ভদ্র লোকের খেলা ক্রিকেটে সব ফরম্যাট সমান গুরুত্ব বহন করলেও লঙ্গার ভার্সনে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করতে হয় প্রত্যেকটি ক্রিকেটারকে। অনেকের কাছেই স্বপ্ন হিসেবে থাকে সাদা পোশাকে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। অন্যদিকে এই ফরম্যাটে দ্বিশতক হাঁকনোও হয়ে থাকে ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি হিসেবে।
তবে এখানেও রয়েছে হতাশা। কেননা মাত্র ১ রানের জন্য এই ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে না পারাটা যেন একটু বেশিই আশাহত করে ক্রিকেটারদের। জেনে নেওয়া যাক এমনই ৫ জন তারকা ক্রিকেটারের নাম যারা টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ১৯৯ রানে গিয়ে আউট হবার দুর্ভাগ্য বরণ করে নিয়েছেন।
৫. লোকেশ রাহুল
গত কিছুদিন ধরে লাল বলে ধুঁকতে থাকা রাহুলের ব্যাটে চড়ে ইতিপূর্বে একাধিক ম্যাচে বড় সংগ্রহ পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালে ৫ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে যখন টিম ইন্ডিয়া সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত করে পঞ্চম টেস্ট খেলতে মাঠে নামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মইন আলির সেঞ্চুরিতে ৪৭৭ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় ইংলিশরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পার্থিব প্যাটেল ও করুণ নায়ারের সাথে জুটি গড়ে ৩টি ছক্কা ও ১৬টি চারের সাহায্যে ১৯৯ রান করে লোকেশ রাহুল প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আদিল রশিদের বলে আউট হয়ে। এই টেস্ট ভারত ৭৫ রানে জয়লাভ করলেও রাহুলের অপ্রাপ্তি যেন থেকেই যায়।
৪. স্টিভ স্মিথ
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং স্তম্ভ স্টিভ স্মিথ বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে রয়েছেন বাইরে। স্মিথের অধীনে থাকাকালীন ২০১৫ সালে অজিরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে সেই সিরিজে রাখা হয় দুইটি টেস্ট। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিবিয়ানরা টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলে মাত্র ১৬ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। অজি দলের কাপ্তানের ভূমিকায় থাকা স্মিথ দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন দেখেশুনে। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যখন ডাবল সেঞ্চুরির কাছে যান স্মিথ ১৯৯ রানে টেলরের ফাঁদে পা দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই ব্যাটসম্যান। এক ইনিংসে স্মিথের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর হচ্ছে এটি। অন্যদিকে ভারতের বিপক্ষে ২০১৪ সালে এক ইনিংসে ১৯০ রান করে আউট হন বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার খড়গে থাকা এই ব্যাটসম্যান।
৩. মহম্মদ আজহারউদ্দিন
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত আজহারউদ্দিন একা হাতে অসংখ্য ম্যাচ জিতিয়েছেন ভারতকে। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কা দল যখন ভারত সফরে আসে সেই সফরের সূচিতে থাকে তিনটি টেস্ট ম্যাচ। প্রথম টেস্টে টস জিয়ে লঙ্কানরা ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম ইনিংসে ৪২০ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে সুনীল গাভাস্কার ১৭৬ রান করে আউট হলে মজবুত ভিত পায় ভারত। পরবর্তিতে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে আজহারউদ্দিন তাঁর ব্যাটিং কারিশমা দেখাতে থাকেন। তবে ১৯৯ রান করে রত্নায়েকের পাতানো ফাঁদে পা দিলে প্রথম দ্বিশতক থেকে বঞ্চিত হন আজাহার। ঐ টেস্ট ম্যাচটির ফলাফল শেষপর্যন্ত ড্র হয়েছিল।
২. স্টিভ ওয়াহ
অজি ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় থাকা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান স্টিভ ওয়াহ অজিদের টেস্ট ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন বহুবার। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া দল যখন ক্যারিবিয়ান সফরে যায় তখন চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্টিভ ওয়াহ এর ১৯৯ রানের উপর ভর করে ৪৯০ রানের বড় পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়াহ ১৯৯ রানের ইনিংস খেলতে গিয়ে ২০টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। তবে ব্রায়ান লারার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১ উইকেটের জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১. সনাথ জয়াসুরিয়া
নিজের দিনে যেকোনো দলের বোলিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেয়ার সক্ষমতা নিয়ে মাঠে নামা জয়াসুরিয়া লঙ্কান ক্রিকেটের সেরাদের সেরা এতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু টেস্টই নয় সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন তাঁর পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে।
শচীনের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া লঙ্কা সফর করার সময় দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে টিম ইন্ডিয়া ৫৩৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ইনিংস ঘোষণা করলে জবাবে ব্যাট করতে নেমে রেকর্ড ৯৫২ রান করে শ্রীলঙ্কা। এই পাহাড়সম স্কোর গড়ার ক্ষেত্রে জয়াসুরিয়ার অবদান ছিল ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৪০ রান।
দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করে ৩৩২ রান সংগ্রহ করে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে টিম ইন্ডিয়া ৩৭৫ রান করে ৪৩ রানের লিড নেয়। লঙ্কানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২২৬ বল মোকাবেলা করে ১৯৯ রানের ইনিংস খেলে আউট হন জয়াসুরিয়া। মাত্র এক রানের জন্য দ্বিশতক মিস করার জন্য আজও হয়তো আক্ষেপে পুরছেন জয়াসুরিয়া।