shastri-lauds-pant-at-bcci-awards-gala

BCCI Awards: গতকাল হায়দ্রাবাদে দেশের সেরা ক্রিকেট প্রতিভাদের সম্মানিত করলো ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই (BCCI)। কোভিড ও অন্যান্য সমস্যার কারণে গত চার বছর আয়োজন করা যায় নি অনুষ্ঠান। সেই কারণেই গতকাল একসাথে চার মরসুমের সেরা তারকাদের সম্মানজ্ঞাপন করলেন রজার বিনি (Roger Binny), জয় শাহ’রা। অনুর্দ্ধ-১৬ ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক সিনিয়র পর্যায় অবধি দেশ বা রাজ্য দলের জার্সি গায়ে যাঁরাই নজর কেড়েছেন গত চার বছরে, পুরষ্কৃত হলেন তাঁরা প্রত্যেকে। অবসর নেওয়ার পরেও ২০২০-২১ মরসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে পুরষ্কৃত হলেন মিথালী রাজ (Mithali Raj), ঐ একই মরসুমে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে পুরষ্কার পেলেন ঝুলন গোস্বামী। পুরুষ ক্রিকেটের তারকাদের মধ্যে পুরষ্কৃত হলেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন, মহম্মদ শামি (Mohammed Shami), শুভমান গিল’রা।

বিসিসিআই (BCCI) আয়োজিত ‘নমন’ অনুষ্ঠানের হাত ধরে মিললো ক্রিকেটের একাল ও সেকাল। ভারতের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক কর্ণেল সি.কে নাইডুর নামাঙ্কিত জীবনকৃতি সম্মান বা লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরষ্কার পেলেন ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার (Farokh Engineer) ও রবি শাস্ত্রী। মাইক হাতে আবেগে ভাসলেন ষাট-সত্তরে দশকে ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টারবয় ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার। সময়ের সাথে কতটা বদলেছে ক্রিকেট তা নিজের বক্তব্যে তুলে ধরলেন তিনি। দিনের একদম শেষ পুরষ্কারটি নিতে মঞ্চে এসেছিলেন রবি শাস্ত্রী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে মঞ্চ মাতিয়ে দিলেন তিনি। সঞ্চালক হর্ষ ভোগলের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন চলে শাস্ত্রী’র (Ravi Shastri)। প্রাক্তন ভারতীয় কোচকে নিজের দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্রিকেটযাপনের সেরা মুহূর্ত বেছে নিতে অনুরোধ করেছিলেন হর্ষ। খেলোয়াড় জীবন নয়, বরং কোচিং জীবনের গাব্বা জয়ের অভিজ্ঞতাকেই সেরা বাছলেন তিনি।

Read More: “এই রোহিত শর্মার দলই….”, পুরস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়েই টিম ইন্ডিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন ফারুক ইঞ্জিনিয়ার

পন্থের ব্যাটে গাব্বা বিজয়ই শ্রেষ্ঠ স্মৃতি, বলছেন শাস্ত্রী-

Rishabh Pant | BCCI Awards | Image: Getty Images
Rishabh Pant | Image: Getty Images

ভারতের হয়ে ১৯৮১ সালে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন রবিশঙ্কর জয়দ্রথ শাস্ত্রী (Ravi Shastri)। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সেই একই বছরের নভেম্বরে আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন বাম হাতি অফস্পিনার হিসেবে। পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড রয়েছে নামের পাশে। দেশের হয়ে ৮০ টেস্টে ৩৮৩০ রান করেছেন, নিয়েছেন ১৫১ উইকেট। একদিনের ক্রিকেটে ১৫০ ম্যাচে করেছেন ৩১০৮, নিয়েছেন ১২৯ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে জিতেছেন ১৯৮৩’র বিশ্বকাপ, ১৯৮৫’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। খেলা ছাড়ার পরেও কখনও ধারাভাষ্যকার আবার কখনও কোচ হিসেবে জড়িয়ে থেকেছেন ক্রিকেটের সঙ্গে।

বাইশ গজের দুনিয়ায় তাঁর অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতি গতকাল সন্ধ্যায় পেলেন রবি শাস্ত্রী। বিসিসিআই-এর  (BCCI) তরফে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরষ্কারে সম্মানিত করা হলো তাঁকে। ৪০ বছর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সঞ্চালক হর্ষ ভোগলে (Harsha Bhogle) শাস্ত্রীকে অনুরোধ করেন সেরা মুহূর্ত বেছে নিতে। উত্তরে তিনি বলেন, “মাত্র একটা মুহূর্তকে বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। ৮৫ সালে মেলবোর্নের ফাইনাল হতে পারে। কারণ ম্যাচটা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরান করা বা অস্ট্রেলিয়াতে  দ্বিশতরান করার অভিজ্ঞতাগুলোও উপরের দিকে থাকবে। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়ানোর সেই অভিজ্ঞতা, এম এস (ধোনি) যখন ২০১১তে ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্বকাপ জেতায় আমাদের, ২০০৭ সালে যখন ভারত টি-২০ বিশ্বকাপ জেতে, তখন আমিই ধারাভাষ্যকার ছিলাম…“

ব্যক্তিগত কোনো অর্জনকে সেরার শিরোপা দেন নি তিনি। বরং সব কিছুর উপরে রাখলেন ২০২১ সালে ভারতের গাব্বা বিজয়কে। আলাদা করে তারিফ করেন ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant)। তখন টিম ইন্ডিয়ার কোচ ছিলেন শাস্ত্রী। অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, “…অস্ট্রেলিয়ায় পরপর দুটো টেস্ট সিরিজ জিতেছি। তবে সবকিছুর উর্দ্ধে যদি কিছু থাকে সেটা গাব্বা টেস্টের শেষ দিনটা। যখন আমরা লক্ষ্যমাত্রাকে পেরিয়ে গিয়েছিলাম। ঋষভ পন্থ সেদিন যেভাবে আমাদের জয় এনে দিয়েছিলো, সেটা সবকিছুর উপরে থাকতে বাধ্য। আমি আমার দলকে সেই সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।” অস্ট্রেলিয়ার দূর্গে ভারতীয় পতাকা ওড়ানোর সেই অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন শাস্ত্রী। অজান্তেই গলা চড়ে গিয়েছিলো বেশ কিছু ডেসিবল। বিষয়টি খেয়াল করেন হর্ষ ভোগলে। তিনি বলেন, “ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রীর মধ্যে আমরা কয়েক ঝলকের জন্য ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীকে দেখতে পেলাম।”

মাঠে ফেরার পথে ঋষভ পন্থ-

Rishabh Pant | BCCI Awards | Image: Getty Images
Rishabh Pant | Image: Getty Images

গত ২০২২-এর ৩০ ডিসেম্বর এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। দিল্লী থেকে রুরকিতে নিজের বাড়িতে ফেরার সময় হাইওয়ের একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উলটে যায় তাঁর গাড়িটি। তাঁর কপালে, পিঠে, পায়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিলো। ছিঁড়েছিলো হাঁটুর লিগামেন্ট। প্রথমে দেরাদুনে ও পরে বিসিসিআই-এর (BCCI) তত্ত্বাবধানে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন আম্বানি হাসপাতালে চিকিৎসা হয় তাঁকে। অস্ত্রোপচারের পর চলে দীর্ঘ রিহ্যাব। বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (NCA) ফিরে আসার লড়াই চালাতে হয় তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে। ২০২৩ সালে ক্রিকেট মাঠে দেখা যায় নি তাঁকে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, আইপিএল, এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ-খেলতে পারেন নি কিছুই।

এক বছরেরও বেশী সময় মাঠের বাইরে থাকার পর অবশেষে মাঠে ফিরতে চলেছেন ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কয়েকবার ভিডিও পোস্ট করে ক্রিকেটতারকা অনুরাগীদের আশ্বস্ত করেন যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে তাঁর ফিরে আসার গত ১৯ ডিসেম্বর দুবাইতে আইপিএলের নিলা পর্বে ঋষভের উপস্থিত থাকা মুখে হাসি ফুটিয়েছে সমর্থকদের। সবকিছু ঠিক থাকলে আসন্ন আইপিএলেই কামব্যাক করতে চলেছেন তিনি। দিল্লী ক্যাপিটালস (DC) দলের ক্রিকেট ডায়রেক্টর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অবধি জানিয়েছিলেন আইপিএলে ঋষভকে ভেবেই দল সাজাচ্ছেন তাঁরা। জুন মাসে রয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ। গত বছরের এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ খেলতে পারেন নি ঋষভ। আপাতত জুন মাসের টি-২০ বিশ্বকাপকেই পাখির চোখ করছেন তিনি।

Also Read: BCCI Awards: দেশের সেরা ক্রিকেটারদের ‘নমন’ BCCI-এর, এক নজরে দেখে নিন পুরষ্কার প্রাপকদের সম্পূর্ণ তালিকা !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *