বর্তমানে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা আইপিএল টুর্নামেন্টের অংশ নন। তবে একটা সময় ছিল যখন তারা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিল। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ওপেনিং সংস্করণে পাকিস্তানের অনেক খেলোয়াড় বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলেছিলেন। তবে ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং পাকিস্তানের সাথে ভারত ক্রিকেটের সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে মুম্বই সন্ত্রাসবাদ হামলা পাকিস্তান ভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন করেছিল। তবে পাকিস্তান সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে অনেক রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। এরপর বিসিসিআই পাকিস্তান খেলোয়াড়দের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছিল এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও তাদের দলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। পাকিস্তান ক্রিকেটাররা কেবল ২০০৮ সালের আইপিএল- এর একটি মরসুমে অংশ হতে পেরেছিল। এখানে আমরা পাঁচজন পাকিস্তানী ক্রিকেটারকে দেখব যারা ইতিমধ্যে আইপিএলে খেলেছেন।
শোয়েব আখতার: পাকিস্তানের প্রাক্তন পেসার শোয়েব আখতার ২০০৮ সালের আইপিএল-এর প্রথম আসরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের অংশ ছিলেন। শোয়েব আখতার কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছিলেন। তিনি ৩ টি ম্যাচ খেলেছিলেন যেখানে তিনি ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। তার ইকোনমি ভালো ছিল ৭.৭১। ২০০৮ সালে আইপিএল-এর দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর দর্শনীয় বোলিং আইপিএল ভক্তদের স্মরণীয় স্মৃতি। কলকাতা নাইট রাইডার্স দিল্লির বিপক্ষে ১৩৪ রানের কম টার্গেট ডিফেন্ড করছিল। ডানহাতি পেসার আখতার ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন এবং কেকেআর মাত্র ১১০ রানে দিল্লিকে অলআউট করতে সক্ষম হয় এবং ম্যাচটি ২৩ রানে জিতেছিল। শোয়েব আখতারকে ৪-১১ দুর্দান্ত স্পেলের কারণে ম্যাচ অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কারও দেওয়া হয়েছিল। এটি আখতারের আইপিএলে সেরা বোলিং ফিগারও।
শোয়েব মালিক: শোয়েব মালিক আরেকজন পাকিস্তান ক্রিকেটার যিনি আইপিএলে খেলেছেন। আইপিএল ২০০৮ সালে শোয়েব মালিক দিল্লির ডেয়ারডেভিলস দলের অংশ ছিলেন। প্রাক্তন এই অধিনায়ক সাত ম্যাচ খেলেছেন এবং ৫২ রান করেছেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান মালিকের গড় ১৩ এবং স্ট্রাইক রেট ১১০+। তার সর্বোচ্চ স্কোর ২৪, যা তিনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে করেছিলেন। ২০০৮ সালে আইপিএল খেলে সাতটি ম্যাচে মালিক পাঁচটি ক্যাচও নিয়েছিলেন। মালিক দুবার দুটি ও এক উইকেট নিয়েছিলেন।
মিসবা-উল-হক: পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান প্রধান কোচ মিসবা-উল-হক ২০০৮ সালে আইপিএল-এরও অংশ ছিলেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম সংস্করণে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর হয়ে খেলেছিলেন। মিসবা আটটি ম্যাচ খেলেছিলেন যেখানে তিনি ১১৭ রান করেছিলেন। তাঁর গড় ১৬+। একটি উজ্জ্বল স্ট্রাইক রেট ১৪৪+। ২০০৮ সালে আইপিএল-এর দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ম্যাচে মিসবাহ ২৫ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। আরসিবির স্কোরবোর্ডে ১৫৪ রান তুলতে সাহয্য করে। তবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ৫ উইকেটে হেরেছিল।
সোহেল তনভীর: প্রাক্তন পাক পেসার সোহেল তনভীর ২০০৮ সালে আইপিএল-র অংশ ছিলেন। সোহেল তনভীর রাজস্থান রয়্যালসের অংশ ছিলেন এবং মরসুমে তাঁর দলের হয়ে শিরোপা জয়ের জন্য প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তনভীর ২০০৮ সালে আইপিএল-র সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এবং পার্পল ক্যাপ জিতেছিলেন। ১১ ম্যাচে ২২ টি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। তার অভাবনীয় ইকোনমি রেট ছিল ৬.৪৬। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ম্যাচে সোহেল তনভীর ১৪ রানে ছয় উইকেট শিকার করেছিলেন। এই রেকর্ডটি পরবর্তী ১১ বছর আইপিএলে সেরা বোলিং ফিগার হিসাবে রয়ে গেছে। সোহেল তনভীরের দল রাজস্থান রয়্যালস ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসকে ৩ উইকেটে পরাজিত করার পরে আইপিএল ২০০৮ সালে ট্রফি জিতেছিল।
শাহীদ আফ্রিদি: প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার শাহীদ আফ্রিদিও ২০০৮ সালে আইপিএল-র অংশ ছিলেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ওপেনিং সংস্করণে আফ্রিদি ডেকান চার্জার্সের হয়ে খেলেছিলেন। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক আফ্রিদি ১০ ম্যাচ খেলে ৯ ইনিংসে ৮১ রান করেছিলেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৭৬+ এবং টুর্নামেন্টে তার সর্বোচ্চ স্কোর ৩৩ ছিল। এছাড়াও তিনি মরসুমে নয় উইকেট নিয়েছিলেন এবং তার ইকনমি ৭.৪ ছিল। তাঁর সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৩/২৮।