সৌরভ সেদিন ত্য়াগ করেছিল বলেই ধোনি গ্রেট হতে পেরেছে, দ্রাবিড় না থাকলে ধোনি ভালো ফিনিশার হতে পারত না – চাঞ্চল্য়কর মন্তব্য় করলেন বীরু 1

চাঞ্চল্য়কর মন্তব্য় করেছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। আর তাও এলেবেলে কেউকেটাকে নিয়ে নয়। এমন দু’জন ব্য়ক্তিকে নিয়ে দিল্লির এই প্রাক্তন ক্রিকেটার মন্তব্য় করেছেন, যাঁদেরকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়। একজন ভারতীয় ক্রিকেটকে হাতে করে গড়েছিলেন। অপরজন ভারতীয় ক্রিকেটকে সবচেয়ে বড় গৌরবগুলি এনে দিয়েছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলি যদি ভারতের সর্বকালের অন্য়তম সেরা অধিনায়ক হন, তাহলে মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। সৌরভের আমলে ভারত বড় বড় ট্রফির স্বপ্ন দেখতে শিখেছিল, আর ধোনি জমানায় সেটাকে বাস্তবে পরিণত করছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ভাগ্য়ক্রমে এই দু’জনের অধিনায়াকত্বে ক্রিকেট খেলেছিলেন। ফলে, দু’জনকেই খুব কাছ থেকে চেনেন তিনি। বলা বাহুল্য়, সৌরভ তাঁকে ওপেনার করার পর মারাকাটারি ক্রিকেট খেলা বীরু নির্ভরতা ভারতীয় দলে তৈরি হয়। আর সেই অতিরিক্ত নির্ভরতা ধোনি আসার পর থেকে ভারতীয় দলে আসতে আসতে কমতে শুরু করে।
রাহুল দ্রাবিড় জমানা শেষ হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি জমানার শুরু। অধিনায়ক ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটে যত সাফল্য এনে দিয়েছেন, ততই আস্তে আস্তে অধিনায়ক সৌরভ রেকর্ড মলিন হয়েছে। তর্কের খাতিরে, রাঁচির মতো ওই ছোটো শহর থেকে উঠে এসে ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষে বসা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক বলতে ক্রিকেট বিশ্বের অনেকেই দ্বিধবোধ করেন না। কারণ, ধোনির মতো বিশ্বের আর কোনও অধিনায়ক আইসিসি পরিচালিত সবকটি টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দেশকে এনে দিতে পারেননি। বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, বীরু যা মন্তব্য় করেছেন, তা অত্য়ন্ত বিতর্কিত। কারণ গ্রেট ক্রিকেটাররা জন্ম থেকেই গ্রেট হন, কোনও সাধারণ মানের ক্রিকেটারকে কোনও দিন লেজেন্ড তৈরি করা যায় না। অবশ্য় ভুলে গেলে চলবে না, ধোনি জমানাতেই ফর্ম হারানো বিস্ফোরক ওপেনার বীরেন্দ্র সেহওয়াগকে বাদ পড়তে হয়েছিল দল থেকে। আর তার পুরো দায় মাহির ওপরেই চাপানো হয়েছিল, যেহেতু তিনি সেই সময় অধিনায়ক ছিলেন।
একটি বেসরকারি টিভি চ্য়ানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেহওয়াগ দাবি করেছেন, আজ ভারতীয় ক্রিকেট ফ্য়ানেরা ধোনি ধামাকাতে মাতোয়ারা হতে পেরেছেন, কারণ তাঁর পেছনে একজনের আত্মত্য়াগ রয়েছে। তিনি আর কেউ নন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। দাদা সেদিন তিন নম্বর ব্য়াটিং স্লটটা ধোনিকে ছেড়ে দিয়েছিলেন বলেই, ধোনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন বিস্ফোরক ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে। তাঁকে সেদিন যদি ব্য়াটিং অর্ডারে সেই সময়কার ভারত অধিনায়ক সৌরভ ব্য়াটিং অর্ডারে ওপরে না তুলে আনতেন, তাহলে ধোনি আজ গ্রেট হতে পারতেন না।
বীরু যে মন্তব্য় করেছেন, তা ধোনির মতো একজন দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের পক্ষে অত্য়ন্ত অপমানজন। ওই বেসরকারি টিভি চ্য়ানেলে সেহওয়াগ যা দাবি করেন তা হল, ”সেই সময় আমরা ব্য়াটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাচ্ছিলাম। আমরা ঠিক করেছিলাম, ভালো ওপেনিং পার্টনারশিপ হলে, সৌরভ গাঙ্গুলি তিন নম্বরে নামবে। আর যদি ওপেনাররা ব্য়র্থ হয় ভালো সূচনা দিতে, তাহলে তিন নম্বরে সৌরভ নয়, ইরফান পাঠান বা ধোনির মতো কোনও পিঞ্চ হিটারকে পাঠানো হবে। যাতে স্কোরিং রেট সচল থাকে।”
বীরু এরপর যা বলেছেন, তা অত্য়ন্ত চাঞ্চল্য়কর দাবি। ”গাঙ্গুলি সেই সময় ধোনিকে তিন-চারটি ম্য়াচে তিন নম্বরে ব্য়াট করতে পাঠানোর ব্য়াপারে পরিকল্পনা করছিল। খুব কম অধিনায়ক আছে, যারা বীরেন্দ্র সেহওয়াগের জন্য় নিজের ওপেনিং স্লট আবার ধোনির জন্য় নিজের তিন নম্বর স্থানটি ছেড়ে দিত। দাদা যদি সেদিন ওটা না করত, ধোনি আজ এতো গ্রেট ক্রিকেটার হতে পারত না। সৌরভ সবসময় তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়াতে বিশ্বাসী ছিল।”
অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি ও কিভাবে নিজের অধিনায়কত্ব খুইয়েছিলেন, দল থেকে বাদ পড়েছিলেন এবং তারপর অবসর নেওয়ার শর্তে তাঁকে দলে ফিরিয়ে ফেয়ারওয়েল দেওয়া হয়েছিল, তা এখন ইতিহাস। এনিয়ে তখন বেশ বিতর্ক হয়েছিল। দাদার হাত থেকে অধিনায়কত্বের ব্য়াটন সেসময় রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে উঠেছিল। এমনও কথা শোনা গিয়েছিল, দাদার অধিনায়কত্ব যাওয়ার পেছনে দ্রাবিড় যোগসাজোশ ছিল। যদিও, তা কোনওদিন প্রমাণ করা যায়নি। সত্য়ি কথা বলতে, দ্রাবিড়ের মতো ক্রিকেট নিয়োজিত প্রান ও বিতর্ক থেকে শতহাত দূরে থাকা ভদ্র চরিত্রের মানুষ খুব কম এসেছেন ভারতীয় ক্রিকেটে। বীরু সেই মানুষটিক জড়িয়েও দাবি করেছেন, ধোনির বিশ্বক্রিকেটে অন্য়তম সেরা ম্য়াচ ফিনিশার হওয়া নিয়ে। বীরু বলেছেন, দ্রাবিড় না থাকলে ধোনি ভালো ম্য়াচ ফিনিশার হতে পারতেন না। ভারতের এই প্রাক্তন ওপেনার বলেন, ”রাহুল দ্রাবিড়ের আমলে ধোনি ম্য়াচ ফিনিশানের রোল পায়। কয়েকবার খারাপ শট খেলে আউট হয়ে যাওয়ার পর ধোনিকে একবার ভর্ৎসনাও করেছিল দ্রাবিড়। ওই ঘটনার পর থেকে ধোনি একেবারে বদলে যায়। তারপর নিজেকে ভালো ফিনিশার হিসেবে গড়ে তোলে। যুবরাজের সঙ্গে ওর পার্টনারশিরগুলি স্মরণীয়।”
এখানে বলে রাখা ভালো, ধোনি বিশ্ব ক্রিকেটের একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি অধিনায়ক থাকাকালীন টি-২০ বিশ্বকাপ, পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফি, টেস্টের আসরে ভারতকে এক নম্বরে তুলে আনা – এসব গৌরবই এনে দিয়েছেন নিজের দেশকে। সৌরভ বা রাহুল দ্রাবিড়ের মধ্য়ে অধিনায়কত্বের তুলনা না টানলেও, এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, অধিনায়ক হিসেবে ধোনি ভারতীয় ক্রিকেট তথা বিশ্ব ক্রিকেটকে যা দিয়েছেন, ভবিষ্য়তে হয়ত বা তা কেউ কোনওদিন করে দেখাতে পারবেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *