জার্সি নাম্বার টেন নিয়ে ভাজ্জি যা বললেন, তাতে আরও উস্কে দিল বিতর্ক 1

চলতি সিরিজের চতুর্থ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্য়াচে গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছে নবাগত পেস বোলার শার্দুল ঠাকুরের। এই সিরিজে তাঁকে সুযোগ দেওয়ার জন্য় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সিরিজের মাঝপথে উড়িয়ে আনা হয়েছে তাঁকে। না হলে ওখানে ভারতীয় –এ দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেই দেশে ফিরে আসতেন তিনি। জাতীয় দলে খেলার একটা সুযোগ রাতারাতি শার্দুলকে ঘরে ঘরে পরিচিতি এনে দিয়েছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ম্য়াচে নজর কেড়েছেন বলা যাবে না। সাত ওভার বল করে ২৩ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য়। তবে, অভিষেকের মঞ্চেই শার্দুলের মুখ চেনা হয়ে ওঠার কারণ তাঁর পারফরম্য়ান্স নয়। যে জার্সি পরে মাঠে নেমে ছিলেন তার জন্য়। ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)-এর ভুলের কারণে। ভুলটা ছোটো না বড়, তার বিচার কে করবে, এখন সে নিয়ে নয়া জল্পনা শুরু হয়েছে। ক্রিকেট গড শচীন তেন্ডুলকর অবসর নেওয়ার পর বিসিসিআই বলেছিল, বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা নক্ষত্রকে সম্মানে জানাতে শচীনের দশ নম্বর জার্সিকে রিটায়ারমেন্ট দেওয়া হচ্ছে চিরকালের জন্য়। অর্থাৎ দশ নম্বর জার্সি পরে আর কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার ভারতের হয়ে কোনও দিন মাঠে নামবেন না। অথচ শার্দুল সেই দশ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামায় বেক্ষাপ্পা ক্রিকেট অনুরাগীরা। আর বিসিসিআইয়ের সেই ভুলের কারণে রোষের শিকার হতে হয়েছে নবাগত শার্দুল ঠাকুরকে। তাঁকে লক্ষ্য় করে অনেকে কড়া কথাও ছুঁড়ে দিয়েছেন।

শার্দুল ওই দশ নম্বর জার্সির যোগ্য় কি যোগ্য় নন, সে বলার সময় এখনও আসেনি। তবে, বোর্ডের এই ভুলে অভিষেকের মঞ্চে ক্রিকেটপ্রেমীদের এই অযাচিত ভুলের জন্য় ক্ষোভও প্রাপ্য় ছিল না ভারতের এই তরুণ ক্রিকেটারের। যদিও এটাও ঠিক ক্রিকেটার হিসেবে শার্দুলের জানা উচিত যে ওই দশ নম্বর জার্সি শচীনের সম্মানে ভারতীয় ক্রিকেটে অবসৃত। আর ক্রিকেটারদের পছন্দ অনুযায়ী তাঁদের জার্সিতে নাম্বার ব্য়বহার করতে দেয় বিসিসিআই। সেদিক থেকে শার্দুলের সমালোচনা হওয়া উচিত। তবে, ভারতীয় ক্রিকেটে দশ নম্বর জার্সির রিটায়ারমেন্ট নিয়ে দল থেকে বাদ পড়া অফস্পিনার হরভজন সিং যা বলেছেন, তা এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিতে পারে। কোনও বিদেশি ক্রিকেটার তা বললে মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু, শচীনের সঙ্গে বহুদিন ড্রেসিং রুম শেয়ার করা একজন ক্রিকেটারের মুখ থেকে এই ধরনের মন্তব্য় বেরিয়ে আসায় আশ্চর্য ক্রিকেট মহল।

ভাজ্জি বলেন, সবারই ব্য়ক্তিগত আবেগ থাকতে পারে। আমরা সবাই শচীন পাজিকে শ্রদ্ধা করি। শচীন অবসর নেওয়ার আগে অন্য় কেউ ওই জার্সি গায়ে চাপায়নি। ওই জার্সি চিরকাল অমর থাকবে। আর তাকে ঘিরে যে শ্রদ্ধা আছে চিরকাল একইরকম থাকবে। অন্য় কেউ ওই জার্সি গায়ে চাপালে সেই শ্রদ্ধা কোনওদিন কমে যাবে না। তবে, জার্সি নাম্বার টেনকে শচীনের নামে উৎসর্গ করা হবে কি না, তা বোর্ড ঠিক করবে। আর যদি তা হওয়ার থাকত, তাহলে ২০১৩ সালেই বোর্ড তা করে ফেলত। অন্য় কারও ওই রাজ্সি পরা নিয়ে শচীনকে জিজ্ঞাসা করা হলেও, এ নিয়ে আপত্তি আসবে না কোনও। একটি বেসরকারি সংবাদ মাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হরভজন এরপর বলেন, ব্য়ক্তিগতভাবে আমি তো কোনও ভুল দেখছি না, যদি অন্য় কেউ দশ নাম্বার জার্সি পরে খেলতে নামে। আমাদের উচিত তরুণদের ক্রিকেটারদের খেলতে উৎসাহিত করা যাতে সে ভালো খেলে, আর ভারত ম্য়াচ জেতে। শচীন যেমন ভারত হয়ে করে দেখাত। শার্দুলকে এভাবে সমালোচনায় বিদ্ধ করা একদম ঠিক হয়নি। অপ্রয়োজনীয়ভাবে ওকে বিতর্কে টেনে আনা হচ্ছে। এরপর আগামিকাল শুনব, লোকে বলছে বীরেন্দ্র সেহওয়াগের পঁয়তাল্লিশ নাম্বার জার্সি বা এমএস ধোনির সাত নাম্বার জার্সি পরেও কেউ খেলতে নামতে পারবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা তেন্ডুলকর দশ নাম্বার জার্সি পরলে সবাই তেন্ডুলকর হয়ে যাবে না। শচীনকে যেমন সবাই শ্রদ্ধা করে, সেই শ্রদ্ধাটা একই রকম থাকবে। আর শচীন যেমন শীর্ষে আছে, সেরকমই থাকবে। বোর্ড যখন পরতে অনুমতি দিয়েছে, তাহলে ওই জার্সি পরে মাঠে নামতে অসুবিধা কোথায়?”

আশ্চর্যের বিষয় ভাজ্জি যে দুজনের সঙ্গে শচীনের তুলনা করেছেন, তার মধ্য়ে বীরেন্দ্রে সেহওয়াগ একমসয়কার নামী ব্য়াটসম্য়ান হলেও তিনি দল থেকে বাদ পড়ার পর প্রায় নিঃশব্দে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। তার চেয়ে বড় কথা, বীরু ভালো ক্রিকেটার ছিলেন এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু তেন্ডুলকরের মতো কোনও দিনও গ্রেট ছিলেন না। আর ধোনি এখনও ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। ধোনি গ্রেট এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর খেলা ছাড়ার পর বোর্ড যদি তাঁকে সম্মানে জার্সি নাম্বার সেভেনকে রিটায়ারমেন্ট দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনে, তাহলে তখনও একই রকম বিতর্ক তৈরি হবে। আর শচীনের জার্সি নাম্বার টেনকে অবসর দেওয়ার সময় বিসিসিআই সাময়িক কথাটা সঙ্গে ব্য়বহার করেনি। সেই কারণে শার্দুল দশ নাম্বার জার্সি পরে মাঠে নামায় এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শচীন অবসর নেওয়ার আগে আর কেউ দশ নাম্বার জার্সি পরেনি। – ভাজ্জির এই মন্তব্য় একেবারে শিশুসুলভ। কারণ, তাঁর জানা উচিত, একই দলে যেমন একাধিক ক্রিকেটার এক নাম্বারের জার্সি পরে মাঠে নামতে পারেন না, তেমনি কোনও ক্রিকেটার সক্রীয়ভাবে খেলা চালিয়ে গেলে তিনি দলে থাকুক কি না থাকুক, অন্য় কেউ সেই নাম্বার ব্য়বহার করে মাঠে নামতে পারেন না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *