অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজের প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে হারের পর, বেঙ্গালুরুতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট রোমাঞ্চকর ভাবে জিতে সিরিজের সমতা ফেরাল ভারত। বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম দিন টসে জিতে ভারত প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেও মাত্র ১৮৯ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় তারা।
এরপর অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে এগিয়ে থেকে তাদের প্রথম ইনিংস শেষ করে ২৭৬ রানে।
নিজেদের দলের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবল চেষ্টা করে যার ফলে তারা শেষপর্যন্ত ২৭৪ রান তুলতে সক্ষম হয় সেই ইনিংসে। অষ্ট্রেলিয়ার কাছে এই টেস্ট জয়ের জন্য ১৮৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়; যা শেষপর্যন্ত অনেক বেশী বলে প্রমাণিত হয়।
টেস্টের চতুর্থ দিনেই চা-বিরতির কিছু পরেই অষ্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১১২ রানে অলআউট হয়ে যায়। ভারত এই টেস্ট ম্যাচ জিতে নেয় ৭৫ রানে।
এই টেস্ট জয়ের ফলে ৪-ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের শেষে সিরিজ ১-১ ব্যবধানে সমান রইল।
এবার এক নজরে দেখে নেব এই টেস্ট ম্যাচের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানগত পর্যালোচনাগুলিঃ
১) এই টেস্টে প্রত্যাবর্তন করার আগে, অভিনব মুকুন্দ নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ভারতের ৫৬টি টেস্ট ম্যাচের পূর্বে। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র পার্থিব প্যাটেল এর থেকে বেশী সংখ্যক টেস্টে (৮৩টি টেস্টে) অনুপস্থিত ছিলেন তাঁর নিজের টেস্ট প্রত্যাবর্তনের আগে।
২) ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক উইকেটশিকারী অস্ট্রেলিয়ান বোলার হয়ে গেলেন অফস্পিনার নাথান লিয়ঁ। পূর্ববর্তী রেকর্ডধারী ব্রেট লি (৫৩টি টেস্ট উইকেট)-কে সরিয়ে তিনি চলে এলেন প্রথম স্থানে। এই টেস্ট শেষে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে লিয়ঁর মোট উইকেটশিকারের সংখ্যা ৫৮টি।
৩) ভারতের প্রথম ইনিংসে নাথান লিয়ঁ অসাধারণ বল করেছিলেন যা ছিল ২২.২-৬-৫০-৮। এটা শুধুমাত্র ভারতের বিরুদ্ধে কোনো অস্ট্রেলিয়ান বোলারের এক ইনিংসে সেরা টেস্ট বোলিং নয়, বরং উপরন্তু ভারতের মাটিতে কোনো বিদেশী বোলারের এক ইনিংসে সেরা টেস্ট বোলিং।
এছাড়াও কোনো অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার হিসেবে এক ইনিংসে করা দ্বিতীয় সেরা টেস্ট বোলিং পারফরম্যান্স (সেরা বোলিং পারফরম্যান্স – আর্থার মাইলে-র ৯/১২১) ছিল এটি।
৪) ভারতীয় ওপেনিং ব্যাটসম্যান কে এল রাহুল এই টেস্টের দুই ইনিংসে দুটি অর্ধশতরান করেন (৯০ ও ৫১)। তিনি হলেন ভারতের সপ্তম ওপেনিং ব্যাটসম্যান যিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে একটি টেস্ট ম্যাচের উভয় ইনিংসেই ৫০+ রান করেছেন। বাকি ৬ জন ভারতীয় ওপেনিং ব্যাটসম্যানগুলি হলেনঃ অশোক মানকাদ, চেতন চৌহান, নভজত সিং সিন্ধু, গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র সহবাগ এবং চেতেশ্বর পুজারা।
৫) অস্ট্রেলিয়াকে ভারতের দেওয়া ১৮৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা, ভারত শেষপর্যন্ত রক্ষা করতে সফল হয়েছে। টেস্ট ইতিহাসে, এটি যৌথভাবে ৩য় সর্বনিম্ন চতুর্থ ইনিংসের লক্ষ্যমাত্রা যা ভারতের মাটিতে শেষপর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে এবং ঐ সমস্তবারই ভারত-ই এই লক্ষ্যমাত্রাগুলি রক্ষা করেছে।
৬) ভারতীয় অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন হয়ে গেলেন ঘরের মাটিতে ২০০টি টেস্ট উইকেটদখলকারী দ্রুততম বোলার (ইনিংস সংখ্যার নিরিখে)। তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করতে নিলেন মাত্র ৫৯টি টেস্ট ইনিংস, যেখানে পূর্ববর্তী রেকর্ডধারী মুরলীধরন নিয়েছিলেন ৬১টি টেস্ট ইনিংস।
৭) এই টেস্টের চারটি ইনিংসেই চারটি ভিন্ন বোলার এক ইনিংসে ৬ বা তার অধিক উইকেট দখল করেছে। তাঁরা হলেনঃ নাথান লিয়ঁ (টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮/৫০), রবীন্দ্র জাদেজা (টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৬৩), যশ হাজেলউড (টেস্টের তৃতীয় ইনিংসে ৬/৬৭) এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন (টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৬/৪১)।
এই প্রথমবার একটি টেস্ট ম্যাচে তিনজনের বেশী ভিন্ন বোলার এক ইনিংসে ৬ বা তার অধিক উইকেট দখল করেছে।