বেশ কয়েকদিন ধরেই আইসিসি ও বিসিসিআইয়ের মধ্যে রাজস্ব বন্টন ব্যবস্থার পুর্ণগঠনের জন্য টানাপোড়েন চলছিল। এই কারণে চূড়ান্ত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য জাতীয় দলের সদস্যদের প্রাথমিক নাম এখনও দেয়নি বিসিসিআই। এমনকী তাঁরা এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল না পাঠানোর হুমকিও দিয়েছিলেন। তবুও দুবাইতে হওয়া আইসিসির বিশেষ সাধারণ সভায় কী সমাধান সূত্র বেরোয় সেই দিকে তাকিয়ে ছিল ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু গত বুধবার দুবাইতে হওয়া এই বৈঠকে ভোটাভুটিতে ব্যাপক ভরাডুবি হয় বিসিসিআইয়ের। আইসিসির সিদ্ধান্তের পক্ষেই বেশিরভাগ ভোট পড়ে। এই ঘটনার পর আরও ক্ষীন হয়ে যায় ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যোগদানের আশা।
তবে যে কোনও ধরনের খারাপ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রধাণ কোচ অনিল কুম্বলে ও অধিনায়ক বিরাট কোহলির মতামত জানতে চাওয়া হবে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলেন, “খেলোয়াররাই হল দলের আসল সম্পদ। এবং দলের কোচ ও অধিনায়ক হলেন তাদের প্রতিনিধি। তাই এই ধরনের কোনও বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমরা কোচ ও অধিনায়কের মত জানতে চাইব। এছাড়া এইবছর এই টুর্নামেন্টে নিজেদের খেতাব রক্ষা করার লড়াইয়ে নামবে ভারত।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দল পাঠানো হবে কী না হবে সেই নিয়ে বোর্ডের বিভিন্ন সদস্যরাও দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখন সুপ্রীম কোর্টের দ্বারা নিযুক্ত এক প্রশাসনিক কমিটির হাতেই রয়েছে। বিনোদ রাইয়ের নেতৃত্বে এই কমিটিতে আরও চারজন রয়েছে। যেমন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সি কে খান্না, ভারপ্রাপ্ত সচিব অমিতাভ চৌধুরি, কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি।
ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে না থাকলে, সমস্যা হবে না বলে জানালেন এই পিসিবি কর্তা
একইভাবে, ২০১৪ সালেও তৎকালীন বিসিসিআই ও আইসিসি প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করার হুমকি দিয়েছিলেন। তখনও রাজস্ব ভাগের বিষয়ে কোনও এক সমস্যা হয়েছিল। এদিকে আইসিসির নয়া নিয়মে আগামী ২০১৬-২০২৩ সালের এই চক্রে টিভি প্রোডাকশন খরচ ও আইসিসির ব্যয়ভার বাদ না দিয়ে প্রায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসতে পারে। বর্তমান আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরের সুপারিশ অনুযায়ী আইসিসির টিভি প্রোডাকসন খরচ ও প্রশাসনিক ব্যয়ভার থেকে ৯৯ মিলিয়ন ডলার কমিয়ে আনা হোক। পাশাপাশি একটি ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড তৈরি করা হোক যা পরে কোনও কাজে আসতে পারে। এই পরিবর্তন ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আয়ের অনেকটাই কমে যাবে।
এই সমস্যা সমাধানের একটি খসরা তৈরি করেছিল শ্রীনিবাসন। কিন্তু তিনি নিজের বোর্ডের অন্যান্যদের বিরোধীতার ফলে সেই খসড়া পেস করতে পারেননি। আইসিসির বৈঠকে শ্রীনিবাসনেরই বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট পরে সেই অধিকারে নিষেধাজ্ঞা আনে। এদিকে বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ দুবাইতে অনেক চেষ্টা করলেও আখেরে কোনও লাভ হয়নি। শ্রীনিবাসন বৈঠকে না থাকার প্রভাবে বাংলাদেশও এবার ভারতের পক্ষে ভোট দেয়নি।
এই পরিস্থিতে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সুপ্রীম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসনিক কমিটিতে নেতৃত্বের বিরাট অভাব রয়েছে। এবং এই কমিটির সদস্যরা প্রকৃতভাবে সবকিছু সমাধানও করতে পারেন না। বিসিসিআইয়ের ওই সূত্র আরও বলেন, “কেউই ভবিষ্যতবানী করতে পারেন না কী হবে। কিন্তু এই স্পেশাল জেনারেল মিটিংয়ে বোর্ডের সবার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে।”