নির্বাচক কমিটির প্রধান পদ থেকে টি-২০ বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর চেতন শর্মাকে সরিয়ে দিয়েছিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ফের একবার আবেদন করেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে ঝুঁকি নিতে চায় নি ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাও। ফের চেতনকেই নিয়োগ করা হয়েছিলো প্রধান নির্বাচক পদে। আগের কমিটির বাকিদের ফেরানো না হলেও প্রধান নির্বাচকের কুরসীতে প্রত্যাবর্তন হয় চেতনের (Chetan Sharma)। কিন্তু সুখের হলো না দ্বিতীয় ইনিংস। দ্বিতীয় টার্মে মাসখানেকের মধ্যেই সরে যেতে হলো তাঁকে। সম্প্রতি এক বেসকরকারী টিভি চ্যানেলের গোপন ক্যামেরার সামনে মুখ খুলে ভারতীয় ক্রিকেটকে মহা বিতর্কের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন চেতন। ভিডিওতে দলের মহাতারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি (Virat Kohli), জসপ্রীত বুমরাহদের (Jasprit Bumrah) সম্পর্কে নানা আপত্তিজনক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে চেতনকে। তাঁর একের পর এক অভিযোগে রীতিমত কেঁপে উঠেছে গোটা ক্রিকেটদুনিয়া। চেতনের (Chetan Sharma) বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয় বোর্ড, সেই দিকেই তাকিয়ে ছিলেন সবাই। তবে BCCI আসরে নামার আগে নিজে থেকেই দায় স্বীকার করে সরে গেলেন তিনি। সংবাদসংস্থা ANI সূত্রে পাওয়া খবর অনুসারে বোর্ড সচিব জয় শাহ’কে (Jay Shah) নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। বিনাবাক্যব্যয়ে সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছে বোর্ড। জানিয়েছে এ এন আই। নয়া নির্বাচক কমিটি বেছে নেওয়া নিয়ে কিছুদিন আগেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো বোর্ড। চেতনের বিস্ফোরক মন্তব্য, ইস্তফা পর্বের পর নির্বাচক কমিটি নিয়ে ফের একবার ঝড় উঠবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
কি বলেছিলেন চেতন শর্মা ?

একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের গোপন ক্যামেরার সামনে মুখ খুলে শুধু নিজে বিপাকে পড়েন নি চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। পাশাপাশি ভাতীয় ক্রিকেটকেও ফেলেছেন ঘোর দুর্যোগের মধ্যে। তাঁর অভিযোগ গুলি যদি সত্যি হয়, তবে গত শতান্দীর নয়ের দশকের শেষদিকে যেভাবে গড়াপেটা বিতর্ক ভারতীয় ক্রিকেটকে কলুষিত করেছিলো, সেই স্তরের কলঙ্ক ফের ফিরতে পারে। ক্যামেরার সামনে চেতনকে বলতে শোনা গিয়েছে যে নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখতে নানা ধরনের ইঞ্জেকশন নাকি ব্যবহার করেন ভারতীয় ক্রিকেটার’রা। এমন সব পদার্থ তাঁরা সেবন করেন, যা ধরা পড়ে না ডোপ পরীক্ষায়। ভারতীয় বোর্ড নাকি সব জেনেও চুপচাপ রয়েছে এ নিয়ে। এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করে সমগ্র ক্রিকেটমহলকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন চেতন শর্মা (Chetan Sharma)। দীর্ঘদিন ভারতের সিনিয়র দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ শুনে পায়ের নীচের মাটি দুলে উঠেছে অনেকেরই। পেসার জসপ্রীত বুমরাহকে (Jasprit Bumrah) নিশানা করেছেন চেতন। বলেছেন, বুমরাহ নাকি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দেশের মাঠে টি-২০ সিরিজের আগে চোট লুকিয়েছিলেন। এতে হিতে বিপরীত হয়, এবং টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান তিনি। শিখর ধাওয়ান (Shikhar Dhawan), কে এল রাহুলদের (KL Rahul) মত ক্রিকেটারদের কেরিয়ারের স্থায়িত্ব আর কতদিন সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভারতীয় দলের তারকাদের মধ্যে যে ইগোর দ্বৈরথ রয়েছে তাও স্বীকার করে নেন চেতন। সঞ্জু স্যামসনকে লক্ষ্য করেও একাধিক আপত্তিজনক মন্তব্য করতে শোনা যায় তাঁকে। তবে নির্বাচক কমিটির প্রধানের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তাঁর নামে একের পর এক অভিযোগ করে গিয়েছেন চেতন।
চেতনের নিশানায় ছিলেন কোহলি-

সংবাদমাধ্যমের গোপন ক্যামেরার সামনে চেতন শর্মা (Chetan Sharma) কোহলি’কে রীতিমত ‘মেগালোম্যানিয়াক’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। নিজেকে ক্রিকেট খেলাটার থেকেই নাকি উর্দ্ধে স্থান দিয়ে বসেছেন তিনি। তারকার গ্ল্যামারের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে তাঁর, তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বিরাট’কে (Virat Kohli) ইঙ্গিত করে চেতনকে (Chetan Sharma) বলতে শোনা গিয়েছে, “কোনো খেলোয়াড় যখন একটু নামযশ অর্জন করে ফেলে, তাঁরা মনে করে আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। বোর্ডের থেকেও বড় হয়ে গিয়েছে। কেউ আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। আমায় ছোঁয়ার ক্ষমতাও নেই কারও। আমি ছাড়া ভারতে তো ক্রিকেট’ই বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু কত খেলোয়াড় এলো, কত খেলোয়াড় গেলো, ক্রিকেট তো ক্রিকেটের মত চলতেই রইলো।” বিসিসিআই-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) সাথে বিরাট কোহলির দ্বন্দ্ব’ও প্রকাশ্যে চলে এলো চেতন শর্মার বয়ানের মাধ্যমে। সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রেসিডেন্টকে হেয় করার চেষ্টা করে ছিলেন বিরাট (Virat Kohli)। এমনটাও বলেছিলেন চেতন। ক্রিকেটদুনিয়াই প্রায়ই কানাঘুষো চলে যে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) এবং রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) একে অন্যকে অপছন্দ করেন। তা সম্পূর্ণ সত্যি নয় বলে জানিয়েছেন চেতন। তবে দুই মহাতারকার মধ্যে ইগোর লড়াই যে রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করায় চেতনকে ছেঁটে ফেলা ছাড়া উপায় ছিলো না বোর্ডের। নিজেই সরে গিয়ে BCCI-এর কাজ কিছুটা সহজ করে দিলেন তিনি।