সিএসকের নতুন ঘরের মাঠে পুণের এমসিএ স্টেডিয়ামের শুক্রবার রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে বিশাল ব্যবধানের জয় তুলে নিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। নতুন ঘরের মাঠের প্রথম ম্যাচেই রাজস্থানকে তারা হারাল ৪৬ রানে। এই ম্যাচে আগে টস জিতেছিল রাজস্থান। এই ম্যাচে চেন্নাইয়ের হয়ে স্পট লাইট কেড়ে নেন শেন ওয়াটসন। পরিস্থিতির ফায়দা তোলার পাশাপাশি এই ম্যাচ রান তাড়া করার চাপ না থাকায় ওয়াটসন ছিলেন সম্পুর্ণ নিজের মেজাজে। শেষ পর্যন্ত ১০৬ রান করে আউট হন তিনি। টসে হেরে যাওয়ার পর ধোনির ব্রিগেডের কাছে এটা পরিস্কারই ছিল যে এই ম্যাচে স্কোরবোর্ডে তাদের বড় রান তুলতে হবে। যে কাজের জন্য একেবারে সঠিক ব্যক্তি ছিলেন ওপেনার শেন ওয়াটসন। প্রথম থেকেই নির্ধয় ওয়াটসন রাজস্থান বোলারদের তুলোধনা করতে শুরু করেন।
এমনকী এই সেঞ্চুরির পথে তার স্ট্রাইক রেট ছিল গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ক্রিস গেইলের থেকেও বেশি। এই ম্যাচে চোট সারিয়ে দলে ফেরা সুরেশ রায়নাকেও দেখে ছন্দে রয়েছেন বলে মনে হয়েছে। মূলত এই দুজনের প্রচেষ্টাতেই নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান তোলে চেন্নাই। অন্যদিকে ব্যাট করতে নেমে রাজস্থান তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে প্রদর্শন করতে পারে নি। এই ম্যাচে তারা হেইনরিখ ক্লাসেনকে উপরের দিকে তুলে আনলেও তিনি চূড়ান্তভাবেই ব্যর্থ হন। অন্যদিকে পাওয়ার প্লে’ চলাকালীন সিএসকের বোলারদের আঁটোসাটো বোলিংয়ে পরথম পাঁচ ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে রাজস্থান। বেন স্ট্রোক এবং জোস বাটলার খানিকটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই দুজনে কখনও সিএসকের বিশাল লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছিও পৌঁছে পারেন নি। শেষে পর্যন্ত মাত্র ১৪০ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা।
শেন ওয়াটসন– ম্যান অফ দ্য ম্যাচ
আজ আমার বাড়তি মোটিভেশন ছিল সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই (আগের দলের বিপক্ষে খেলতে নামায়)। আজকের পারফর্মেন্সে আমি দারুণ সন্তুষ্ট। সিএসকের কাছ থেকে সুযোগ পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। তার প্রতিদান দিতে পেরে আমি খুশি। (ক্যাচ ফেলে দেওয়া নিয়ে) ম্যাচের প্রথম দু’ এক ওভারে যা ঘটেছে তা নিয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। ওগুলো নিয়ে ভাবার কিছু নেই, কিন্তু এভাবেই ইনিংসটা এগিয়ে গেছে। আজ রাতে আমি যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই হয়েছে, সবচেয়ে বেশি রান করার সুযোগ পেয়েছি। যখন আপনি মনে করবেন যে আর কিছুই আপনি শিখতে পারছেন না তখন সেটাই সঠিক সময় থেমে যাওয়ার। আমি এখনও আমার খেলার বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে কাজ করে চলেছি। ধোনি এবং ফ্লেমিং জানে কিভাবে একটা শক্তিশালী দল গড়তে হয়। সিএসকের হয়ে খেলতে পেরে আমি ভাগ্যবান সেই সঙ্গে আজকের জয়ে নিজের অবদান রাখতে পেরে। টি২০ ফর্ম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ক্রিস (গেইল)। ও টি২০তে বহু সেঞ্চুরিই করতে সক্ষম। এই কারণেই ওকে উইনিভার্সাল বস বলা হয়। এই মুহুর্তে সারা বিশ্ব জুড়েই ওর আক্রমণের কর্তৃত্ব চলছে”।
অজিঙ্ক রাহানে–রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক
“ সিএসকে যেভাবে খেলেছে তাতে পুরো কৃতিত্বটাই ওদের, বিশেষ করে শেন ওয়াটসন যেভাবে খেলেছে। দূর্ভাগ্যবশত আমরা বেশ কিছু ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ও যেভাবে খেলে তা অতুলনীয়। ভাল ফিল্ডিং এবং ক্যাচ নেওয়া ম্যাচ জিততে সাহায্য করে। ফিল্ডিং নিয়ে পরিশ্রম করছে আমাদের ছেলেরা। এই মুহুর্তে আমাদের উচিৎ পরিশ্রম করা এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলা। খানিকটা খারাপ বল করেছি আজ আমরা। সোজা লাইন এবং লেংথে বল করেছে ওরা। যা মারা খুবই কঠিন। আজ রাতে সিএসকে দুর্দান্ত খেলেছে। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের নিজেদের সক্ষমতার উপর ভরসা রাখা। আমাদের উচিৎ মাঠে নেমে উন্নতির চেষ্টা করা এবং পজিটিভ থাকা। ওর (ওয়াটসন) ইন্টেনসিরটি সত্যিই আজ অন্যরকম ছিল। ওর প্রথম বল থেকেই দারুণ পজিটিভ ছিল”।
চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক ধোনি
“আমাদের জন্য খুবই বড় ম্যাচ ছিল, আগের ম্যাচটা আমরা হেরে গিয়েছিলাম। এটা আমাদের কাছে একটা অপরিচিত জায়গায় মতই ছিল। খাদে নামার আগে সিএসকে সামান্য পেছনে থাকতেই অভ্যস্ত। এ বছরটা সম্পুর্ণ আলাদা। প্রত্যেকেই সহযোগ দিচ্ছে। ফিটনেস লেভেলকে উপরের দিকে ধরে রাখতে হবে, কারণ আমাদের বেশিরভাগ প্লেয়ারেরই বয়েস ৩০ এর উপর। এটা খুবই লম্বা প্রতিযোগিতা, ফলে ফিট থাকতে হবে। অভিজ্ঞতা সত্যিই দাম দেয়। আহত হওয়ার কোনও মানেই নেই যখন আপনি এক বা দু রান আটকানোর চেষ্টা করছেন। যে ধরনের প্লেয়ার আমাদের রয়েছে, তারা সবসময়েই এটাকে উপরের দিকে ধরে রাখবে। আমাদের কিছু ভাল ফিল্ডার রয়েছে যারা সত্যিই খুব ভাল। তারা বেশিরভাগ কাজটাই করে যখন এটা বাউন্ডারি ফিল্ডিংয়ের ব্যাপার হয়। শুধু প্লেয়ারদের ফিট রাখতে চাই। ভেনু বদল নিয়ে – সত্যি বলতে কি—সিএসকে ওখানে প্রায় দু বছর ধরেই নেই। ওই সময়টায় আমি পুণের হয়ে খেলছিলাম। ফ্যানেরা এখানেও রয়েছে, তারা দলকে সমর্থন করছে এবং আমার পেছনেও রয়েছে তারা।
এটাই সময় ওদের সমর্থন ফিরিয়ে দেওয়ার। ওদের কাছে চয়েস রয়েছে সিএসকেকে সমর্থন করার বা অন্য দলকেও সমর্থন করার। ৭টা ম্যাচ শেষে আমরা সকলেই দেখেছি ভিড়ের মধ্যে প্রচুর হলুদ রঙ রয়েছে। এটা চেন্নাই সুপার কিংস, পুণে সুপার কিংস নয়। উইকেট নিয়ে চিন্তা করতে গেলে, আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে বল ভালভাবে আসবে, বিশেষ করে যখন বল পুরোনো হয়ে যাবে। পিচে স্পঞ্জি বাউন্স ছিল। ব্যাক অফ দ্য লেংথ বলকে মারা কঠিন ছিল। ব্যাটসম্যানরা তাদের কাজটা করেছে, স্কোরবোর্ডে যা দরকার ছিল তার থেকেও বেশি করেছে ওরা। বোলারদের জীবন সহজ করে দিয়েছে ওরা। পেসের সঙ্গে সঙ্গে স্পিন বোলারদের লাইন এবং লেংথে বৈচিত্র ছিল। এটা লিগ পর্যায়, এটা কোয়ার্টার বা সেমিফাইনালের মত নয়, যেখানে আপনার হেরে যাওয়া মানে চলে যেতে হবে। ফলে এখানে ওইরকম চাপটা নেই। সিএসকের জন্য যখনই আমরা চেন্নাইতে খেলি, তখন আমরা সাধারণত বেশিরভাগ সময়ই চেন্নাইতে আগে ব্যাট করি। শিশির এখানে একটা ফ্যাক্টর ছিল। আজও এখানে শেষ দিকে সামান্য শিশির ছিল। আমি ফিল্ডারদের বল এবং সবকিছুই পুছতে দেখেছি। ধীরে ধীরে কি হয় মানুষ সবকিছুতেই যেভাবেই হোক সহজ হয়ে যায়। যদি উইকেট ভাল হয় তাহলে বেশিরভাগ দলই প্রথমে ব্যাট করুক কি পরে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না”।