সমস্ত ঠাট্টার যোগ্য জবাব দিল কলকাতা নাইট রাইডার্স, তাদের উদ্দেশ্য করা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোল করে বলা হচ্ছিল যে এই মরশুমে আইপিএলের সবচেয়ে দুর্বল দল তারা। বেগুনী-সোনালী জার্সিধারীরা এই মরশুমে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া কার্তিকের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়িয়ে প্রথম ম্যাচেরি শক্তিশালী আরসিবিকে হারিয়ে প্রমান করে দেয় যে শুরু সংখ্যা বাড়ানোর তালিকাতে নাম লেখাতে আসে নি তারা। দলগতভাবে লড়াই করে শক্তিশালী আরসিবিকে চার উইকেটে কার্যত উড়িয়েই দেয় তারা। তবে কেকেআরের জয়ের চেয়েও বেশি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বোলিং বিভাগ নিয়ে। বলা হচ্ছে এখনও পর্যন্ত এটাই তাদের সেরা বোলিং বিভাগ। আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তাদের ওপেনার ডি’কককে হারায় ব্যাঙ্গালুরু। যদিও আরেক ওপেনার ম্যাকালাম ছিলেন মারকুটে মেজাজেই। শুরু থেকেই দ্রুত গতিতে রান তোলার দিকে নজর দেন তিনি। অন্য দিকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে এসে কেকেআরের বিরুদ্ধে ব্যাট ঝলসাতে ব্যর্থ হন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সেই সময় খানিকটা স্থির হয়ে যায় আরবিসির ব্যাটিং। পরিস্থিতির বদল ঘটে এবি ডেভিলিয়র্স ক্রিজে আসার পর।
প্রথম থেকেই বিপক্ষের সেরা বোলারের বিরুদ্ধে নিজের অভিনব শট খেলা শুরু করেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। মাত্র ২৩ বলে ৪৪ রান করে আরবিসির মিডল অর্ডারকে খানিকটা নির্ভরতা দিলেও নিজের ইনিংসকে বড় রানে বদলাতে ব্যর্থ হয়ে অনিয়মিত বোলার নীতিশ রানার বলে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন তিনি। একইভাবেই রানার পরের বলেই আউট হন অধিনায়ক বিরাটও। তবে লোয়ার অর্ডারে মনদীপ সিং ঝোড়ো ব্যাটিং করে দলের রান নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭৬ রানে নিয়ে যান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে কেকেআরকে প্রয়োজনীয় গত দিয়ে দেন সুনীল নারিন। প্রথম থেকেই ব্যাটে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তার সামনে আসা সমস্ত বোলারকেই আক্রমন করে মাত্র ১৭ বলে ৫০ রান করে গতবারে আরসিবির বিরুদ্ধে করা ইনিংসেরই পুণরাবৃত্তি ঘটান তিনি।
নারিন ধামকা এমনকী আরেক ওপেনার ক্রিস লিনের ব্যর্থতাকেও ঢেকে দেয়। এরপরেই দ্রুত আউট হয়ে ফিরে যান উথাপ্পা। তবে মাঝের ওভারে দীনেশ কার্তিক এবং নীতিশ রানার জুটি মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। শেষ দিকে উইকেট পড়লেও তার কোনও প্রভাব পড়ে নি কেকেআরের জয়ে। উইকেটের অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিনয় কুমারের জয় সূচক শট নেওয়ার সাক্ষী থাকেন কার্তিক। এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হন সুনীল নারিন।
পুরস্কার নিতে এসে তিনি বলেন, “ প্রথম ম্যাচ থেকেই বলকে টার্ণ করতে পারা বেশ ভালো লক্ষণ। সাপোর্ট স্টাফ থেকে শুরু করে দলের প্রত্যেকেই আমাকে ব্যাটিং ওপেন করার সুযোগ করে দিয়েছিল। দল আমাকে যে কোনও ভূমিকাতেই খেলাতে চাইবে, আমি সেটা পালন করতে পারলে খুশি হব। ক্রিকেটের জন্য এটা খুবই ভালো একটা উইকেট। এইরকম মাঠে আপনি যাই করতে চাইবেন তাই আপনাকে ফায়দা দেবে”।
অন্যদিকে ম্যাচের শেষে বিজয়ী দলের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক জানিয়েছেন, “ খুব ভালো লাগছে। শুরুতেই ভালো কিছু করতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। আমার মনে হচ্ছিল জোরে বোলারদের বল ভালো মত আসছিল। যখন এবি এবং বিরাট ব্যাট করছিল তখন ভীষণই মুশকিল ছিল। আমরা শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছিলাম ও ( নারিন) যাতে ঠিক মত কিছু বল খেলে। আমরা সকলেই দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য খেলি। আমরা এমন একটা দলের জন্য এবং এমন সুন্দর দর্শকদের জন্য এভাবেই খেলতে চাই”।
ম্যাচ শেষে আরসিবির অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে স্পষ্টতই হতাশ দেখায়। ম্যাচ শেষে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ আমার ধারণা ব্যাট হাতে আমরা প্রায় ১৫ রান কম করেছি। আমি নিজেও অনেক বেশি ডট বল খেলেছি এবং বলার মত কোনও মূহুর্তই আমরা তৈরি করতে পারি নি। এবির এবং আমার একজন অনিয়মিত বোলারের পরপর ২ বলে আউট হওয়াটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। যেভাবে নারিন ব্যাট করেছে তাতে ওই ম্যাচ আমাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। এই ধরনের উইকেটে যদি প্রথম ওভারেই আপনি ১৩ রান দিয়ে ফেলেন তাও মাত্র এক ওভারেই তাহলে সেখানে থেকে ম্যাচে ফেরাটা যথেষ্টই কঠিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের পিচে বল করাটা স্পিনারদের পক্ষে খুবই কঠিন। এই ধরনের পিচে জোরে বোলাররা কিছুটা সুবিধা পেতে পারে এবং আপনি রানও করতে পারবেন। বিগত কয়েক বছরে এটা বেশ ভালো ক্রিকেটের একটা উইকেট তৈরি হয়েছে। এই ম্যাচে আমরাও ভালো খেলেছি ম্যাচ ১৯ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে, ওই উইকেট গুলো নেওয়ার কিন্তু খুব পজিটিভ একটা দিল আমাদের জন্য”।