ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের সেরা ফর্মে এখন। ক্রিকেটীয় ভাষায় বললে, বিরাট এখন তাঁর কেরিয়ারের মধ্য়গগনে। ব্য়াটসম্য়ান বিরাট যেমন অনবদ্য় ফর্মে আছেন, তেমনই নেতা বিরাট যেখানে হাত দিচ্ছেন, ভারতীয় ক্রিকেট সফলতা পাচ্ছে। টেস্টের আসরে এক নম্বর স্থানটা দখল করার পাশাপাশি টানা সাতটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অপরাজিত ক্য়াপ্টেন কোহলি। বিরাটের আগ্রাসী মনোভাবের ছাপ টিম ইন্ডিয়াতেও। আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রথম থেকেই বিপক্ষ দলকে চাপে ফেলে দিয়ে অর্ধেক শেষ করে দেওয়া। জাতীয় দলের আগে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে কোহলির প্রথম হাই-প্রোফাইল সিনিয়র টুর্নামেন্ট কিন্তু ২০০৮ সালে আইপিএল ক্রিকেট খেলা। রাহুল দ্রাবিড় রয়্য়ালস চ্য়ালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোরের নেতা ছিলেন সেসময়। ফলে, কোহলি কতটা আক্রমণাত্মক রাহুল কিছুটা আভাস পেয়েছিলেন তখন থেকেই।
অনেকেই কোহলির অতিরিক্ত আগ্রাসী মনোভাবের নেতিবাচক দিকটি মাঝেমধ্য়ে তুলে ধরেছেন। জন্টি রোডসের মতো ক্রিকেট লেজেন্ড বলেছেন, যতদিন ভারত ম্য়াচ জিতছেন, ততদিন বিরাটের আক্রমণাত্মক মনোভাব ভালোলাগছে। কিন্তু, যখন পরিস্থিতি বদলাবে, তখন কি হবে?
গায়ে-হাতের ট্য়াটু আবার কায়দা করে কাটা চুল নিয়ে অনেকে খোঁচা দেন মাঝেমধ্য়ে। ভারতীয় দলে খেলতে আসা অনেক তরুণ ক্রিকেটারই দলনেতার মতো গায়ে ট্য়াটু, মাথার চুল ফুটবলারদের কায়দায় ছাঁটা, সেই সঙ্গে ট্রিম করা দাড়ি। অনেকে এটাকে ‘মাচো লুক‘ বলেন, আবার অনেকে একেবারেই এসবের বিরুদ্ধে। তবে, বিরাটের ‘মাচিসমো‘ নিয়ে যে যাই বলুক দ্রাবিড় তা নিয়ে চিন্তিত নন। বরং তিনি বলছেন, ”দেখুন ক্রিকেট খেলাটা এখনও পারফর্ম করার মধ্য়েই সীমাবদ্ধ। আর সেটা কোহলির মতো একজন ক্রিকেটারের থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।” গত রবিবার বেঙ্গালুরুতে একটি সাহিত্য় উৎসবে দ্রাবিড় আরও বলেন, ”ওটা ওর ব্য়ক্তিত্ব। লোকে আমাকেও বলে, আমি ওর মতো আচরণ করি না কেন? কিন্তু, আমি ওর মতো আচরণ করলে, আমার সেরাটা দিতে পারব না। আমি যদি গায়ে ট্য়াটু করে বিরাটের মতো আদব-কায়দা দেখাতে যাই, তাহলে আমার নিজস্বতা হারাব। কারণ, আমি আমি ওর মতো নই।”
এরপর সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ দ্রাবিড় জানান কিভাবে বিরাটের ব্য়ক্তিত্ব সম্পর্কে তাঁর নিজের ভুল ভাবনাটা ভাঙে। ”অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগের ঘটনা। খবরে কাগজে দেখছিলাম, বিরাট এই বলেছে, সেই বলছে। পড়ার পর আমিও খানিকটা নাক কুঁচকে ছিলাম। তারপর খানিকক্ষণ এটা নিয়ে ভাবি। তখন মনে হলো, হয়ত বিরাট এভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাইছে। হয়ত এভাবেই ক্রিকেট মাঠে ওর সেরাটা বেরিয়ে আসে। এটা হয়ত সবার পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু, দিনের শেষে বিরাটকে ক্রিকেট মাঠে সফল হতে হবে। ফলে সফলতা আনতে ওর যেটা দরকার সেটা ওকে করতেই হবে।”
ভারতীয় যুব দলের কোচ এরপর বলেন, ”অজিঙ্কা রাহানে ভিন্ন ধরণের ক্রিকেটার। ও নিজের সেরাটা বের করে আনে বিরাটের ঠিক উল্টোটা করে। আসলে নিজস্বতা বজায় রেখে কাজ করা গেলেই নিজের সেরাটা বেরিয়ে আসে। ওটাই আসল ব্য়াপার। প্রতিপক্ষকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে বিরাট নিজের সেরাটা বের করে আনে। আর এতে যখন বিরাট সফল হচ্ছে, তখন ওকে দোষ দিতে পারবে না কেউ। ওকে ওর মতো থাকতে দিন।”