টি-২০ ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে যদি ম্যাচ জিততে হয় তো দুটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়। প্রথমটি পাওয়ার প্লেতে ভালো করা আর দ্বিতীয়টি হলো ডেথ ওভারে ভালো করা। এটা ব্যাটসম্যান আর বোলার দুজনের জন্যই প্রযোজ্য। যদি এই দুই সময়ে কোনো দল ভালো প্রদর্শন করে তো তাদের জয় পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। ডেথ ওভারের বিষয়ে ভারতীয় বোলারদের কিছুদিন আগেও ততটা ভালো মনে করা হত না, কিন্তু এমন কিছু ম্যাচ খেলা হয়েছে যখন ভারতীয় দলের বোলাররা শেষ ওভারে গিয়ে বিপক্ষ দলকে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছে। যা ভীষণই রোমাঞ্চকর ম্যাচ ছিল। আজ আমরা আপনাদের সেই ৫টি শেষ ওভারের ব্যাপারে জানাব, যখন ভারতীয় বোলাররা ভীষণই ভালো বোলিং করেছেন আর ম্যাচকে ভীষণই রোমাঞ্চকর করে দিয়েছিল। এই তালিকায় কিছু এমন ম্যাচ থেকেছে যা ভারতীয় সমর্থক কখনো নিজেদের মন থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না।
৫. মহম্মদ শামি, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০২০তে
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল হ্যামিলটনে টি-২০ ম্যাচ খেলছিল। যেখানে ভারতীয় দল প্রথমে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৮০ রানের লক্ষ্য রেখেছিল। নিউজিল্যান্ডের দল ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত জয়ের প্রায় কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। তাদের জয়ের জন্য ৯ রান দরকার ছিল। কেন উইলিয়ামসন আর রস টেলর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ক্রিজে ছিলেন। বল মহম্মদ শামির হাতে ছিল। প্রথম বলে টেলর ছক্কা মারেন। অন্যদিকে দ্বিতীয় বলে সিঙ্গল নেন। তৃতীয় বলে কেন উইলিয়ামসন খেলতে পারেননি। আর চতুর্থ বলেই তিনি আউট হয়ে যান। মহম্মদ শামির এই ওভারে এখন ২ বলে ২ রান দরকার ছিল। টিম সিফর্ট মাঠে আসেন, যেখানে তিনি বাই হিসেবে এক রান নিয়ে নেন। শেষ বলে এক রান দরকার ছিল। শেষ বলে টেলর বোল্ড হয়ে যান আর ম্যাচ টাই হয়ে যায়। সুপার ওভারে ভারতীয় দল এই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল।
৪. জসপ্রীত বুমরাহ, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১৭য়
ইংল্যন্ডের বিরুদ্ধে ভারতের দল নাগপুরে টি-২০ খেলছিল। যেখানে ভারতীত দল প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৪৪ রানের লক্ষ্য রেখেছিল। ইংল্যান্ডের দল ম্যাকে শেষ ওভার পর্যন্ত জয়ের কাছে নিয়ে যায়। তাদের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৮ রান দরকার ছিল। জোস বাটলার আর জো রুট ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটিং করছিলেন। ভারতের হয়ে বল করছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। প্রথম বলে জো রুট এলবিডব্লিউ আউট হয়ে যান। অন্যদিকে দ্বিতীয় বলে মইন আলি সিঙ্গল নেন। জস বাটলার তৃতীয় বলে কিছু করতে পারেননি আর চতুর্থ বলে তিনি আউট হয়ে যান। জসপ্রীত বুমরাহের এই ওভারে ২ বলে ৭ রান দরকার ছিল। ক্রিস জর্ডন মাঠে আসেন, যেখানে তিনি পঞ্চম বলে এক রান নেন। শেষ বলে ৬ রান দরকার ছিল। বুমরাহ ওয়াইড ইয়র্কার করেন আর মইন আলি বিট হন। তার সঙ্গেই ভারতীয় দল এই ম্যাচ ৫ রানে জিতে নেয়।
৩. হার্দিক পান্ডিয়া, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০১৬য়
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০১৬য় ভারতীয় দল খেলছিল। যেখানে ভারতীয় দল প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১৪৬ রানের লক্ষ্য রাখে। বাংলাদেশের দল ম্যাচের শেষ ওভারে জয়ের কাছে পৌঁছে যায়, আর তাদের শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১১ রান দরকার ছিল। মহমুদুল্লাহ আর মুশফিকুর রহিম বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট করছিলেন। বল ভারতের হয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়ার হাতে ছিল। প্রথম বলে মহমুদুল্লাহ এক রান নেন। দ্বিতীয় বলে মুশফিকুর রহিম বাউন্ডারি মারেন। তৃতীয় বলেও রহিম বল বাউন্ডারি লাইনে পৌঁছে দেন। হার্দিক পান্ডিয়ার এই ওভারে এখন ৩ বলে ২ রান দরকার ছিল, যেখানে ছক্কা মারার চেষ্টায় মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যান। অন্যদিকে পরের বলে মহমুদুল্লাহও ক্যাচ আউট হন। শেষ বলে ২ রান দরকার ছিল। যখন ধোনি রান আউট করে দেন, আর ভারত এই ম্যাচ এক রানে জিতে নেয়।
২. এস শ্রীসন্থ, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ লীগ স্টেজে
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ এর লীগ স্টেজের ম্যাচে ভারতীয় দল খেলছিল। যেখানে ভারতীয় দল প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৪১ রানের লক্ষ্য রাখে। পাকিস্তানের দল ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত জয়ের কাছে পৌঁছে যায়, যেখানে শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের ১২ রানের দরকার ছিল। ইয়াসির আরাফত আর মিসবাহ উল হক পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং করছিলেন। ভারতের হয়ে বল নিয়ে আসেন এস শ্রীসন্থ। প্রথম বলে ইয়াসির এক রান নেন, দ্বিতীয় বলে মিসবাহ উল হক বাউন্ডারি মারেন। তৃতীয় বলে তিনি দু রান নেন আর চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারেন। শ্রীসন্থের এই ওভারে ২ বলে এক রান দরকার ছিল। পঞ্চম বলে মিসবাহ উল হক কিছু করতে পারেননি, অন্যদিকে শেষ বলে তিনি রান আউট হয়ে যান। যে কারণে ম্যাচে পাকিস্তান বল আউট হয়ে যায়। যেখানে ভারতীয় দল ৩-০ ফলাফলে বল আউট জিতে পয়েন্টস নিজের নামে করে নেয়।
১. জোগিন্দর শর্মা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ ফাইনালে
আরো একবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপ ২০০৭ ফাইনাল ম্যাচে ভারতীয় দল খেলছিল। যেখানে ভারতীয় দল প্রথমে ব্যাটিং করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৫৭ রানের লক্ষ্য রাখে। পাকিস্তানের দল ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত জয়ের কাছে পৌঁছে যায়। তাদের জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার ছিল। মিসবাহ উল হক আর মহম্মদ আসিফ পাকিস্তানের হয়ে মাঠে ছিলেন। ভারতের হয়ে বল করতে আসেন যোগীন্দর শর্মা। প্রথম বল ওয়াইড হয়ে যায়। আবারো যখন প্রথম বল করা হয় তো রান হয়নি। দ্বিতীয় বলে মিসবাহ ছক্কা মারেন। যাতে ম্যাচ প্রায় পাকিস্তানের দিকে চলে যায়। যোগীন্দর শর্মার এই ওভারে ৪ বলে ৬ রান দরকার ছিল, সেই সময় মিসবাহ ছক্কা মারার চেষ্টা করেন যারপর এস শ্রীসন্থ ক্যাচ হয়ে দেন। ভারতীয় দল আবারো এই ম্যাচ ৫ রানে জিতে নেয়। আর পাকিস্তান দল অলআউট হয়ে যায়।