যদিও ক্রিকেট মহলে প্রত্যেকের ধারনা বিরাট কোহলির দুর্দান্তভাবে উঠে আসার পেছনে রয়েছে তার কঠোর পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতা, কিন্তু খোদ বিরাটের ধারণা তা নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে গড়পড়তা ভাবে আত্মপ্রকাশের করার পর ২৮ বছর বয়েসি বিরাট এই মুহুর্তে তর্কাতিতভাবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানের সারিতে নিজেকে বসিয়ে ফেলেছেন। টেস্টে ৪টে দুর্দান্ত ডবল সেঞ্চুরি, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনায়াসে রান করা করা কোহলি এই মুহুর্তে এমন একটা নাম, গত কয়েক বছরে যাকে আটকানো বিপক্ষের কাছে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অধিনায়ক হিসেবেও তার ট্রাক রেকর্ড যথেষ্ট ঈর্ষণীয়। টি২০ এবং একদিনের ক্রিকেটের এক নম্বর ব্যাটসম্যান অধিনায়ক হিসেবে হয়তবাই কোনো টেস্ট বা ওয়ান ডে সিরিজ হেরেছে। এবং দিনের পর দিন নিজের শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কোহলি মনে করেন ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক হিসেবে তার সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার লেডি লাক। এবং সেই লেডি লাক তার উপর বর্ষিত হচ্ছে কোহলির দীর্ঘদিনের বান্ধবী অনুষ্কা শর্মার মাধ্যমে। অনুষ্কা এবং বিরাটের সম্পর্ক ক্রমশ আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এবং সাবেকি মত অনুসারে তার জীবনে বলিউডি নায়িকার আগমন মানুষ হিসেবেও বিরাটকে আরও উঁচুতে নিয়ে গেছে। ‘ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়ান’ এর সেটে এই ভারতীয় রান মেশিন জানিয়েছেন তাদের চার বছরের সম্পর্কে কিভাবে অনুষ্কা তাকে একজন বিচক্ষণ ও ধৈর্যশীল মানুষ হিসেবে বদলে দিয়েছেন। ওই টিভি শোয়ের সেটে বিরাট জানান, “ স্যার লেডি লাক কা কামাল হ্যায় (সবই লেডি লাকের কেরামতি) তুমি (গৌরব) আমাকে আগেও দেখেছ, তুমি জানো আগে আমি বুদ্ধিহীন ছিলাম। যবে থেকে ও আমার জীবনে এসেছে, তারপর থেকে জীবন সম্পর্কে ও অনেক কিছুই আমাকে শিখিয়েছে। আমি অনেক কিছুই শিখেছি। ওর জন্যই গত চারবছরে আমি অনেক বেশি বিচক্ষণ হতে পেরেছি। ও আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ধৈর্য রাখতে হয়, এবং শিখিয়েছে নিজের পরিপূর্ণ অবস্থান এবং জায়গা সম্পর্কে সচেতন হতে এবং তাকে ব্যবহার করতে”। কোহলি নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করে জানান কিভাবে অনুষ্কা অবিচলিত ভাবে তার পাশে থেকে তাকে ভরসা জুগিয়ে গেছেন তার খারাপ সময়ে, বিশেষ করে ২০১৪ র ইংল্যান্ড সফরের সময় যখন তিনি নিজের খারাপ ফর্মের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। “সৌভাগ্যবশত আমি নিজে কখনোই নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করি নি। তা সত্ত্বেও যে আমার মধ্যে যে পরিবর্তনটা এসেছে সেটা ওর কারণেই। ২০১৪ য় ইংল্যান্ড সফরের ওই সময়টায় অনুষ্কা আমার সঙ্গেই ছিল। ও বুঝতে পেরেছিল আমি কোন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, তাই ও ক্রমাগত আমাকে মোটিভেট করে গেছে। ওর সাপোর্ট আমাকে সাহায্য করেছিল সব কিছু থেকে বেরিয়ে আসতে। তবে তা খুবই খারাপ সময় ছিল আমার জন্য। সেই সময় ও সবসময় আমার সঙ্গে ছিল। তারপরই সেই দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়া সফর (২০১৪-১৫ র সফরে কোহলি পরপর চার টেস্টে চারটি শতরান করেন)। এবং ওর উপস্থিতিতেই আমি রানের মধ্যে ফিরি। এটা আমাদের দুজনের কাছেই খুবই স্পেশাল মুহুর্ত, কারণ ওই সময় ওকেও অনেক কিছু সামলাতে হয়েছিল”। আর পাঁচটা সেলিব্রিটি জুটির মত অনুষ্কা এবং বিরাট নিজেদের সম্পর্কের ব্যাপারে কখনই পাবলিকলি মুখ খোলেন নি।
এবং এই কারণেই ক্রিকেটাররা বিরাটের এক সময়ে সতীর্থ জাহির খানের মতই বিরাটকে কৃতিত্ব দিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে বিরাট বলেন, “আমার সম্পর্ক না লুকোনোর পিছনে যে কারণ রয়েছে তা হলে জাহির খান। সৌভাগ্যবশই ও তাদের মধ্যে অন্যতম যার সঙ্গে প্রথম আমার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলি। আমি জাহির আমাকে পরামর্শ দিয়েছি, তুমি যাই করো না কেন, কখনই তা লুকোবার চেষ্টা করবে না, তাহলে তুমি নিজেই নিজেকে হতাশার মধ্যে ফেলবে। আর তার চেয়েও বড়ো কথা তুমি একটা সম্পর্কের মধ্যে আছে। আর তুমি ভুল কিছু করছো না”। বিরাট আরও বলেন, “আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে এ ব্যাপারে আমার প্রথম কথা হয় জাকের সঙ্গে। এবং ও আমাকে একদম সঠিক পরামর্শ দিয়েছিল। এবং আমি এখনও পর্যন্ত সেটাকেই অনুসরণ করে চলেছি”।