অবসর নেওয়ার আগে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে বেশ কিছু কথা জোর গলায় জানিয়ে দিলেন আশিস নেহরা। দিল্লির এই বাঁহাতি অভিজ্ঞ পেস বোলারের বক্তব্য়, ধোনি এবং ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ও সহ-অধিনায়ক অজয় জাদেজা, তাঁর দেখা সবচেয়ে বিচক্ষণ ক্রিকেটার। আঠারো বছরের দীর্ঘ এই ক্রিকেট জীবনে অনেক বড় বড় ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছেন নেহরা। পয়লা নভেম্বর নিজের ঘরের মাঠ ফিরোজ শাহ কোটলায় আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্য়াচ খেলার আগে একটি সংবাদসংস্থাকে আশিস বলেন, ”আমার ক্রিকেট জীবনে যতজন ক্রিকেটারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তার মধ্য়ে অজয় জাদেজা এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী।”
১৯৯৯ সালে মহম্মদ আজহারউদ্দিনের আমলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হলেও নেহরার পুরো ক্রিকেট কেরিয়ারটা চোট-আঘাতে ভরা। দলে কামব্য়াক করেছেন, আবার চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। তবে, প্রতিবারই ফিরে এসেছেন সুস্থ হয়ে। ক্রিকেটকে এতটাই ভালোবাসেন যে বারোবার শরীরে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরও ফিট থাকতে জিমে যান এখনও। ২০০৭ সালে টেস্ট খেলা ছাড়ার পর ২০১১ বিশ্বকাপ খেলে একদিনের ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারিভাবে অবসর না নিলেও টি-২০ ম্য়াচ ছাড়া আর কোনও ফরম্য়াটে খেলেননি গত সাত বছর। এর মধ্য়েও চোট-আঘাত তাঁকে ভুগিয়েছে।
বিগ ম্য়াচ বোলার হিসেবে পরিচিত নেহরা তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারে আজহারউদ্দিন, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়, ধোনির মতো ভারত অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলছেন, এখন বিরাটের অধিনায়কত্বেও খেলছেন। ক্য়াপ্টেন কোহলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে নেহরা বলেন, ”দেখুন, বিরাটের কেরিয়ার এখন অটোপাইলটে আছে বলতে পারেন। ও ভালো করেই জানে, ও কি করছে। দলের সামনে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে অধিনায়কত্ব করছে। ওর কারও কাছ থেকে জ্ঞানের দরকার নেই কি করতে হবে। ওর প্রয়োজন, কেউ ওর পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন যোগাবে। রবি (শাস্ত্রী) ওকে সেটাই যোগাচ্ছে।”
নিউজিল্য়ান্ডের জন রাইট জমানা ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ হওয়ার পর নেতা সৌরভের হাত ধরে আসা অস্ট্রেলীয় কোচ গ্রেগ চ্য়াপেল বিতর্কের সময় নেহরা ভারতীয় দলের ভরসাযোগ্য় পেস বোলার ছিলেন। যদিও চোটের কারণে বেশি খেলতে পারেননি তিনি সেসময়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার গ্য়ারি কার্স্টেনের মতো একজনকে কোচ হিসেবে পায় ভারত। ওই সময় থেকেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ ভারতীয় দলের উত্থান। চ্য়াপেল সম্পর্কে নেহরা জানান, ”গ্রেগ চ্য়াপেলের অধীনে আমি বেশি খেলিনি। ২০০৫-এ দু‘টো মাত্র সিরিজ খেলেছিলাম (শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবোয়ে)। তবে, জানতাম বিরিয়ানি খিচুড়িতে বদলাতে বেশি সময় লাগবে না।”
দিল্লির এই বিগ ম্য়াচ বোলারটি এরপর কোচ গ্য়ারি কার্স্টেনের প্রশংসা করতে গিয়ে যা বললেন, তা অনেকেরই চোখে আঙুল দিয়ে সত্য়টা তুলে ধরার সমান। আর ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি জমানায় ট্রফি জেতার অভ্য়াসটা তৈরি হওয়ার মূল কারণ হিসেবে নেহরার বক্তব্য়, ধোনি যেটা চাইতেন, গ্য়ারি সেটাই করতে দিতেন। ”গ্য়ারি কোচ হিসেবে অসাধারণ ছিল। এমএস (ধোনি)-র সঙ্গে স্ট্র্য়াটেজি নিয়ে আলোচনা করত। তবে, ম্য়াচ চলাকালীন অন-ফিল্ডে কি হচ্ছে, কোনও দিন সে ব্য়াপারে নাক গলায়নি। এমএস অধিনায়কত্বের স্টাইল নিয়ে কোনওদিন কোনও প্রশ্ন তোলেনি।”
তবে, নেহরা গ্রেগ চ্য়াপেলকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে অত্য়ন্ত খারাপ মানের বর্ণনা করলেও, তাঁর মতে গ্রেগ চ্য়াপেল যুব দলের কোচ হলে কাজে লাগত। ”কিন্তু, একটা কথা বলব, আমি এখনও মনে করি, চ্য়াপেল যদি ভারতীয় জুনিয়র দলে কোচিং করাত, তাহলে ও একজন দুর্দান্ত কোচ হতে পারত।”