এই মরশুমের আরও একটি রুদ্ধশ্বাস আইপিএল লড়াইয়ের উদাহরণ থাকল আরসিবি বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ। একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে দুদলই চিন্নাস্বামীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সর্বশক্তি দিয়ে। যদিও চেন্নাই আরসিবিকে উড়িয়ে দিয়ে এই ম্যাচ জিতে নেয় পাঁচ উইকেটে। এক সময় চেন্নাইকে দেখে মনে হয়েছিল হয়ত এই ম্যাচে তারা হারের মুখে পড়তে চলেছে। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। আরসিবির দুই ওপেনার কুইন্টন ডি’কক এবং বিরাট কোহলির উপর নির্ভর করে শুরুটা ভালই করেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। কিন্তু দ্রুতই আরসিবিকে সমস্যায় ফেলে কোহলিকে আউট করে দেন শার্দূল ঠাকুর। এরপরই ক্রিজে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ব্যাটসম্যান এবি ডেভিলিয়র্স। প্রথম থেকেই নিজের উদ্দেশ্য পরিস্কার করে দেন এবি। ২ চার এবং ৮ দানবিক ছয়ের সাহায্য মাত্র ৩০ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। আরে দক্ষিণ আফ্রিকান ডি’ককও এবিকে যোগ্য সহায়তা করে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।
কিন্তু এই দুজনের পার্টানারশিপ ভাঙার পরই সমস্যায় পড়ে যায় আরসিবি। যে সময় মনে হচ্ছিল বড় রান করতে চলেছে আরসিবি ঠিক তখনই ইমরান তাহিরকে মারতে গিয়ে ধরা পড়ে এবি। দ্রুতই আরসিবির মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে। যদিও শেষ দিকে মনদীপে সিংহের দ্রুত অথচ সংক্ষিপ্ত ইনিংসের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০৫/৮ রান করে ব্যাঙ্গালুরু। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চেন্নাইয়ের ফর্মে থাকা ওপেনার অথা আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিকারি ওয়াটসন ইনিংসের প্রথম ওভারেই পবন নেগির বলে ফিরে যান। এই ম্যাচে ব্যর্থ হন সুরেশ রায়নাও। আরসিবির রিস্ট স্পিনার যজুবেন্দ্র চহেল দুরন্ত লেগ ব্রেকে ফিরে দেন চেন্নাইয়ের দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান স্যাম বিলিংস এবং রবীন্দ্র জাদেজাকে। একসময় ৭১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বিপদে পড়ে যায় চেন্নাই। একদিক ধরে রেখে চেন্নাইকে নির্ভরতা দেওয়ার চেষ্টা করেন আম্বাতি রায়ডু। এইখান থেকেই তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এই দুজনে মিলে ১০১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দু বাল বাকি থাকতেই চেন্নাইকে জয় এনে দেন। ম্যাচ শেষে তার দুরন্ত ইনিংসে সৌজন্য এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তথা চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি বলেন, “ আরও ভাল প্রদর্শন করবে শার্দূল। ও যতবেশি চাপের মুখে পড়বে এবং টুর্নামেন্ট যত এগোবে ও ততই আরও ভাল ফল করবে। কত ওভার বাকি রয়েছে এবং ডেথ ওভারে কে বল করবে, ওই নির্দিষ্ট উইকেটে কে বিপক্ষের সেরা বোলার যাকে আপনি মারতে পারবেন এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হারতে বা জিততে পারেন, তবে যদি আপনি প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখেন তবেই আপনি সঠিক পথে থাকতে পারবেন। কি ধরনের খেলা তারা গেলতে পারবে কিংবা তাদের বাস্তবিক শক্তি কতটা এটা অনেকেই জানে না। এটা একজন ফিনিশারের কাজ বলে আমার মনে হয়। আপনি নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রান করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে খেলতে হবে, উইকেটের মাঝে দ্রুত রান কিভাবে করতে হবে, কিংবা কিভাবে বোলার আপনার ব্যাটিং স্টাইল অনুযায়ী বল করতে পারে এসব বলে দিয়ে আপনি অন্য ব্যাটসম্যানদেরও সাহায্য করতে পারেন”।
“বাস্তবে এটা ভীষণ ম্যাটার করে। শুধুমাত্র আমার ডেথ ওভারে ব্যাটিং করার ব্যাপার নয় এটা। তরুনদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, কিংবা সেই ব্যাট করুন না কেন তাদের রান করতে সাহায্য করাটাই ব্যাপার। কারণ কাল হয়ত আমি তার সঙ্গে ব্যাট নাও করতে পারি কিংবা আমি দ্রুত আউট হয়ে যেতে পারি। সেই সময় কিন্তু তার কাজটা তাকেই করতে হবে। রায়ডুর ব্যাটিং আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ও সবসময় স্কোরবোর্ডকে সচল রাখে। ইনিংস বিরতির সময় আমার মনে হয়েছে রান তাড়া করাটা শক্ত। কারণ আমার মনে হয়েছিল এবি দারুণ ব্যাট করতে ও ২০০ রানের বেশি স্কোর করে দেবে। সেটা তাড়া করাটা কঠিন হয়ে যাবে। ওভার প্রতি ১৫-২০ রানটা অনেকটাই বেশি। আমাদের চাবি কাঠি ছিল দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাদের আমরা দ্রুতই হারিয়ে ফেলি। চারদিক থেকেও আমরা ঝুলে ছিলাম। খুবই ছোটো মাঠ এটা, বলও ঘুরছিল সেইসঙ্গে সামান্য শিশির ছিল এটাই আমাদের পক্ষে গেছে। রায়ডু সত্যিই অসাধারণ ব্যাট করেছে। আমাদের দারুণ পার্টনারশিপ হয়েছে, এবং ব্র্যাভোও শেষ দিকে স্ট্রাইক নিয়েছে। সবমিলিয়ে সঠিকভাবেই চিত্রনাট্য অনুযায়ী কাজ হয়েছে। আমরা যেমনটা পরিকল্পনা করেছিলাম এটা তেমনভাবে হয়নি। কিন্তু তাও বলব চিত্রনাট্যটা ভালই ছিল। উইকেট সামান্য স্লো ছিল, এবির ইনিংসটা এ কারণেই স্পেশাল। এভাবে ব্যাট করার মত উইকেট এটা নয়। ওর কৃতিত্ব এটাই। মানুষ আমাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে আমরা বড় রান তাড়া করেছি এবং একই সময়ে আমাদের বোলাররা ডেথ ওভারে ভাল বল করেছে সবমিলিয়ে আমি খুশি”।