চোট আঘাত আশিস নেহেরার ক্রিকেট জীবনকে সংক্ষিপ্ত করেছে। তাঁর স্মৃতি জানান দেয় ১২ বার তাকে ছুরি কাঁচির তলায় শুতে হয়েছে, সারা শরীর জুড়ে লাগানো অসংখ্য স্ক্রু এবং নাট। ১৮ বছরের দীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ারে একজন ক্রিকেটারের যতগগুলি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কথা তিনি তার অধিকাংশই খেলতে পারে নি। তা সত্ত্বেও ভারতীয় ড্রেসিং রুমে জুড়ে রয়েছে তার অগুনিত বন্ধু ও ভক্ত। বুধবার ম্যাচের আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে আইপিএলে সানরাইজ হায়দ্রাবাদে খেলা তার সতীর্থ ভারতীয় দলের জোরে বোলার ভুবনেশ্বর কুমার সম্পর্কে বলতে গিয়ে নেহেরা বলেন যে তিনি কোনো মতেই ভুবনেশ্বর কুমারের পরিবর্তে খেলতে চান না। চিরকালই অন্তর থেকে কথা বলায় পরিচিত নেহেরা মনে করেন এই মুহুর্তে ভুবনেশ্বর কুমার ভারতীয় বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
এই মুহুর্তে ভুবি ভারতীয় দলের ধারাবাহিকভাবে একজন নির্ভরযোগ্য বোলার। ব্যাটম্যানকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে। কোনো ব্যাটসম্যানই তার বিরুদ্ধে খোলা মনে রান করতে পারে না। বুধবারই কিউয়িদের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজের ঘরের মাঠে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সন্ন্যাস নেন নেহেরা। এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের বড় ব্যবধানে জেতার পর ম্যাচ শেষে নেহেরা বলেন, ‘ ২০১৭র আইপিলের সময়ই আমি বুঝতে পারি ভুবনেশ্বর ভারতীয় বোলিংকে নেতৃত্ব দিতে তৈরি। এই সিজনের আইপিএলে ওর ফর্ম ওঠা নামা করছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি অনুভব করি ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর এটাই সঠিক সময়। তাই একজন বোলার হিসেবে আমি কখনই ভুবির পরিবর্তে খেলতে পছন্দ করব না। যদি আগামি ৬ মাসের মধ্যে ওয়ার্ল্ড কাপের মত কোনো বড়ো টুর্নামেন্ট থাকত, কিংম্বা আমার আরও দু’বছর খেলার পরিকল্পনা থাকত, তাহলে অবশ্যই আমি নিজের ক্ষমতায় আমার জায়গাটা আদায় করে নিতে পারতাম। কেউ যদি আমার থেকে ভালো খেলে, তবে সে এই জায়গাটা নেওয়া যোগ্য দাবীদার। এমনটা নয় যে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো্রকম বাড়তি সুযোগ পেয়েছি। চাইলেই আপনারা আমার গত দুবছরের রেকর্ড লক্ষ্য করে দেখতে পারেন। যখন আমি ভালো খেলছিলাম, সেই সময়ই আমি বিরাট এবং রবি শাস্ত্রীকে বলি যে এমনটা নয় যে আমি খেলতে চাই না। যদি তোমার ৩ জন জোরে বোলারের প্রয়োজন পড়ে আমি আছি। কিংবা যখন বিরাট বলে ‘শুধু মাত্র তোমাকেই চাই’ তখন আমি আছি। এমনকী বুধবারও মানুষ এটাই ভাবছিলেন যে আশিস নেহেরা খেলবে কিনা, কিন্তু যদি আমি আজ প্রথম একাদশে থাকি আমি অবশ্যই খেলব। আমি এখানে ঘুরতে আসি নি”।
চোট আঘাতে জর্জরিত নিজের দীর্ঘ ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে বলতে গিয়ে নেহেরা বলেন, “যখন আপনার বয়েস কম থাকে, তখন আপনি নিজেকে রিঙের রাজা ভাবেন। কিন্তু গত সাত আট বছর ধরে আমি নিজের ঘরে ফিরে নিজেকেই বলি যে হ্যাঁ, এত চোট আঘাত সত্ত্বেও যতটা সম্ভব আমি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। সেখানে যেমন হতাশা থাকবে তেমনি অনেক ভাল মুহুর্তও আসবে। এমনকি যদি আপনি শচীন তেন্ডুলকরকেও জিজ্ঞেস করেন, তবে হয়তো তিনি আরও ৫000 রান করতে পারতেন বলে তার মনে হতে পারে। আপনি নিজে কখনই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। নিজের স্বপ্নকে তাড়ার করার ক্ষেত্রে হয় এটা ভালো কিন্তু একই সময়ে আপনাকে বাস্তববাদীও হতে হবে”।
২০০৪এ নেহেরা শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন। কিন্তু বহুবার চোট আঘাত পাওয়ার কারণে পরে তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটের দিকেই মন দেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “ ২০০৯-১০ মরশুমে একটা সময় গ্যারি কার্স্টেন এবং ধোনি আমার পেছনে পড়েছিল। ওরা বলত তুমি টেস্ট ক্রিকেট খেলো। আমি বলি আগে আমাকে ২০১১ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলতে দাও, তারপরই আমি ভেবে দেখতে পারি। ২০১৩য় আমি দিল্লীর হয়ে ৫-৬টা চারদিনের ম্যাচ খেলি। তখনই আমি অনুভব করি যদি আমি এই ৩৪-৩৫ বছর বয়েসেও চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আমি টেস্ট ম্যাচও চালিয়ে যেতে পারি”। তবে এই মুহুর্তে নেহেরা চান ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আগামি প্রজন্মের হাতে ব্যাটনটা তুলে দিয়ে উঠতি বোলারদের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে।