরান খানের দলের।সেইবার কেই ভাবতে পারেনি শেষ অবধি চ্যাম্পিয়ান হয়ে দেশে ফিরবে পাক দল।এইদিন ফের সেই কথাই ম্যাচের পর মনে করিয়ে দিলেন ওয়াকার ইউনুস।
এই বিষয়ে তিনি লিখেছেন, ” আমাদের একটা বিষয়ে মাথায় রাখা উচিত এই টুর্নামেন্ট অনেক লম্বা।এখনো অনেক খেলা বাকি পাকিস্তানের।তাই এখনই এবিষয়ে কিছু বলাটা বোকামি হবে “।
এদিন নিজের কলমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ওয়াকার, তার বক্তব্য, ” এমন দারুন পারফরম্যান্স এর জন্য বাহবা প্রাপ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের।যেভাবে তার শর্ট বলে শেষ করে দিলো পাকিস্তানকে তা যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবি রাখে ” ।
প্রশংসা করলেন তারকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের।” আন্দ্রে রাসেল তার প্রথম তিন ওভারে অসাধারণ বোলিং করেছেন।মাত্র কয়েক ওভার বল করলেও কাজের কাজটা করে দেখিয়েছে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য “।
১৯৯২ এর প্রসঙ্গ তুললেও বাস্তবের মাটিতেই পা রেখে চলছেন ওয়াকার।জানিয়েছেন, ” ১৯৯২ এর বিশ্বকাপে আমরা শুরুতে ধাক্কা খেলেও ,পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাড়িয়েছিলাম।কিন্তু আজ ২৭ বছর পর ফের সেই একই প্রসঙ্গ তুলে কোনও লাভ নেই, কারন এইবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা ” ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগামী ম্যাচে ফের আরেক কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে পাকদলের জন্য।এইবারের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সোমবার টেন্টব্রিজে মুখোমুখি হতে চলেছে সরফরাজরা।প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপে খেলতে আসার অনেক আগেই ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলো পাক দল।খেলেছিলো মর্গ্যানদের বিপক্ষে একদিবসীয় সিরিজ, যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছিলো সরফরাজরা।এখন এমন শোচনীয় হারের হ্যাং ওভার কাটিয়ে সোমবার মর্গ্যানদের বিরুদ্ধে কি করে সরফরাজরা, এখন সেইটাই দেখার।
গতকাল, নটিংহ্যামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে লজ্জাজনক হারের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান, ম্যাচের পর থেকেই ট্রোল হওয়া শুরু হয়েছে সরফরাজ কে নিয়ে ,তার কিছু বলা কথা কে কেন্দ্র করে , ম্যাচের আগে পাক অধিনায়ক বলেছিলেন, ” আমাদের নিয়ে কেউ তেমন কোনও আলোচনা করছে না, সবাই আমাদের বলছে আনপ্রেডিক্টেবল।আর এই বিষয়টাই বিপক্ষের কাছে আমাদেরকে ভয়ংকর করে তুলছে।সবাই আমাদের কে ভয় পাওয়া শুরু করেছে ” । স্বাভাবিক ভাবে এদিন ম্যাচে হারার পর থেকেই সকলে সরফরাজের এই মন্তব্য কে কেন্দ্র করে ট্রোল করা শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, নটিংহ্যামে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ধসে পড়লো পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ।এদিন টসে জিতে প্রথমে পাকিস্তান কে ব্যাট করতে পাঠায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।এবং শুরু থেকেই ভগ্নদশা লক্ষ্য করা গেছে পাক ব্যাটিং লাইন আপের , এদিন নটিংহ্যাম জুড়ে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যানদের আশা – যাওয়ার পালা দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব।২১.৪ বলে শেষ হয়ে যায় পাক ইনিংস।
এদিন এই লজ্জাজনক পারফরম্যান্স এর ফের রেকর্ড বুকে নাম তুলে নিলো সরফরাজরা।১৯৯২ এর পর এটাই তাদের বিশ্বকাপে সবচেয়ে খারাপ প্রদর্শন।সেইবার এ্যডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯২ রানে শেষ হয়ে গেছিলো পাকিস্তানের ইনিংস।এরপর এটাই বিশ্বকাপে সবচেয়ে লজ্জাজনক পারফরম্যান্স।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোরের তালিকা
৭৪ বিপক্ষে ইংল্যান্ড
১০৫ বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১৩২ বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া
১৩২ বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড
১৩৪ বিপক্ষে ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগেই ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলো পাকিস্তান ক্রিকেট দল।এখানে এসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একদিবসীয় সিরিজ খেলেছিলো তারা।শুধু তাই নয়, এখানে এসে ইংল্যান্ডের কাছে শোচনীয় সিরিজ হারে সরফরাজরা।শুধু তাই নয়, এরপর ওয়ার্ম আপ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হার।সব মিলিয়ে ঋতিমতো শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিয়ে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেছিলো পাক দল।এবং শুরুতেই ঋতিমতো শোচনীয় অবস্থা প্রকট পাক দলের।
এদিন হয়তো তিন অংকের স্কোর লাইন পেরোতে পারতোনা পাকিস্তান।যদিনা রিয়াজ, আমির কিছুক্ষন ক্রিজে থাকতো ।এদিন পাক দলের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর ফাকার জামান এবং বাবর আজম।ওসানে থোমাসের চার উইকেট,হোল্ডারের তিন এবং রাসেলের দুই আর কট্রেলের এক উইকেটের উপর ভর করে পাকিস্তান কে শেষ করে ইন্ডিজ।
স্বাভাবিক ভাবেই এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিক ভাবেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলোতে ট্রোল শুরু হয় পাক দলকে নিয়ে।প্রথমে ক্রিকেট ভক্তরা তো ছিলো এরপর সেই দৌড়ে সামিল হয় দেশ বিদেশের ক্রিকেটারেরা।
২০১৭ এর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল পাকিস্তান।সেইবার ইংল্যান্ডের মাঠে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিলো সরফরাজরা।এবারও এমন কিছু করার আশা আছে তারা।ফেরাতে চায় ১৯৯২ এর বিশ্বকাপ স্মৃতি ।সেইবার প্রথম ছন্দে না থাকা ইমরান খানের পাকিস্তান শেষ অবধি ট্রফি নিয়ে ফিরে এসেছিলো দেশে।কিন্তু আশা থাকলেও এইবার ম্যাচে প্রতিফলিত হচ্ছে না সেই বিষয়টা অন্তত প্রথম ম্যাচের পর তাই বলা যায়।