আইপিএলে এবছর নতুন কিছু নিয়মের প্রবর্তন করেছেন আয়োজকরা, যা বহু মানুষই স্বাগত জানিয়েছেন। আইপিএলে নতুন প্রবর্তিত ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম যেখানে আম্পায়ারদের বহু ভুল সিদ্ধান্তকে শুধরে দিয়েছে তেমনি একই রকমভাবে প্রতিযোগিতার মাঝ পথেই ট্রান্সফার উইন্ডোর ধারণাটিও দর্শকদের মনে প্রবল উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ট্রান্সফার উইন্ডোর এই কনসেপ্টটি প্রথমবার ব্যবহার হচ্ছে ক্রিকেটে। যদিও এই পরকল্পনাটি এসেছে ফুটবল লিগ থেকে যেখানে মরশুমের মাঝখানেই দলবদল করতে পারেন খেলোয়াড়রা। যদিও এই প্লেয়ারবদলের একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড রয়েছে। এই প্রতিযোগিতার মাঝপথে একমাত্র দুটি বা তার সামান্যবেশি ম্যাচ খেলা ক্যাপড এবং আনক্যাপড প্লেয়াররাই দল বদল করতে পারবেন। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এই দলবদল দেখা যথেষ্টই মজাদার চতে চলেছে দলগুলির কাছে। এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল এই প্লেয়ার বদলের ফলে এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টে খারাপ পজিশনে থাকা দলগুলি নিজেদের ভুলত্রুটি গুলোও শুধরে নিতে পারবে। এখনও পর্যন্ত চেন্নাই সুপার কিংস এই মরশুমে ফিরে আসার পর থেকেই যথেষ্ট ভাল ছন্দে রয়েছে। ৬টি ম্যাচ খেলে এই প্রতিযোগিতায় ৫ টি জয় তুলে নিয়েছে তারা। তাদের ব্যাটিং বিভাগকে শক্তিশালী দেখালেও বল হাতে তাদের যথেষ্টই মুশকিলে পড়তে দেখা গেছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারকেও তারা হারিয়েছেন চোটআঘাতের কারণে। অন্যদিকে তদের পেসার লুঙ্গি এনগিডি দেশের ফিরে গিয়েছেন বাবার মৃত্যুর কারণে। ফলে যথেষ্টই দুর্বল হয়ে পড়েছে ধোনির বোলিং বিভাগ। ফলে এই ট্রান্সফার উইন্ডোতে নিজেদের দুর্বলতাগুলিকে ঢাকার মরিয়া চেষ্টা করবে চেন্নাই।
যে পাঁচজন প্লেয়ারের দিকে লক্ষ্য থাকবে তাদের:
১. জেপি দুমিনি (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)
মুম্বাই ইন্ডিয়াস জানুয়ারিতে ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত আইপিএল নিলামে তার বেস প্রাইস ১ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার একটি ম্যাচেও তাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় নি দুমিনিকে। কারণ মুম্বাই ওপেনিংয়ে এভিন লুইস এবং মিডল অর্ডারে কায়রণ পোলার্ডের মত ব্যাটসম্যান এখনও পর্যন্ত প্রথম একাদশে সুযোগ পান নি এই দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা। সম্ভবত এই মুহুর্তে তার জন্য কোনও সুযোগই নেই মুম্বাই দলে। ফলে সিএসকে তাকে তাকে তাদের ব্যাটিং লাইনআপে সঠিকভাবেই ব্যবহার করতে পারবে। যদিও তাদের শীর্ষক্রম যথেষ্টই ভাল পারফর্ম করছেন এই টুর্নামেন্টে কিন্তু মিডল অর্ডারে একজন বাঁহাতি থাকায় বাড়তি সুবিধা পাবে চেন্নাই। যেহেতু দুমিনি একজন প্রপার ব্যাটসম্যান ফলে তাকে তাদের ব্যাটিং লাইন আপে চার বা পাঁচ নম্বরে সঠিকভাবে উপযোগী প্রমানিত হতে পারেন তিনি। এছাড়াও যে স্টাইলে ব্যাট করেন দুমিনি তাতে ডেথ ওভারে বিপক্ষের বোলারদের সমস্যায় ফেলে তিনি দলের জন্য আরও বেশি রান তুলতে সক্ষম হবেন।
2। সন্দীপ লামিছানে (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
সন্দীপ লাছিমানে আইপিএলের ইতিহাসে নেপাল থেকে আসা একমাত্র প্লেয়ার। যদিও এখনও পর্যন্ত এই মরশুমে অভিষেক হয় নি তার একটিও ম্যাচে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার সন্দীপের মত একজন মিস্ট্রি স্পিনারকে কেন এখনও পর্যন্ত দিল্লি ব্যাবহার করে নি সে ব্যাখাও নেই কারও কাছে। যেখানে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাদের এক্স ফ্যাক্টর বোলার মুজিব জর্ডনকে এই মরশুমের প্রথম ম্যাচ থেকে প্রথম একাদশে রেখেছে সেখানে দিল্লি কেন সন্দীপের মত বোলারকে ব্যবহার করেন নি তা সত্যিই অবাক করার মত ব্যাপার। তবে সন্দীপের জন্য মাঠে নেমে প্রচুর আত্মবিশ্বাস পাওয়ার জন্য তার পক্ষে সম্ভবত দল বদলানো মঙ্গলজনকই হবে। অন্যদিকে চেন্নাই দলে কর্ণ শর্মা এবং ইমরান তাহিরের মত স্পিনার থাকলেও তাদের দল স্পিন বোলিংয়ে রহস্যের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ফলে এই ১৭ বছর বয়েসী নেপালী স্পিনারের সংযুক্তি তাদের দলে বাড়তি চমক যোগ করবে সেই সঙ্গে সন্দীপএর স্বপ্নও সফল হবে ধোনির মত নেতার অধীনে খেলার।
৩. বাসিল থাম্পি (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)
মত মরশুমে সুরেশ রায়নার অধীনে গুজরাট লায়ন্স দলে খেলে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন বাসিল থাম্পি। তার গতির সঙ্গে সঠিক এবং নিয়ন্ত্রিত ইয়র্কার দেওয়ার সক্ষমতা তার প্রতি সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে এই তরুণ খেলছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে, যাদের বোলিং লাইনআপে এই মরশুমে বেশিরভাগই ভারতীয় বোলার রয়েছেন। ডেথ ওভার বোলিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যায় রয়েছে সিএসকে তাদের সেই সমস্যার যোগ্য জবাব হতে পারেন থাম্পি। বর্তমানে সিএসকে শেষ পাঁচ ওভারে ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সমস্ত চাপই এসে পড়েছে ডোয়েন ব্র্যাভো এবং শার্দূল ঠাকুরের কাঁধে, যারা স্লোয়ার এবং ইয়র্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক সময় দামী বেশ রান দিয়ে ফেলেন কিন্তু অনেক বেশি উন্নতি করতে পারবেন বেশি ম্যাচ খেলতে পারলে হায়দ্রাবাদের রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকার পরিবর্তে।
৪. খলিল আহমেদ (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)
হায়দ্রাবাদ এই মরশুমের নিলামে প্রচুর তরুণ ভারতীয় বোলারদের তুলে নিলেও তাদের জায়গা হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে, যা ধাক্কা দিতে পারেন এই তরুণ বোলারদের আত্মবিশ্বাসে। হায়দ্রাবাদ নিলামে খলিলকে কিনেছিল ৩ কোটি টাকায়। সম্প্রতিকালে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি২০ প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট প্রভাবশালী পারফর্মেন্স দিয়ে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছেন খলিল। বোলিং সমস্যায় জর্জরিত সিএসকের কাছে সুযোগ থাকবে খলিলকে তুলে নেওয়ার কারণ তার ওয়ান ডাইমেনশন বোলিং সিএসকে লাইনআপে বৈচিত্র এনে দিতে পারে। বাঁ হাতি জোরে বোলার হওয়ায় খলিল ব্যাটসম্যানদের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন চেন্নাইয়ের হয়ে, এছাড়াও তার তৈরি বোলিং অ্যাঙ্গেলেও সমস্যায় পড়তে পারেন বিপক্ষ ব্যাটসম্যান। যদিও তাদের দলে ডেভিড উইলির মত বোলার রয়েছেন কিন্তু একই ক্ষমতা সম্পন্ন এওজন ভারতীয় বোলার তাদের সবসময়ই বেশি সাহায্য করতে পারে এবং তার খেলার সুযোগই বেশি থাকবে। যদি খলিল তাদের দলে আসেন তাহলে বোলিং লাইন আপে নিশ্চিতভাবেই বেশ গতি এবং বৈচিত্র যোগ হবে।
৫. অভিষেক শর্মা (দিল্লি ডেয়ারডেভিলস)
ভারতীয় অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলের সদস্য অভিষেক শর্মাকে ৫৫ লক্ষ টাকায় তুলে নিয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। অসম্ভব প্রতিভাবান এই ১৭ বছর বয়েসী তরুণ বিশ্বকাপে দারুণ প্রভাবশালী পারফর্মেন্স দেখিয়ে ভারতকে বিশ্বকাপ জিততেও সাহায্য করেছিলেন। এখনও পর্যন্ত দিল্লির প্রথম একাদশে জায়গা পেয়ে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পান নি এই তরুণ। ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অভিষেকের উচিৎ এমন দল খুঁজে পাওয়া যাদের তাকে প্রয়োজন রয়েছে। চেন্নাইয়ের অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা এখনও পর্যন্ত এই মরশুমে সংঘর্ষ করে চলেছেন এবং এই টুর্নামেন্ট যথে থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকে দলে তার ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী তার বোলিং কার্যকরী হচ্ছে না সেভাবে। ফলে অভিষেক সম্ভবত তার তার সঠিক এবং উত্তেজক পরিবর্ত হতে পারেন। এই মুহুর্তে চেন্নাই বেশ ভালই ছন্দে রয়েছে এবং প্লে অফে যাওয়ার আগে অভিষেক এই দলের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচে সুযোগ পেতে পারেন।