গত এক দশক ধরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আধিক যুগের সেরা ক্রিকেটারদের মঞ্চ হয়ে থেকেছে। এই মহাতারকারা যে কোনো মূল্যে প্রতিযোগীতা জেতার জন্য নিজেদের বিস্ফোরক মেজাজকে বজায় রেখেছেন। আইপিএল মুশকিলের পরিস্থিতিতেও তাদের বৈশিষ্টকে পরীক্ষা করে দেখেছে – এমন একটা ক্ষমতা যা টি-২০ ক্রিকেটে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয়। এই টুর্নামেন্টের ফলে ক্রিকেট ব্র্যাণ্ডের পাশাপাশি ব্যতিক্রমী উন্নতিও হয়েছে সেই সঙ্গে ঘরোয়া প্রতিভাদের মধ্যেও উন্নতি দেখা গিয়েছে। কিংবদন্তী আর ঘরোয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এই লড়াইয়ের কম্বিনেশন এই টুর্নামেন্টকে আরো সুন্দর করে আর আকর্ষক করে তুলেছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর বিশ্বস্তরীয় খেলোয়াড়দের দলে রেখেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়ো বড়ো নাম দলে থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একটি দল এই একবারো ট্রফি জিততে ব্যর্থ হয়েছে তা অবাক করে দেয়। আরসিবির ইতিহাসে খেলোয়াড়দের ভুল সময়ে ছেড়ে দেওয়া বা দল গঠনে বারবার পরিবর্তনের বৈচিত্রের ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায়। এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা এমন তিন প্লেয়ারের কথা জানাব যারা কখনো আরসিবির হয়ে খেলেছেন তা হয়ত আপনাদের মনেও নেই।
নাথান ব্র্যাকেন
২০০০ এর তারকা খচিত এবং অবিশ্বাস্যভাবে অপরাজিত অস্ট্রেলিয় দলের একজন অংশ ছিলেন নাথান ব্র্যাকেন। এই বাঁহাতি জোরে বোলার, যিনি ২০০৭ এর বিশ্বকাপে নিজের অদ্ভুত আঙ্গলের সীম বোলিং্যে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলেন তাকে আইপিএলের প্রথম মরশুমেই আরসিবি তুলে নিয়েছিল। ১১৬টি ওয়ানডেতে ১৭৪টি উইকেট নেওয়া ব্র্যাকেন সিম পজিশনকে লুকিয়ে রাখতে আর বলকে দুইদিকেই মুভ করাতে দক্ষ ছিলেন। তবে এটা লজ্জার কথা যে এই দীর্ঘদেহী জোরে বোলার নিজের ক্ষমতার প্রদর্শন ভারতীয় দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করতে পারেননি। তিনি আরসিবির দলে প্রথম দুটি মরশুমে ছিলেন কিন্তু ডেল স্টেইন, জ্যাক ক্যালিস এবং প্রভিন কুমারের কারণে তাকে সকলের পেছনেই থেকে যেতে হয়।
করুণ নায়ার
আইপিএল ২০১২য় নিজের প্রতিভা দেখানোর আগে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কর্ণাটকের হয়ে করুণ নায়ারের প্রদর্শনকে দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত করা হয়নি। স্থানীয় দলের হয়ে এই স্টাইলিস ব্যাটসম্যান জনপ্রিয়তা অর্জনক করলেও আইপিএলের প্রথম মরশুমে তিনি সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় মরশুমে তিনি তার আইপিএল অভিষেক করেন এবং পরের ম্যাচ খেললেও বেশিরভাগ সময়ই তিনি রিজার্ভ বেঞ্চেই কাটিয়েছেন। ২টি ম্যাচে মাত্র ৯ রান আরসিবির হয়ে তার কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘটায়। বহু উদীয়মান তারকাদের দলে সুযোগ দেওয়া রাজস্থান রয়্যালস এরপরের মরশুমে নায়ারকে নিজেদের দলে শামিল করে। ওই মরশুমে তিনি সকলকে প্রভাবিত করে ১১টি ম্যাচে ১৪২.২৪ এর দুর্দান্ত স্ট্রাইকরেট ৩৩০ রান করেন। এরপর ২০১৮য় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের দলে শামিল হওয়ার আগে রাজস্থান দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে তাকে ট্রেড করে। ওই মরশুমে নায়ার ৩০০ রান করেন কিন্তু ২০১৯ এর আইপিএলে তাকে প্রথম একাদশের বাইরেই বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়। আইপিএলে সব মিলিয়ে এই ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান ৬৪টি ম্যাচে ১৪৬৪ রান করেছেন।
স্টিভ স্মিথ
হ্যাঁ এই নামটা আপনারা সঠিকই পড়েছেন, ডেল স্টেইন, ইয়োন মর্গ্যান, কেভিন পিটারসন এবং রস টেলরদের নিয়ে সজ্জিত আরসিবির ড্রেসিং রুমের সদস্য ছিলেন স্টিভ স্মিথ। সেই সময় থেকেই তার মধ্যে অসাধরণ উন্নতির শুরু হয়। এই মুহূর্তের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদে একজন স্টিভ স্মিথ, যিনি দুর্দান্ত গড় এবং স্ট্রাইকরেটে ধারাবাহিকতার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১১০০০ এরও বেশি রান করেছেন। ২০১০য় স্টিভ স্মিথকে ট্রেড করে আরসিবি, কিন্তু তিনি কোনো ম্যাচে সুযোগ পাননি। তারপর বর্তমানে উঠে যাওয়া দল পুণে ওয়ারিয়র্স তাকে ট্রেড করে নেয় তারপর রাজস্থান রয়্যালস তাকে কিনে নেয় এবং এখন এটাই তার হোম হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক। স্মিথ এখনো পর্যন্ত আইপিএলের ৮১টি ম্যাচে ৩৭.৪৪ এর দুর্দান্ত গড়ে এবং ১২৮.৯৫ স্ট্রাইকরেটে ২০২২ রান করেছেন।