দশম আইপিএলের নিলামে ক্রিস ওকস ও ট্রেন্ট বোল্টকে নিয়ে চমকে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু সেই সময় কেকেআরের তারকা অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলের না থাকা নিয়েই ম্যূহমান ছিল সমর্থকেরা। তাই নিলামের বিষয়ে অতটা মাথা ঘামাননি কেউই। এটাও হয়ত খুব কম সমর্থকেরাই আশা করছিলেন, কেকেআর এইভাবে লিগের শুরুটা করবে। সেই অর্থে কেকেআরে কোনও বিশ্বমানের তারকা ক্রিকেটার নেই। তবুও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের দূর্দান্ত খেলায় চালকের আসনে কেকেআর।
এদিকে গুজরাট লায়ন্সে ম্যাককালাম, ফিঞ্চ, জাডেজা সহ বিভিন্ন তারকা ক্রিকেটার থাকলেও জয়ের খরা কাটতে চাইছে না। মঙ্গলবার আরসিবি পাহাড়প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে প্রায় কাছাকাছি চলে এলেও শেষ রক্ষা হয়নি। আগামী ম্যাচে কেকেআরের ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধেই খেলবে গুজরাট। জিততে পারবে কী তারা! একবার দেখে নেওয়া এই ম্যাচে কোন দলের পাল্লা ভাড়ি।
আইপিএল ২০১৭ঃ দিল্লি জয়ের পরেই একটা খারাপ খবরে ঘুম উড়ল কেকেআরের
দুই দল একনজরে
কেকেআর – এই দলের ওপেনিং জুটিতে বেশ ভালই রান আসছে। কারণ অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর নিজেই ইনিংসের শুরুটা করছেন। ধারাবাহিক খেলার জন্য এবারের কমলা টুপি-র অন্যতম দাবিদার তিনি। মিডল ওর্ডারে মনীষ পান্ডে ও ইউসুফ পাঠানের ফর্মে থাকায় অনেকটা শক্তি পেয়েছে কেকেআর। এছাড়া ট্রেন্ট বোল্ট ও উমেশ যাদবদের নিয়ে বোলিং বিভাগও যথেষ্ঠ গোছানো এই দলের।
গুজরাট লায়ন্স — ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, অ্যারোন ফিঞ্চের মত বড় বড় নাম এই দলে থাকলেও কিছুতেই উইনিং কম্বিনেশন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। যদিও বিশ্রাম সেরে ইতিমধ্যেই দলে ফিরেছে রবীন্দ্র জাডেজা। ডোয়েন স্মিথকেও ঠিক মত ফর্মে দেখা যাচ্ছেনা। ম্যাককালাম ও ফিঞ্চের ব্যাটেও ধারাবাহিকভাবে রান আসছেনা। এই সমস্ত কারণেই গত বারের লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা দল এই বছরে এখনও পর্যন্ত তালিকার শেষে রয়েছে।
দলের বিকল্প ব্যবস্থা
কেকেআর – গৌতম গম্ভীরের এই দল খুব একটা পরিবর্তন ঘটায় না। কারণ উইনিং কম্বিনেশন ছেড়ে তাঁরা বেরোতে চান না। তবে পীয়ূস চাওলা ও কূলদ্বীপ যাদবের মধ্যে কাকে নেওয়া হবে সেই নিয়ে টানাপোড়েনে আছে এই দল। এদিকে খুব শিঘ্রই দলে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে।
গুজরাট লায়ন্স – গুজরাটের এই ফ্রাঞ্চাইজি কেকেআরের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে আইপিএলের মূল স্রোতে ফিরতে চাইবেই। তবে শীঘ্রই দলে ফিরবেন ডোয়েন ব্রাভো। এছাড়া অধিনায়ক সুরেশ রায়নাকেও বড় ইনিংস খেলতে হবে। গতবারের আইপিএলে গুজরাট লায়ন্সের সর্বোচ্চ রানকারী রায়না, এই আইপিএলে ভাল খেলে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা করে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবে।
কে কোন জায়গায় শক্তিশালী
কেকেআর – শুধুমাত্র অধিনায়কই নন, কেকেআরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান হলেন গৌতম গম্ভীর। প্রতিটা ম্যাচে তাঁর ধারাবাহিক ফর্ম কলকাতার মূল শক্তি। আইপিএলে মোট ১৩৭ টি ম্যাচ খেলে তিনি ৩৩ টি অর্ধশতরান করে ফেলেছেন। তাঁর মোট রান ৩৮৩০। কাজেই বোঝা যাচ্ছে কেকেআর কতটা শক্তিশালী হাতে রয়েছে। এছাড়া ব্যাটিংয়ে রবীন উথাপ্পা, মনীষ পান্ডে, ইউসুফ পাঠান তো আছেই। বোলিংয়েও কম শক্তি নেই কেকেআরের। কারণ সুনীল নারিনের পাশাপাশি কূলদ্বীপ যাদবও নিজেকে রহস্যময় স্পিনার হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। এছাড়া পীয়ূস চাওলাও আরও একটি বিকল্প কেকেআরের।
গুজরাট লায়ন্স – এদিকে গুজরাট লায়ন্সের সবথেকে বড় শক্তি তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জেসন রয়, অ্যারোন ফিঞ্চ, ডোয়েন স্মিথ, সুরেশ রায়না। এই কটা নামই যথেষ্ট এই ব্যাটিং লাইনআপ কতটা শক্তিশালী তা বোঝানোর জন্য। আরসিবির বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ রান প্রায় ধরে ফেলেছিল এই ব্যাটিং লাইন আপ। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি, মুনাফ পাটেল, আন্ড্রু তায়ে, প্রবীন কুমার ও রবীন্দ্র জাডেজাকে নিয়ে বোলিং বিভাগও যথেষ্ট শক্তিশালী গুজরাটের।
মুখোমুখি হওয়ার ফল
লায়ন্স ও কেকেআর গত আইপিএলে দু’বার মুখোমুখি হয়েছিল। দু’বারই তাঁরা কেকেআরকে হারিয়েছিল। কিন্তু এই বছর উলট পুরান লেখা হয়েছে প্রথম ম্যাচে। গুজরাটের ঘরের মাঠেই তাদের পরাস্ত করে কেকেআর।
ম্যাচ শুরুর আগে মহিলা অ্যাঙ্কারের সঙ্গে এ কি লজ্জাজনক কাণ্ড ঘটালেন বিরাট!
ভবিষ্যতবানী
গত বছরের কথা ভুলে গিয়ে এই বছরের কথা চিন্তা করলে সহজেই এই ম্যাচে কোন দল শক্তিশালী তা বোঝা যাবে। কেকেআর এই মরশুমে এক অত্যন্ত শক্তিশালী দল হিসেবেই নিজেকে প্রমাণিত করেছে। তারই ফলপ্রসু এখনও পর্যন্ত কেকেআর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। এদিকে একের পর এক ম্যাচ হেরে গুজরাটের আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এবার আবার কলকাতার ঘরের মাঠেই খেলতে আসছে তারা। ফলে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, কেকেআর অবশ্যই এগিয়ে রয়েছে। তবে গুজরাটের তাবড় ব্যাটসম্যানরা এই ম্যাচে ভালো খেলে পাহাড় প্রমান রান তুলে দিলে খেলা জমবেই। প্রতিটা ইনিংসে ১৭০-১৮০ রান হলে খেলা রোমাঞ্চকর হবে এটা বলাই বাহুল্য।