একটা সময় ক্রিকেটে একদিনের ফরম্যাটে ২০০ রানের উপর করলেই প্রতিপক্ষ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতো। তবে আধুনিক ক্রিকেটে এসে টি-২০ ফরম্যাটেই ২০০ রান পার করে যাচ্ছে দলগুলো। নব্বইয়ের দশকের দিকে ভারতের ক্রিকেট যখন নতুন মোড়কে সাজানো হচ্ছে তখন দলের ব্যাটিং ভরসা ছিলেন শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, লক্ষ্মণরা।
অন্যদিকে বোলিং বিভাগেও ছিল একাধিক তারকা বোলার। এর মধ্যে একজন ছিলেন যিনি যেকোনো কন্ডিশনেই স্পিন ভেল্কি দেখিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাবু করতেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ভারতের জার্সি গায়ে তাঁর উইকেট সংখ্যা ছিল ৬১৯। তিনি আর কেউ নয়, অনিল কুম্বলে।
এবার দেখে নেওয়া যাক অনিল কুম্বলের সেরা চারটি পারফরম্যান্স
১. পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৪ রানের বিনিময়ে ১০ উইকেট
১৯৯৯ সালে দিল্লি টেস্টে সফরকারী পাকিস্তানকে শেষ ইনিংসে ৪২০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুভ সূচনা পায় পাকিস্তান দুই ওপেনার গড়েন ১০১ রানের জুটি। তবে পরবর্তি ২৭ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৬ ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিং রুমে পাঠান অনিল কুম্বলে।
এখানেই থেমে থাকেননি এই স্পিনার। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে আসা বাকি ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়ে পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন কুম্বলে। মাত্র ৭৪ রানের বিনিময়ে ১০ উইকেট নেন তিনি। ঐ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট সব মিলিয়ে ডানহাতি এই স্পিনার নেন ১৪ উইকেট। টেস্টে এক ইনিংসে ১০ উইকেট পাওয়া দ্বিতীয় ক্রিকেটার বনে যান কুম্বলে।
২. ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ১৯৯৩ সালে ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামে ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে টস জিতে ভারতকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানালে ৭ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় আকাশী-নীল জার্সি ধারীরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র মাত্র ৬৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম চার উইকেটের মধ্যে কাঁপিল ২টি, শচীন এবং মনোজ প্রভাকর ১টি করে উইকেট নেন। এরপর শুরু হয় কুম্বলে শো। একা হাতেই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামিয়ে ৬.২ ওভার বল করে মাত্র ১২ রান খরচায় ৬ উইকেট নিজের পকেটে পুরেন এই লেগি। কুম্বলের বোলিং তোপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৩ রানে।
৩. ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৩ রানে ৩ এবং ৬৬ রানে চার উইকেট
২০০২ সালে হেডিংলি টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে শচীন, দ্রাবিড়, গাঙ্গুলির সাথে জয়ের ক্ষেত্রে পার্শ্ব চরিত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন কুম্বলে। পঞ্চম দিনে এসে নাসের হুসাইনের সাথে এলেস স্ট্রুয়ার্ট ১১৭ রানের জুটি গড়লে সেই জুটিতে হানা দেন স্পিনার কুম্বলে। ব্যক্তিগত ১১০ রানে নাসের হুসাইনকে আউট করেন তিনি।
এই স্পিনার স্ট্রুয়ার্ট এবং গিলসকে ফিরিয়ে জয়ের ষোলকলা পূর্ণ করার পর ম্যাচ শেষে তাঁর পারফরম্যান্স দাঁড়ায় ১৫৯ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট। যা ম্যাচ জয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।
৪. পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট
২০০৪ সালে মুলতান টেস্টের স্মৃতি হিসেবে ধরা যায় সেহবাগের ত্রিপল সেঞ্চুরি, শচীনের অপরাজিত ১৯৪, অনিল কুম্বলের ৭২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট।
স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে ৪০৭ রানের বড় ইনিংসের পরও ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় ২৬৮ রান পিছিয়ে দেয়া এবং ঐ টেস্টে জয় লাভ করার ক্ষেত্রে কুম্বলের অবদানও ছিল অনেক। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা যখন মাটি কামড়ে পড়ে ছিল উইকেটে তখন প্রথমেই উইকেটের পতন ঘটান কুম্বলে।
একে একে ইমাম, তৌফিক, রাজ্জাক, সামি, সাকলাইন মুস্তাক, শোয়াইব আখতারদের ফিরিয়ে ম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনেন স্পিন জাদু দেখানো কুম্বলে। ঐ টেস্টে ভারত জয় লাভ করে ইনিংস এবং ৫২ রানের ব্যবধানে। ডানহাতি কুম্বলে দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন আট উইকেট।