দুই দেশের মধ্য়ে যাই থাক – ক্রিকেট মাঠে কেন, মাঠের বাইরেও পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক শাহিদ খান আফ্রিদিকে কোনওদিনই কেউ দেশীয় রাজনীতিতে প্রভাবিত হয়ে প্রতিবেশী দেশবিরোধী কথা বলতে দেখা যায়নি। হাইভোল্টেজ ম্য়াচে ক্রিকেট মাঠে দু‘দলের অনেক ক্রিকেটার মাঝেমধ্য়ে একে অপরকে স্লেজিং করলেও, আফ্রিদি এগিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য় করে যাচ্ছেন, যাতে বিপক্ষ দলের ক্রিকেটাদের মাথা গরম হয়ে যায় – কোনও দিন দেখা যায়নি। সীমান্তের ওপারের ক্রিকেটার হলেও, এপারে তাঁর ফ্য়ান ফলোয়িং কম নয়। ওপারের পাকিস্তানের মতে এপারের তাঁকে ভালোবেসে অনেকেই লালা বলে ডাকে। সতেরো বছরের ক্রিকেট জীবনে কোনও দিনই বিতর্ক জড়াননি। ২০০৫-এর অনিচ্ছাকৃত পিচ বিতর্ক বাদ দিলে, বরাবরই অত্য়ন্ত ভদ্র ক্রিকেটার বলেই সুনাম ছিল আফ্রিদি। জাতে পাঠান সুদর্শন এই ক্রিকেটারটির মহিলা ফ্য়ানের সংখ্য়া সারা ক্রিকেট বিশ্বে অগুন্তি। তার মধ্য়ে ভারতীয় মেয়েরাও রয়েছেন।
বলতে গেলে, বহু বছর ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্য়ে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ বন্ধ। গত দুই দশকে এক-আধটা ক্রিকেট সিরিজ খেললেও, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নীতির কারণে তা শুরু করা যায়নি উদ্য়োগ নিয়েও। আইসিসি পরিচালিত টুর্নামেন্ট ছাড়া এই দুই চিরপ্রতিন্বন্দ্বী দেশকে আর ক্রিকেট মাঠে খেলতে দেখা যায় না। তাই স্বাধীনতা দিবসের মুহূর্তে সম্পর্কের সেই বরফ গলাতে চেষ্টা করলেন লালা।
ব্রিটিশরা এদেশ ছাড়ার আগে ১৯৪৭ সালে একদেশকে দু‘টি ভাগে ভাগ কর দিয়ে যায়। বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অঙ্গ ছিল। সেই থেকেই ১৪ আগস্ট দিনটি পাকিস্তান তাদের স্বাধিনতা দিবস হিসেবে পালন করে। আর ভারত ১৫ অগস্ট। ভারতের মতো পাকিস্তানেরও স্বাধীনতার সত্তর বছর হল। সেই উপলক্ষ্য়ে ১৪ অগস্ট রাতে ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালনের কয়েক মিনিট আগে ভারতীয়দের উদ্দেশে আফ্রিটি ট্য়ুইট করে দুই দেশের মধ্য়ে ভালোবাসা বন্ধন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
শাহিদ খান আফ্রিদির ট্য়ুইট, ”শুভ স্বাধীনতা দিবস ভারত। প্রতিবেশীদের কোনওভাবেই বদলানো যায় না। তাই আসুন শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার পথে হাঁটি। মানবতার জয় হোক।”
Happy Independence Day India! No way to change neighbours, let's work towards peace, tolerance and love. Let humanity prevail.# HopeNotOut
— Shahid Afridi (@SAfridiOfficial) August 14, 2017
উল্লেখ্য়, মুস্তাক আহমেদ চোট পেয়ে দল থেকে ছিটকে গেলে পাকিস্তানের হয়ে একদিনের ক্রিকেটে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে ষোলো বছর বয়সে লেগ-স্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় আফ্রিদির। টেস্টের আসরে পা রাখেন ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। মারকুটে ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে কেরিয়ার শুরুতে প্রতিষ্ঠাতা লাভ করলেও, কেরিয়ারের শেষ দিকে বোলার আফ্রিদি ফের ফিরে আসেন। ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত সবচেয়ে কম বল খেলে শতরান করার রেকর্ড ছিল আফ্রিদির নামের পাশে। ৩৭ বলে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিদায় নিয়ে আবার ফিরে আসেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের হয়ে ২৭টি টেস্ট, ৩৯৮টি ওয়ান-ডে এবং ৮২টি টি-২০ ম্য়াচ খেলেছেন লালা। রান যথাক্রমে ১৭১৬, ৮০৬৪ এবং ১২১৮। তিন ধরনের ক্রিকেটে উইকেট সংখ্য়া ৪৮, ৩৯৫ ও ৯৭। ২০১৬ সালে চিরতরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান আফ্রিদি।