শচীন যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন সে সময় ওয়ান-ডে ক্রিকেটও সাদা জার্সিতে খেলা হতো। একমাত্র ত্রিদেশীয় সিরিজ বা বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় রঙিন জার্সির দেখা মিলত। এরপর আসতে আসতে মধ্য়বিত্ত ঘরেতে যেমন রঙিন টিভি ছেয়ে গিয়েছিল নব্বইয়ের দশকে, সেভাবেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রঙিন জার্সিতে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ করাটা রুটিন হয়ে যায়। যত দিন বদলেছে, ক্রিকেট ততই রঙিন হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির রঙ-নক্সাও বদলেছে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকের কথা। ক্রিকেটে খেলাতেও ফুটবলের মতো জার্সি নাম্বার এলো। অনেকে একে স্বাগত জানিয়েছিলেন, আবার অনেকে মোটেই পছন্দ করেনি। যদিও সময়ের সঙ্গে সবই চোখ সওয়া হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেট থাকলেও, সোশ্য়াল মিডিয়ার যুগ তখনও আসেনি। স্কুল পড়ুয়াদের বেস্ট হবি তখনও, টিভিতে খেলা দেখা আর পরের দিন খবরের কাগজ থেকে প্রিয় ক্রিকেটারের ছবি কেটে ডায়েরি‘তে তুলে রাখা।
গত শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপের কথা। নিরানব্বইতে ভারত ইংল্য়ান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। ক্রিকেটারদের জার্সিতে তখন সবে সবে নম্বর বসেছে। শচীনের জার্সি নম্বর তখন নিরানব্বই। টুর্নামেন্টে বেশিদূর এগোতে পারেনি ভারত। এরপর দিন বদলেছে, সময় বদলেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে বদল এসেছে। শচীনের জার্সি নম্বরও বদলেছে। এরপর বরাবরের মতো জার্সি নাম্বার টেন ভারতীয় ক্রিকেটে শচীনের সম্পত্তি। ক্রিকেট অনুরাগীদের নানান আবেগ – অনেক ভালোবাসা, রাগ, মান, অভিমান, চাওয়া, পাওয়া ওই জার্সি নাম্বার টেনের সঙ্গে জড়িত। শুধু ভারতীয় বললে ভুল হবে। শচীন তেন্ডুলকর সবার। সারা ক্রিকেট বিশ্বের। ইশ্বর কি কারওর একার হতে পারে! শচীন একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) বলেছিল, ক্রিকেট দেবতার সম্মানে জার্সি নাম্বার টেন‘কে অবসর দেওয়া হল। ভারতীয় ক্রিকেটকে শচীন যা দিয়েছেন, তার বিনিময়ে ওই সম্মান তাঁর প্রাপ্য়। তিনি ক্রিকেট দেবতা, তাঁর তূল্য় কেই বা হতে পারে!
বৃহস্পতিবার কলম্বোয় ভারত-শ্রীলঙ্কা সিরিজের চতুর্থ ম্য়াচে ভারতের পেস বোলার শার্দুল ঠাকুরের অভিষেক হয়েছে। কিন্তু, তাঁকে মাঠে দেখেই সকলে অবাক। একি? তাঁর জার্সিতে পিঠের দিকে সেই দশ নম্বর। এ কি করে সম্ভব? শচীনের সম্মানে সে জার্সি নাম্বার অবসৃত চিরকালের মতো, সেই জার্সি নাম্বার টেন কি করে এক আনকোরা ছোকররা গায়ে? আর এই মস্ত ভুলের পর অভিষেক ম্য়াচে শার্দুল ভারতের জয় দেখলেও, তাঁকে কেন্দ্র করে ট্য়ুইটারে বিসিসিআই‘কে বিঁধলেন ফ্য়ানেরা। কারও বক্তব্য়, ”বিসিসিআই কি ভুলে গিয়েছে, তারাই তো বলেছিল, জার্সি নাম্বার টেন কে অবসর দেওয়া হয়েছে চিরকালের মতো।” আবার অনেকে শার্দুলের উদ্দেশে মন্তব্য় ছুঁড়ে দেন ট্য়ুইটে, ”খুলে ফেলো ওই জার্সি। নিজের জার্সি খোঁজো। জার্সি নাম্বার টেন কেবল মাত্র শচীনের, আর কারওর নয়।”
উল্লেখ্য়, অভিষেক ম্য়াচে শার্দুল ভারতের হয়ে সাত ওভার বল করে ২৬ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নেন। ভারত শ্রীলঙ্কাকে ১৬৮ রান পরাস্ত করেছে। পাঁচ ম্য়াচের সিরিজে ভারতের পক্ষে ফলাফল ৪-০। আগামী রবিবার সিরিজের পঞ্চম তথা অন্তিম ম্য়াচ কলম্বোতেই খেলা হবে।